শনিবারের হাসি
মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন
প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৩ ১১:৩৮ এএম
চারদিকে ক্রেতার উপচে পড়া ভিড়। পিকআপ ভ্যানে থরে থরে লুঙ্গি সাজিয়ে বিক্রি করছেন বিক্রেতা। সাউন্ডবক্সে গান বাজছে, ‘লুঙ্গি ড্যান্স, লুঙ্গি ড্যান্স’।
মাঝেমধ্যে গান থামিয়ে বিক্রেতার লেকচার, ‘গরম যখন জানলা দিয়ে আসে, বিদ্যুৎ তখন দরজা দিয়ে পালায়। গরিবের এসি হলো লুঙ্গি। এটাই একমাত্র পোশাক, যেটা কিনতে কোমরের কোনো মাপ লাগে না। দেইখ্যা লন, বাইছা লন। মাত্র দেড়শ টাকা। একসাথে দুইটা নিলে আড়াইশ।’ ক্রেতাদের উদ্বুদ্ধ করতে চলছে কথার বয়ান।
ভিড় ঠেলে এগিয়ে যান ফজর আলী। লুঙ্গি হাতে নিয়ে দেখেন তেমন নরম নয়, কেমন যেন শক্ত শক্ত লাগে। বিক্রেতাকে প্রশ্ন করতেই তার সপ্রতিভ উত্তর- ‘আরে সাহেব, শক্ত হলেই তো ভালো, অনেক দিন পরতে পারবেন। সহজে ছিঁড়বে না।’
ফজর আলী মনে মনে ভাবেন, এমন লুঙ্গিই তো তার দরকার।
-‘নিশ্চিন্তে নিতে পারেন ভাই। স্বাভাবিকভাবে পরলে ফুল লুঙ্গি, কাছা মাইরা পরলে হাফ, হাঁটুর কাছে গুটাইয়া পরলে থ্রি-কোয়ার্টার। যেমন ইচ্ছা তেমন করে পরে গরমে চরম আরাম পেতে এই লুঙ্গির বিকল্প নাই।’ ফজর আলী হাড়কিপটে স্বভাবের। দুটি লুঙ্গি একসঙ্গে কিনলে যেহেতু ৫০ টাকা ছাড়, তাই লাভের কথা ভেবে দুটি লুঙ্গিই কিনে নেন। নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মনে হয় তার।
বাসায় এসেই মনের আনন্দে তিনি লুঙ্গি পরেন। কিছুক্ষণ পর তার চুলকানি শুরু হয়। অ্যালার্জির সমস্যাটা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।
লুঙ্গি পরামাত্রই চুলকানি বাড়তে থাকে। ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খান, কোনো কাজ হয় না। চুলকাতে চুলকাতে তার শরীর ফুলে লাল হয়ে যায়। নিরুপায় ফজর আলী চড়া ভিজিটের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যান। ডাক্তার তার অবস্থা দেখে বলেন, ‘আপনার পরনের এই পলিয়েস্টার লুঙ্গির কারণে চুলকানি ডে বাই ডে বেড়েই চলেছে। এটা থামা তো দূরের কথা, বাড়তেই থাকবে। ওষুধ লিখে দিলাম, ঠিকমতো খাবেন। ভালো চান তো এই লুঙ্গি আর জীবনেও পরবেন না।’
ফজর আলী হাজার টাকার ওষুধ কিনে বাসায় এসে হিসাব কষেন, ডাক্তারের ফি ও ওষুধ বাবদ তার খরচ ২ হাজার টাকা। আর পলিয়েস্টার লুঙ্গি ২৫০। বাঃ এ আমি কী করলাম! কে আছিস! আমাকে ধর।
এর পর থেকে তিনি সবকিছুতে কিপটেমি করলেও লুঙ্গি কেনার ক্ষেত্রে কোনো কৃপণতা করেন না। সবচেয়ে ভালো ও পিওর কটন (যত দামই হোক) লুঙ্গিই এখন ফজর আলীর সঙ্গী।