× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

প্রচ্ছদ

ফ্যাশনে খাদি

শাহিনা নদী

প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:৫৯ পিএম

আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:৫৯ পিএম

মডেল : মাসুমা মাহমুদা তান; পোশাক : বিবিয়ানা; মেকআপ : রেড বিউটি সেলুন; ছবি : ফারহান ফয়সাল

মডেল : মাসুমা মাহমুদা তান; পোশাক : বিবিয়ানা; মেকআপ : রেড বিউটি সেলুন; ছবি : ফারহান ফয়সাল

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের খাদি এখন ফ্যাশনেরও অনুষঙ্গ। দেশি ফ্যাশন ডিজাইনারদের হাত ঘুরে এ খাদি হয়ে উঠছে তরুণ প্রজন্মের পছন্দের পোশাক

খাদি বা খদ্দর শব্দের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বাংলার ইতিহাসের একটি অংশ। হাতে কাটা সুতা দিয়ে হাতে বোনা কাপড়ই মূলত খাদি। দেশবিদেশের ফ্যাশনসচেতনদের কাছে বেশ জনপ্রিয় খাদি। কারণ খাদি মানেই আরাম। তাই তো আরামদায়ক ও স্টাইলিশ পোশাক হিসেবে খাদির জনপ্রিয়তা বড়ছেই। শতাব্দীর প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী খাদি এখন রূপ পেয়েছে আধুনিকতার মোড়কে। অমসৃণ থেকে মসৃণ হয়েছে টেক্সচার। ডিজাইন, মোটিফ, প্যাটার্ন, রঙ সবকিছুতেই ঐতিহ্যের ছোঁয়া। খাদির উৎপত্তির ইতিহাস কিন্তু বেশ পুরোনো। হাতে বোনা খাদি কাপড়ের প্রথম টুকরোটি ১৯১৭-১৮ সালে সবরমতী আশ্রমে তৈরি করা হয়েছিল। এ কাপড়ের অমসৃণতাকে মহাত্মা গান্ধী ‘খাদি’ বলে নামকরণ করেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় খাদি কাপড় জনপ্রিয়তা লাভ করে। ‘স্বদেশী পণ্য গ্রহণ কর আর বিদেশী পণ্য বর্জন কর’ এ স্লোগানের ওপর ভিত্তি করেই সে সময় খাদিশিল্প বিস্তার লাভ করে।


খাদির ঐতিহ্য ধরে রেখেছে কুমিল্লার চান্দিনা ও নোয়াখালীর গান্ধী আশ্রম। যেখানে চরকায় কাটা সুতা দিয়ে এখনও তাঁতে বোনা হচ্ছে খাদি। এ খাদি কাপড় ৪০ থেকে ৬০ কাউন্টের সুতা দিয়ে তৈরি করা হয়। বর্তমানে বাইরের দেশ থেকেও ১০০ কাউন্টের সুতা এনে খাদি কাপড় তৈরি করা হচ্ছে। এ ছাড়া খাদি কাপড়ে টাইডাই, এমব্রয়ডারি ও অ্যাপ্লিকের কাজ ও স্ক্রিন প্রিন্টে ব্যবহার হচ্ছে নানা মোটিফ। ডিজাইনের ভিন্নতায় খাদি হয়ে উঠেছে অনন্য। দেশি ফ্যাশন হাউসগুলোও খাদি কাপড়ের পোশাক তৈরিতে দিয়েছে বিশেষ মনোযোগ। নিত্যনতুন ডিজাইন আর প্যাটার্নে খাদি কাপড়ের বাহারি পোশাক ফ্যাশনে যোগ করছে নতুন মাত্রা।

বৈশিষ্ট্য

খাদির মূল বৈশিষ্ট্য সুতা তৈরি থেকে কাপড় বোনা পুরো প্রক্রিয়াই সম্পন্ন হয় হাতে। খাদি কাপড় কার্পাস তুলা থেকে তৈরি হয়। তবে এতে রেশম বা পশমও থাকতে পারে, যেগুলো সবই চরকায় সুতায় কাটা হয়। প্রথমে কার্পাস তুলা থেকে বোনা হয় সুতা। এরপর সুতা থেকে হাতে চালানো চরকা বা তাঁতে বোনা হয় কাপড়। সম্পূর্ণ হাতে তৈরি এ খাদি কাপড় আমাদের একেবারে নিজস্ব ঐতিহ্য।

