রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৩ ১৪:০৪ পিএম
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তোমাদের জন্য ‘সহজপাঠ’ নামে দারুণ একটি বই লিখেছিলেন; যাতে ছবি এঁকেছিলেন প্রখ্যাত শিল্পী নন্দলাল বসু। তোমরা কি বইটি পড়েছ? না পড়ে থাকলে সুযোগ করে অবশ্যই পড়ে নিও। ২২ শ্রাবণ কবির মৃত্যুবার্ষিকী। কবিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ তোমাদের জন্য সহজপাঠ দ্বিতীয় ভাগ থেকে বর্ষা বিষয়ক কয়েকটি লেখা ছাপা হলো। আর হ্যাঁ, শিল্পীর আঁকা সাদাকালো যুগের ছবিগুলো অবিকল রেখে একটু রঙ করে দেওয়া হলো-
প্রথম পাঠ
বাদল করেছে। মেঘের রং ঘন নীল। ঢং ঢং ক’রে ৯টা বাজল। বংশু ছাতা মাথায় কোথায় যাবে? ও যাবে সংসার-বাবুর বাসায়। সেখানে কংস-বধের অভিনয় হবে। আজ মহারাজ হংসরাজসিংহ আসবেন। কংস-বধ অভিনয় তাঁকে দেখাবে। বাংলাদেশে তাঁর বাড়ি নয়। তিনি পাংশুপুরের রাজা। সংসার-বাবু তাঁরই সংসারে কাজ করেন। কাংলা, তুই বুঝি সংসার-বাবুর বাসায় চলেছিস? সেখানে কংস-বধে সং সাজতে হবে। কাংলা, তোর ঝুড়িতে কী? ঝুড়িতে আছে পালং শাক, পিড়িং শাক, ট্যাংরা মাছ, চিংড়ি মাছ। সংসার-বাবুর মা চেয়েছেন।
পঞ্চম পাঠ
বর্ষা নেমেছে। গর্মি আর নেই। থেকে থেকে মেঘের গর্জন আর বিদ্যুতের চম্কানি চলছে। শিলং পর্বতে ঝর্নার জল বেড়ে উঠল। কর্ণফুলি নদীতে বন্যা দেখা দিয়েছে। সর্ষেখেত ডুবিয়ে দিলে। দুর্গানাথের আঙিনায় জল উঠেছে। তার দর্মার বেড়া ভেঙে গেল। বেচারা গোরুগুলোর বড়ো দুর্গতি। এক-হাঁটু পাঁকে দাঁড়িয়ে আছে। চাষিদের কাজকর্ম সব বন্ধ। ঘরে ঘরে সর্দি-কাশি। কর্তাবাবু বর্ষাতি পরে চলেছেন। সঙ্গে তাঁর আর্দালি তুর্কি মিঞা। গর্ত সব ভরে গিয়ে ব্যাঙের বাসা হল। পাড়ার নর্দমাগুলো জলে ছাপিয়ে গেছে।
নবম পাঠ
বৃষ্টি নামল দেখছি। সৃষ্টিধর, ছাতাটা খুঁজে নিয়ে আয়; না পেলে ভারী কষ্ট হবে। কেষ্ট, শিষ্ট শান্ত হয়ে ঘরে ব’সে থাকো। দুষ্টামি কোরো না। বৃষ্টিতে ভিজলে অসুখ করবে। সঞ্জীবকে ব’লে দেব, তোমার জন্যে মিষ্টি লজঞ্জুস এনে দেবে। কাল যে তোমাকে খেলার খঞ্জনী দিলাম সেটা হারিয়েছ বুঝি? ও বাড়ি থেকে রঞ্জনকে ডেকে দেব, সে তোমার সঙ্গে খেলা করবে। কাঞ্জিলাল, ব্যাঙগুলো ঘরের মধ্যে আসে যে, ঘর নষ্ট করবে। ওরে তুষ্টু, ওদের তাড়িয়ে দে। ঘন মেঘে সব অস্পষ্ট হয়ে এল। আর দৃষ্টি চলে না। বোষ্টমি গান গাইতে এসেছে। ওকে নিষ্ঠুর হয়ে বাইরে রেখো না। বৃষ্টিতে ভিজে যাবে, কষ্ট পাবে।