রূপসা
নুসরাত খন্দকার
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:৪০ পিএম
আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:০৮ পিএম
উপটানের প্রধান কাজ ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানো। পাশাপাশি ত্বকের দাগ-ছোপ হালকা, মৃতকোষ দূর এবং ত্বক মসৃণ ও কোমল রাখতেও উপটান দারুণ কার্যকরী।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে উপটান এক ধরনের প্যাক। বৈদিক যুগের চিকিৎসকরা বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় এই উপটান ব্যবহার করার পরামর্শ দিতেন। তখন মূলত দুধ, বেসন এবং হলুদগুঁড়া মিশিয়ে এটি তৈরি করা হতো। শুধু বাহ্যিক ব্যবহারের জন্যই নয়, বরং সেসময় রোগীর পথ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হতো উপটান। ফলও পাওয়া যেত হাতেনাতে। ধীরে ধীরে এই উপটানের জনপ্রিয়তা বাড়তেই থাকে, যা রূপচর্চায় আজও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আজকাল বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান দিয়েও তৈরি করা হয় উপটান। ত্বকের নানা সমস্যায় যারা ভুগছেন, তাদের জন্য উপটান মোক্ষম দাওয়াই। বাড়িতেও অনায়াসে বানিয়ে ফেলতে পারেন উপটান।
বাড়িতে বানানোর উপায়
বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির উপটান পাওয়া গেলেও তা খুব একটা পকেটফ্রেন্ডলি নয়। আর বাড়িতেই যদি উপটান বানাতে পারেন এবং তা যদি কার্যকরীও হয়, তাহলে কেনইবা পয়সার শ্রাদ্ধ করে বাজারচলতি জিনিস কিনবেন! আমাদের গ্রীষ্মপ্রধান দেশে ট্যানিং, নির্জীবতা, মেছতা ইত্যাদি রোদ থেকে হওয়া সমস্যা খুবই কমন। আর উপটানের মাধ্যমে এই প্রতিটি সমস্যারই সমাধান সম্ভব। দেখুন উপটান তৈরির ৬টি সহজ পদ্ধতি
অ্যাভোকাডো : অ্যাভোকাডো প্রাকৃতিকভাবে ত্বককে আর্দ্র রাখতে দারুণ কার্যকরী। ফলে শুষ্ক ত্বকের জন্য এই ফল খুবই উপকারী। পাশাপাশি এটি ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে ত্বককে পুষ্টি জোগায়। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় তা ফ্রি-রেডিক্যাল থেকে হওয়া ক্ষতির হাত থেকেও ত্বককে সুরক্ষা দেয়। নিয়মিত এই উপটান ব্যবহার করলে বলিরেখা, ফাইন লাইনস ইত্যাদি থেকে মুক্তি পাবেন। বাড়িতে অ্যাভোকাডো দিয়ে উপটান বানাতে একটা অ্যাভোকাডোর ক্বাথ, ২ টেবিল চামচ মধু, ৪-৫ চা-চামচ টকদই একটি বাটিতে মিশিয়ে নিন। প্রয়োজন হলে অতিরিক্ত মধু বা টকদই ব্যবহার করতে পারেন। মুখে এবং প্রয়োজনীয় অংশে এই মিশ্রণ লাগিয়ে শুকিয়ে গেলে ঘষে তুলে ফেলুন। সামান্য তেলও ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বক অনেক বেশি নরম এবং আর্দ্র থাকবে।
টমেটো : ট্যানিং দূর করতে টমেটো খুবই উপকারী। এ ছাড়া টমেটো ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং ত্বকের রন্ধ্র ছোট করতেও সাহায্য করে। যেকোনো ধরনের ত্বকের জন্যই টমেটো খুব ভালো। ৪-৫টা পাকা টমেটো কুচি করে কেটে চটকে নিন। এবার এতে ৪-৫ টেবিল চামচ টকদই, ১-২ টেবিল চামচ মধু, ২-৩ টেবিল চামচ ওটমিল মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। এটি পুরো শরীরে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রাখুন। খানিকটা শুকিয়ে এলে সামান্য তেল ব্যবহার করে ঘষে তুলে ফেলুন। একবার ব্যবহার করলেই দেখবেন ত্বকের পোড়াভাব দূর হবে।
আলু : আলুতে রয়েছে ক্যাটেকোলেজ নামক এক ধরনের উৎসেচক, যা ত্বকের দাগ-ছোপ দূর করতে এবং ব্লেমিশ ও অ্যাকনের দাগ হালকা করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া আলুর মাইল্ড ব্লিচিং প্রপার্টিও রয়েছে, যা হাইপার পিগমেন্টেশনের সমস্যা কমিয়ে ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। এই উপটানে আলুর পাশাপাশি ব্যবহৃত হয় চালের গুঁড়া, যা ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্তভাব দূর করে। ২টি কাঁচা আলু কেটে মিক্সারে বেটে নিন। এতে সমপরিমাণে চালের গুঁড়া ও টকদই মিশিয়ে প্রয়োজনীয় অংশে লাগান। শুকিয়ে গেলে তেল ব্যবহার করে ঘষে তুলে ফেলুন।
পেঁপে : পেঁপেতে রয়েছে প্যাপেইন নামক উৎসেচক এবং আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড, যা ব্লেমিশ এবং ত্বকের মৃতকোষ দূর করতে দারুণ কার্যকরী। বাড়িতে পেঁপে দিয়ে উপটান বানাতে পাকা পেঁপে অর্ধেক করে কেটে বীজ বের করে নিন। এবার পেঁপের ক্বাথ বের করে ভালোভাবে চটকে নিন। এতে ৪-৬ টেবিল চামচ টকদই, ২-৩ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ ব্যবহার করে সার্কুলার মোশনে পুরো শরীরে ম্যাসাজ করুন। ২-৩ মিনিট ম্যাসাজ করে ২০-২৫ মিনিট রেখে দিন। এরপর ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
শসা : রূপচর্চায় শসার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত। শসার রসে থাকে বিভিন্ন ধরনের ফাইটোকেমিক্যালস, যা ত্বকের কোলাজেন প্রোটিনের সংশ্লেষ বাড়াতে সাহায্য করে। ত্বককে নরম, কোমল ও সতেজ রাখতে শসা অদ্বিতীয়। শসা কুরিয়ে তাতে ৪ টেবিল চামচ টকদই, ২ টেবিল চামচ মধু ও ২ টেবিল চামচ ওটমিল মিশিয়ে ম্যাসাজ করুন। আধা ঘণ্টা রেখে ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
কলা : ‘নেচারস বোটক্স’ হিসেবে কলা সুপ্রসিদ্ধ। ত্বক টানটান রাখতে, বলিরেখা কমাতে এবং বয়স থেকে হওয়া দাগ-ছোপ কমাতে কলার জুড়ি মেলা ভার। এ ছাড়া মৃতকোষ দূর করার পাশাপাশি ত্বকের ওপরের স্তরে থাকা সিবাম দূর করতে কলা ভীষণ উপকারী। কলাতে রয়েছে পটাশিয়াম, ভিটামিন-ই এবং সি, যা ত্বকের জন্যও খুব ভালো। ২-৩টি পাকা কলা চটকে তাতে ৪-৫ টেবিল চামচ টকদই এবং ৩-৪ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে প্রয়োজনীয় অংশে লাগিয়ে ২০-২৫ মিনিট রেখে ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
শসা দিয়ে বানানো উটন ত্বক যৌবনোচ্ছ্ল রাখতে কার্যকরী। রোদে পোড়া ত্বক বা ট্যানিংয়ের সমস্যায় কাজে লাগান টমেটো।