বিশেষত্ব 

সমাজে একটি ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। তা হলো, খাদি কাপড় মোটা হওয়ায় এটি গ্রীষ্মকালে পরার অনুপযোগী। প্রকৃতপক্ষে খাদি কাপড়ের বিশেষত্ব হলো ন্যাচারাল ফাইবারের কারণে গরমে ঠান্ডা আর ঠান্ডায় উষ্ণতা দেয়। মূলত এটি একটি বহুমুখী বুনন; যা গ্রীষ্মে শীতল ও শীতকালে উষ্ণ থাকে। খাদির গঠন উন্নত করার জন্য খাদিকে মাঝে মাঝে মাড় দেওয়া হয়। যে কারণে এ কাপড় একই সঙ্গে শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা- যেকোনো ঋতুতেই ব্যবহারযোগ্য। আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খাদির এই সাধারণ ব্যাপারটাই মানুষের কাছে হয়ে উঠেছে অসাধারণ। তাই মেশিনে তৈরি শত কাপড়ের ভিড়েও দেশি খাদিশিল্প নজর কেড়েছে বড় বড় ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির।

রঙের বাহার

খাদি এখন সাদা, অফ হোয়াইট বা বাদামি রঙের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। নানা রঙের মিশেলে নতুন রূপ পেয়েছে খাদি। রাসায়নিক ও প্রাকৃতিক রঙ ব্যবহার করে টাইডাই পদ্ধতিতে প্রতিনিয়ত রঙিন হচ্ছে খাদি। বেজ রঙ ছাড়াও লাল, নীল, হলুদ, ম্যাজেন্টা, অ্যাশ, মেরুন, কমলা, বাদামি, সবুজসহ সব রঙেই রাঙানো হচ্ছে খাদি কাপড়।

মাঝের বেশকিছু বছর খাদি কাপড়কে সবাই ভুলে গিয়েছিল। তবে বিগত কয়েক বছর খাদি নিয়ে ডিজাইনাররা কাজ করছেন। তরুণদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে খাদি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ট্রেন্ডি, ফ্যাশনেবল পোশাক। এ কাপড়ে তৈরি শাড়ি ও ব্লাউজ আন্তর্জাতিক মহলে দেশি সংস্কৃতি ফুটিয়ে তুলছে। এমনকি খাদি দিয়ে ফিউশন লুকের জন্য ওয়েস্টার্ন পোশাকও তৈরি হচ্ছে
লিপি খন্দকার
স্বত্বাধিকারী, বিবিয়ানা

বিস্তার

একসময় হাতে কাটা সুতায় খাদি তৈরি হলেও এখন খাদি বানানোর সুতা মেশিনে তৈরি হচ্ছে। ফলে খাদি কাপড়ের উৎপাদনও বেড়ে গেছে বহুগুণ এবং একই সঙ্গে বেড়েছে খাদি কাপড়ের চাহিদাও। আগে খাদি কেবল মোটা কাপড়ে তৈরি হতো। চলতি ধারার সঙ্গে তাল মেলাতে বাজারে এখন পাতলা খাদিও রয়েছে। পাতলা খাদির তৈরি পোশাকগুলো সারা বছরই ব্যবহার উপযোগী। খাদির তৈরি পোশাক দেশের গণ্ডি পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয রপ্তানি হচ্ছে।

ফিউশনে খাদি

বৈচিত্র্যহীনতায় একসময় খাদি প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিল। সেখান থেকে বর্তমানে খাদির নবজন্ম হয়েছে। এখন ফ্যাশনেবল কাজ করা হচ্ছে খাদি দিয়ে। কেবল ধুতি ও শীতের চাদর বা মোটা পাঞ্জাবি থেকে বেরিয়ে এসে নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে মোটা খাদি দিয়ে পর্দা, কুশনকভার, শাল, জ্যাকেট, পায়জামা ইত্যাদি তৈরি করা হয়। বর্তমানে সবকিছু ছাপিয়ে মোটা খাদির পাশাপাশি তৈরি করা হচ্ছে পাতলা খাদি কাপড়; যা দিয়ে এখন সব ধরনের পোশাকই তৈরি হচ্ছে এবং ডিজাইনেও থাকছে বৈচিত্র্য।

