মানবিক পাঠশালা
রুবেল মিয়া নাহিদ
প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৩ ১২:১৬ পিএম
২০১৯ সালে একদল স্বেচ্ছাসেবী তরুণকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা হয় মানবিক পাঠশালা
ইরানুল ইসলাম পড়াশোনা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রান্তিক অঞ্চলে শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে শিক্ষিতকরণ এবং অসহায়, দুস্থ, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কল্যাণে কাজ করার লক্ষ্যে ২০১৯ সালে একদল স্বেচ্ছাসেবী তরুণকে নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন মানবিক পাঠশালা।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় ‘মানবতার শুভেচ্ছা বার্তা’ স্লোগানে মাত্র ১৫ জন সদস্য নিয়ে যাত্রা করেছিল সংগঠনটি। বর্তমানে তাদের স্বেচ্ছাসেবীর সংখ্যা ৫০০-এর অধিক। তারা প্রত্যেকে সৃজনশীল চিন্তা, নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা ও স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে অবহেলিত মানুষের কল্যাণে কাজ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এরই মধ্যে বেশকিছু জনকল্যাণমূলক কাজ করে প্রশংসার স্মারক রেখেছেন সব মহলে। এসব স্বপ্নবাজ তরুণ করোনার সময় জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি যথা মাস্ক বিতরণ, মসজিদ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান এবং লকডাউনের সময় নন-কোভিড, প্রসূতি ও মুমূর্ষু রোগীদের বিনামূল্যে যাতায়াত সেবা দেওয়ার প্রয়াসে চালু করেছিলেন মানবিক পরিবহন।
এ ছাড়া প্রজেক্ট-আলোকবর্তিকার মাধ্যমে আর্থিক সমস্যায় পড়াশোনা বন্ধ শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে অধ্যয়ন; প্রজেক্ট-আহারের আওতায় এতিমখানা ও সাধারণ মানুষের মাঝে খাবার সরবরাহ; অবহেলায় থাকা শহীদ মিনার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ সংস্করণের কাজ করেছেন তারা। আইনজীবীর সমন্বয়ে প্রজেক্ট-মানবিক ডেস্ক দিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন, যৌন হয়রানি, ইভ টিজিং ও বাল্যবিবাহ বন্ধে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি এবং অসহায় ও অসচ্ছল বিচারপ্রার্থীদের বিনামূল্যে আইনি সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। দুস্থ জনসাধারণ ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ঈদবস্ত্র বিতরণ, ঈদুল আজহায় কোরবানির পর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রচারসহ বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে মানবিক পাঠশালা।
জরুরি ব্লাড ডোনেশনে মানবিক ব্লাড ডোনারস টিম গঠন করেছে মানবিক পাঠশালা। যেখানে ১০০ জনের বেশি রক্তদাতা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৫০ ব্যাগ ব্লাড ম্যানেজ করে দেওয়া হচ্ছে। স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট সিটিজেন গড়ার লক্ষ্যে সমাজের অক্ষরজ্ঞানহীন বয়স্ক ও পথশিশুদের নিয়ে সাক্ষরতা কার্যক্রম, প্রযুক্তিনির্ভর জনশক্তি সৃষ্টিতে আইসিটি বিষয়ক কর্মশালা, মেধা অন্বেষণ বৃত্তি পরীক্ষা, শিক্ষার্থীদের পাঠাভ্যাস উন্নয়ন, ফ্রি ব্লাড গ্রুপ নির্ণয় কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছেন তারা। এ ছাড়া সর্বসাধারণের জন্য একটি গ্রন্থাগার এবং সুবিধাবঞ্চিতদের বিনামূল্যে অধ্যয়নে বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা।
সংগঠনের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে মানবিক পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা ইরানুল ইসলাম বলেন, ‘পারিবারিক অনুপ্রেরণায় একদল স্বপ্নবাজ স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে সমুদ্র জনপদে মানবতার শুভেচ্ছা বার্তা ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করছি। করোনাকালে আর্থিক অভাবে অনেকেই পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিল, মূলত সে সময় এক-দুজনের পড়াশোনার ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে আজ আমরা হাজারো মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে সক্ষম হয়েছি। মানবিক মূল্যবোধ ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে অসচ্ছল বা সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। মহান সৃষ্টিকর্তা যতদিন বাঁচিয়ে রাখবেন সামর্থ্য অনুযায়ী আমরা মানবিক কাজ করে যাব।