মো. লিখন ইসলাম
প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২৩ ১৩:৩৮ পিএম
বর্তমানে কৃষি বিপ্লবের যুগে পেশা হিসেবে ভেটেরিনারি চিকিৎসকের চাহিদা বাড়ছে
তীব্র ব্যথায় জর্জরিত, নীরবে সয়ে যাওয়া অব্যক্ত কষ্টে কাতর প্রাণিকুলের সেবার ব্রত নিয়েই শুরু হয় একজন ভেটেরিনারিয়ানের শিক্ষার হাতেখড়ি। প্রাণিচিকিৎসকরাই সাধারণত ভেটেরিনারিয়ান হিসেবে পরিচিত।
একজন প্রাণিচিকিৎসকের প্রধান কাজ প্রাণীর রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা, রোগের প্রাদুর্ভাব রোধ এবং ক্ষেত্রবিশেষ সার্জারি করা। এ ছাড়া প্রাণিচিকিৎসকরা বিভিন্ন রোগতত্ত্ব গবেষণা, প্রাণীর নতুন জাত উদ্ভাবন ও উন্নয়ন, উৎপাদন বৃদ্ধি যেমন দুধ উৎপাদন, ডিম উৎপাদনে বিশেষ ভূমিকা রাখেন।
ভেটেরিনারি ডিগ্রি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান : বাংলাদেশে একটি বিশেষায়িত ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়সহ মোট ১১টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। যেখানে ভেটেরিনারি মেডিসিনে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। এগুলো হলো-
১. বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ
২. শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
৩. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর
৪. চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় (বিশেষায়িত)
৫. সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট
৬. খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা
৭. হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, হবিগঞ্জ
৮. পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
৯. হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর
১০. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ
১১. রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ভেটেরিনারি কলেজ
১. ঝিনাইদহ ভেটেরিনারি কলেজ (যা বর্তমানে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদভুক্ত)।
২. সিরাজগঞ্জ ভেটেরিনারি কলেজ (যা বর্তমানে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদভুক্ত)।
এ ছাড়া দেশের একমাত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গণ বিশ্ববিদ্যালয়, সাভারে ভেটেরিনারি শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে।
কী কী পড়ানো হয় : একজন ভেটেরিনারি ডাক্তার হতে হলে তাকে অধ্যয়ন করতে হয় অ্যানাটমি, হিস্টোলজি, অ্যানিমেল সায়েন্স, নিউট্রিশন, পোলট্রি সায়েন্স, ডেইরি সায়েন্স, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, ফার্মাকোলজি, টক্সিকোলজি, প্যাথলজি, প্যারাসাইটোলজি, মাইক্রোবায়োলজি, ব্যাকটেরিওলজি, ভাইরোলজি, সেরোলজি, অ্যানিমেল জেনেটিক্স ও ব্রিডিং, মেডিসিন, সার্জারি, ভেটেরিনারি এপিডিমিওলজি, গাইনিকোলজি ও অবস্টেট্রিক্স, থ্রেরিওজেনোলজি, রেডিওলজি, অপারেটিভ সার্জারি, পরিসংখ্যান, গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান, কৃষি অর্থনীতি, মার্কেটিং, কৃষি সম্প্রসারণ বিদ্যা, ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ প্রভৃতি বিষয়।
ক্যারিয়ার ও চাকরি : কারিকুলামের অংশ হিসেবে ভেটেরিনারি শিক্ষার্থীদের ছয় মাস (চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এক বছর) ইন্টার্নি করতে হয়। (ইন্টার্নি ভাতা মাসিক প্রায় ১৮ হাজার টাকা)। ভেটেরিনারি পড়াশোনার শেষ বছরে কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের বাইরে ইন্টার্নশিপের সুযোগ রয়েছে, যা ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ জীবন উন্নয়নে অনেক ভূমিকা রাখে। ভেটেরিনারি পাস করার পর নিজস্ব বিষয়সহ যেকোনো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, ফার্মেসিসহ অন্য বিষয়গুলোয় শিক্ষকতা ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে।
বিসিএসে (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস) ভেটেরিনারি গ্র্যাজুয়েটদের জন্য স্পেশাল ক্যাডার (ভেটেরিনারি সার্জন)। এ ছাড়া বিসিএসে ভেটরা অন্যান্য ক্যাডারেও প্রতিযোগিতা করতে পারবেন। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান যেমন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ সেন্টার, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি), বাংলাদেশ লাইভস্টক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই), প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (এলআরআই), বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে (এফআরআই) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। দেশের বাইরে বিভিন্ন দেশে যেমন অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জাপান, কানাডা, ফিনল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলোয় সম্মানজনক চাকরির সুযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিন, পাবলিকেশন, সংস্থা এবং মিডিয়া যেমন ইউনেস্কো, ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা, বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (ফাও), অ্যানিমেল প্লানেট, ডিসকভারি, ন্যাশনল জিওগ্রাফি ইত্যাদিতে ভালো বেতনের চাকরির সুযোগ রয়েছে। একজন ভেটেরিনারিয়ানের পেট হাসপাতালে প্রাইভেট প্র্যাকটিস, ফার্ম ব্যবসা ও ল্যাবরেটরি ভ্যাকসিনে কাজ করার সুযোগও রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ভেটেরিনারিয়ানদের জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট কোর, যার নাম রিমাউন্ট ভেটেরিনারি অ্যান্ড ফার্ম কোর (আরভি অ্যান্ড এফসি); যেখানে একজন ভেটেরিনারিয়ান নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ শেষে লেফটেন্যান্ট হিসেবে যোগ দিতে পারবেন।
বর্তমানে কৃষি বিপ্লবের যুগে পেশা হিসেবে ভেটেরিনারি চিকিৎসক পছন্দ করা একটি যুগোপযোগী ও স্মার্ট সিদ্ধান্ত। একজন দক্ষ ভেটেরিনারিয়ানই কেবল দেশের প্রাণিসম্পদ এবং মানুষের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়ে সমৃদ্ধিশালী, সুস্থবান জাতি ও দেশ গঠনে গুরুত্বপর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।