নারীর চলতি ফ্যাশনে বড় একটা অংশে যুক্ত হয়েছে খাদি। থ্রি-পিস, কুর্তি, ট্রাউজার, কটি, ওড়না- এগুলো তো বটেই, এখন খাদি কাপড় দিয়ে তৈরি হচ্ছে শাড়ি ও ব্লাউজ। কেবল দেশি পোশাকই নয়; খাদি কাপড়ে তৈরি হচ্ছে স্কার্ট, ফতুয়া, টপ, গাউন, টপসের মতো জনপ্রিয় ওয়েস্টার্ন পোশাকও। গরমের কথা মাথায় রেখেই পাতলা খাদি কাপড়ে তৈরি হচ্ছে বেশিরভাগ পোশাক। নমনীয়তা ও আরামপ্রিয়তার পাশাপাশি ট্রেন্ডি ও ফ্যাশনেবল ওয়েস্টার্ন পোশাকগুলো ঢিলেঢালা ও হালকা রঙের সমন্বয়ে ডিজাইন করা হচ্ছে। মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদের ফ্যাশনেও খাদি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পাতলা খাদি দিয়ে তৈরি পাঞ্জাবি তরুণ ও বয়স্ক সব পুরুষের জন্য এক ধ্রুপদি বিষয়। পাঞ্জাবি ছাড়াও নীল জিনসের সঙ্গে কালো টি-শার্টের ওপর খাদির কুর্তা কিংবা শার্ট তারুণ্যের ফ্যাশনে যোগ করেছে ভিন্নমাত্রা। এভাবেই হালফ্যাশনেও খাদি জায়গা করে নিয়েছে।

খাদির শাড়ি

বর্তমানে যে খাদি কাপড় তৈরি হচ্ছে সে কাপড়ে রয়েছে কল ও হাতে কাটা সুতার সমন্বয়। যেখানে সুতা থাকে অন্তত ৪০ শতাংশ। পাওয়ারলুমে তৈরি কাপড়গুলোও দেখতে একেবারে খাদি কাপড়ের টেক্সচারের মতো। ফলে এ ধরনের শাড়ি টেকসই, সহজে পরিধেয় ও আরামদায়ক হওয়ায় সব বয়সি নারী খাদি শাড়ি বেছে নিচ্ছেন। খাদি শাড়িতে খুব বেশি ভ্যালু অ্যাড হয় না। মূলত এক রঙের প্লেন শাড়ি বা খাদি সুতা দিয়ে স্ট্রাইপ করা হয়। তবে এখনকার ডিজাইনাররা ফ্যাশনে ফিউশন যোগ করতে খাদি শাড়ির ওপর সুতার কাজ, এমব্রয়ডারি, ব্লক প্রিন্টসহ নানা ধরনের ডিজাইন করছেন। ফলে দৃষ্টিনন্দন হচ্ছে খাদি কাপড় এবং বৃদ্ধি পাচ্ছে চাহিদা।

ওয়েস্টার্ন পোশাকে খাদি

দেশি গণ্ডি পেরিয়ে খাদি জায়গা করে নিয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। পশ্চিমা সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে যায় এমন ট্রেন্ডি ও ফ্যাশনেবল প্যাটার্নে খাদি কাপড়ের পোশাক তৈরি করছেন ডিজাইনাররা। গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে এসে খাদির ডিজাইনে এসেছে ফিউশন। খাদি কাপড়ে তৈরি ওয়েস্টার্ন টপস, প্যান্ট, টিউনিক, গাউনগুলো খুবই সিম্পলভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। বেশিরভাগ ওয়েস্টার্ন পোশাক জ্যামিতিক প্যাটার্নে আঁকিবুঁকির মাধ্যমে নকশা করা হয়েছে। এ ছাড়া নতুনত্ব আনতে বিভিন্ন অনুষঙ্গ যেমন বোতাম, বাড়তি কাপড় দিয়ে চিকন বর্ডার ইত্যাদি জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা