শনিবারের হাসি
জোবায়ের রাজু
প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:০৫ পিএম
ফেসবুক ছাড়া যে আমি চলতে পারি না, এ আর নতুন কী! দশ গেরামের সবাই জানে খাইতে, শুইতে, বইতে ফেসবুক ছাড়া আমি অচল। ফ্রেন্ডলিস্টে বন্ধুর অভাব নেই। তবে সবাই প্রকৃত বন্ধু নয়। ক্লোজ ফ্রেন্ড শখানেকের মতো। এদের সঙ্গে প্রায়ই আমার মিট হয়। কখনও কখনও তারা আমার বাড়ি আসে, আবার আমি তাদের বাড়ি।
ভদ্রগাঁও থেকে প্রথম যেবার তিন বন্ধু বাড়িতে এলো, আম্মা তাদের বেশ আপ্যায়ন করলেন। ট্রে ভর্তি নাশতা গোগ্রাসে খেল সেই খাদক বন্ধু। পরে জেনেছি এরা তিনজন মিষ্টিমধুর চ্যাট করে বাসায় যায় এবং নাশতাপানি খেয়ে তারপর বিদায় হয়।
দ্বিতীয়বার একসঙ্গে ছয়জন বাড়িতে এসেছে। আম্মা বিরক্ত হলেন। বললেন, ‘এসব আমার ভাল্লাগে না। জানা-শোনা নেই হুট করে বাড়ি আসে কেন?’ ছয়জনকে খানাপিনা দিয়ে আম্মা বললেন, ‘আর যেন না আসে কেউ।’
হেনা বুবুও বলল, ‘এদের লাজশরম নেই। আসার সময় কিছু আনে না। খালি হাতে চলে আসে।’
২.
মতিন আমার একজন ভালো ফেসবুক বন্ধু। আমার সব পোস্টে সে সব সময় লাইক-কমেন্ট করে। ফেসবুকের যারা বাসায় আসে, তাদের সঙ্গে ছবি তুলে আপলোড করি। মতিন সেসব দেখে। মতিন পদিপাড়া থাকে। আজ মতিন মেসেজ দিল- ‘ভাইয়া, আমার তিন বন্ধুকে নিয়ে কাল তোমার বাড়ি আসব। আমার খুব শখ তোমাকে সরাসরি দেখার। তোমার সঙ্গে সেলফি তুলব।’
মতিনকে মুখের ওপর না করে দেওয়াটা খারাপ দেখায়। এদিকে আম্মাও যদি নাশতাপানির ব্যবস্থা না করেন, তাহলে শরমের কথা। তবু মতিনকে রিপ্লাই দিলাম- ‘আচ্ছা এসো। খুশি হব।’
কিন্তু আম্মাকে কীভাবে সামাল দেব!
না, একটা বুদ্ধি তো বের করা উচিত। আম্মাকে কী বলা যায়!
হ্যাঁ, বুদ্ধি পেয়েছি। হেনা বুবুকে কাজে লাগাতে হবে। যাই, আম্মার কাছে যাই।
আম্মার ঘরে গিয়ে পাশে বসে বললাম, ‘একটা গুড নিউজ আছে আম্মা। কাল আমার কজন বন্ধু আসবে...!’
কথা শেষ না হতেই আম্মা বিকট গলায় বললেন, ‘খবরদার! কেউ এলে ওদের ঠ্যাং ভেঙে দেব।’
শান্ত গলায় বললাম, ‘আম্মা, চ্যাতেন কেন? আমার বন্ধুর সঙ্গে কয়েকটি ছেলে আসবে। ওরা আসবে আসলে হেনা বুবুর জন্য বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে। ছেলে ওদের আত্মীয়। ইউরোপে থাকে।’
কথা শুনে আম্মা পানির মতো তরল হয়ে গেলেন। ‘ইয়ে মানে কখন আসবে! হেনার তো কপাল পোড়া, কত প্রস্তাব এলো গেল, বিয়েটা শেষে আর হয় না। ঠিক আছে, ওদের আসতে বল।’ যাক, কাম হয়ে গেছে। বরফ গলে গেল। বুদ্ধি থাকলে উপায় হয়।
৩.
আজ বিকালে মতিন আসবে। আজ অন্য এক আম্মাকে দেখছি সকাল থেকে। সারা ঘর পরিচ্ছন্ন করার কাজে আম্মা আর হেনা বুবু মগ্ন। কয়েক কিসিমের পিঠা বানানো হলো। আম্মা বললেন, ‘হেনা শাড়ি পরবে না থ্রি পিস?’ শুনে পাশের ঘর থেকে হেনা বুবু লাজুক গলায় বলল, ‘ভালো হবে না কিন্তু বলে দিচ্ছি।’
বললাম, ‘শাড়ি পরতে বলেন হেনা বুবুকে।’
কয়েক ঘণ্টা পর দেখি হেনা বুবু শাড়ি পরে, মুখে ভারি মেকআপ মেখে পরী সেজে তার ঘরে বসে আছে। আমাকে দেখে বলল, ‘ও দেখতে কেমনরে?’
বললাম ‘দুলাভাই? এক্কেবারে রাজকুমার।’
লাজুক হেসে হেনা বুবু বলল, ‘ফরসা?’
হাসি চেপে বললাম, ‘খুব খুশি লাগছে, না বুবু?’
সে বলল, ‘এই আস্তে বল, আম্মা শুনতে পাবে। আচ্ছা তোর মোবাইলে আমার কটা ছবি তোল।’
৪.
বিকালে মতিন বাহিনী বাসায় হাজির। কথা ছিল মতিন তিন বন্ধুকে নিয়ে আসবে। কিন্তু এসেছে সাতজনের লম্বা মিছিল নিয়ে। অসুবিধা নেই। নাশতাপানির এলাহি কাণ্ড রেডি আছে। মতিন আর মতিন বাহিনী নাশতা মুখে চালান দিচ্ছে আর সেলফি তুলছে।
ড্রয়িংরুমে নাশতা সাবাড়ের পর তুমুল আড্ডা হলো। সন্ধ্যার আগে সবাই বিদায় হলে আম্মা বললেন ‘কীরে, ওরা তো হেনাকে দেখল না।’ আম্মাকে বললাম, ‘ওরা হেনা বুবুকে দেখেছে ছবিতে। হেনা বুবুর সব ছবি আমার কাছ থেকে নিয়েছে। এতক্ষণে হয়তো ছেলের কাছে ছবিগুলো চলেও গেছে।’
আম্মা দুই হাত তুলে মোনাজাত দিয়ে বললেন, ‘আল্লাহ, এবার যেন হেনার বিয়েটা না ভাঙে।’
বুবু বলল, ‘ওর ছবি নিয়েছিস?’ চাপা হাসি চেপে বললাম, ‘দুলাভাই নাকি ছবি তোলে না!’ হেনা বুবু বলল, ‘এতবার দুলাভাই দুলাভাই বলছিস কেন? আমাদের বিয়ে হয়েছে? এক থাপ্পড় দেব। পাজি কোথাকার!’ বলেই হেনা বুবু মুচকি হেসে দিল।