শাহিনা নদী
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৪:০৬ পিএম
আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৪:২৪ পিএম
মডেল : পূর্বা ও মিথিলা; পোশাক ও ছবি : সরলা
সময়ের স্রোতে মেয়েদের পোশাকে এসেছে পরিবর্তন। বটমস অর্থাৎ প্যান্ট, সালোয়ার ইত্যাদিতেও সেই ধারা অব্যাহত। নানা ডিজাইন ও বাহারি কাটের প্যান্ট, সালোয়ার, স্কার্ট যুক্ত হয়েছে এ ধারায়। সময়, পারিপার্শ্বিকতা ও উপযোগিতা ভেদে ফ্যাশনসচেতন নারী বেছে নিচ্ছে পছন্দের পোশাকটি
পোশাক আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। পোশাকের মাধ্যমেই মানুষের ব্যক্তিত্ব ও রুচির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। তাই প্রয়োজন থেকেই নিত্যনতুন ফ্যাশন আইডিয়া যোগ হচ্ছে পোশাক ইন্ডাস্ট্রিতে। কারণ ফ্যাশন তৈরিই হয় প্রয়োজন থেকে। সেজন্য পোশাক যেন একই সঙ্গে আরামদায়ক ও স্টাইলিশ হয় সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।
পোশাক বলতে যে শুধু জামাকে বোঝানো হয়, ব্যাপারটি কিন্তু মোটেও এ রকম নয়। বিশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে পোশাক বলতে আনুষঙ্গিক সব আইটেম যেমন- প্যান্ট, সালোয়ার, পালাজো, স্কার্ট, ওড়না ইত্যাদি সবকিছুকেই বোঝায়। জামার সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে স্টাইলিশ ও একই সঙ্গে আরামদায়ক প্যান্ট অথবা সালোয়ার এই সময়ের নারীদের নিত্যদিনকার সঙ্গী। বিশেষ করে যারা শিক্ষার্থী কিংবা চাকরিজীবী। কারণ দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় তাদের বাইরে কাটাতে হয়। পাশাপাশি শত মানুষের ভিড়ে নিজের ব্যক্তিত্ব ধরে রাখার জন্যও ফ্যাশনেবল ও আরামদায়ক প্যান্ট খুঁজছে তরুণ প্রজন্ম।
ট্রেন্ডি প্যান্টের কালেকশন
ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে প্যাটার্নের ওপর ভিত্তি করে বাহারি সব আরামদায়ক ও ফ্যাশনেবল প্যান্ট ডিজাইন করছেন এখনকার ডিজাইনাররা। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্যান্টের জগতেও এসেছে নানা পরিবর্তন। ডিজাইন, প্যাটার্ন ও রঙের ক্ষেত্রেও এসেছে নতুনত্ব। ফলে প্যান্টগুলো আরও আকর্ষণীয় আর ফ্যাশনেবল হয়েছে। বাজারে প্রায় ২৩ ধরনের ট্রেন্ডি প্যান্ট রয়েছে। তার মধ্যে বেসিক প্যান্ট-পালাজো-পাজামা-ট্রাউজার, ফরমাল প্যান্টের পাশাপাশি পাওয়া যাচ্ছে বেলবটম, হেরেম বা ঢোল প্যান্ট, টার্কিস বা ট্রাভেল প্যান্ট, কম্ফি, স্ট্যারি, স্ক্রিট পালাজো, মিষ্টি আনারস, স্বস্তি, পদ্মাবতী ১ ও ২, অরুণিমা, পাখিরা, কল্কা, হিল্লোল, তারাফুল, নীলফুল, মন চেরি, জঙ্গলাফুল, মন পাখি, সাঁঝবাতি, নীল ক্যাক্টাস এবং নীলিমা ইত্যাদি ইউনিক সব প্যান্টের সমাহার। জিন্স প্যান্টের পাশাপাশি এ প্যান্টগুলো ফ্যাশনে যোগ করেছে ভিন্নমাত্রা।
বৈশিষ্ট্য
প্যান্টের কাপড়ভেদে এর বৈশিষ্ট্যও আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। ফ্যাশনেবল নতুন প্যান্টগুলো দেখতে সালোয়ার কিংবা পালাজোর মতো হলেও ডিজাইনাররা একে প্যান্ট বলতেই বেশি পছন্দ করেন। এগুলোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো বছরের যেকোনো সময়ই পরা যায় আর প্রায় সব পোশাকের সঙ্গেই মানানসই। বিশেষ করে টপসের সঙ্গে। এ ছাড়া জামার সঙ্গে ম্যাচিং করার ঝামেলাও পোহাতে হয় না। সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এ ধরনের ফ্যাশনেবল প্যান্টগুলো নিয়মিত ইস্ত্রি করারও প্রয়োজন নেই।
ফেব্রিক্স
জামা বা প্যান্ট- ফেব্রিক্সের ক্ষেত্রে সবার প্রথম পছন্দ কটন। বর্তমানে ট্রেন্ডি ও ফ্যাশনেবল কাপড়ের সঙ্গে আরামের ব্যাপারটিও বিশেষভাবে বিবেচনায় রাখেন ক্রেতারা। আর তাই বাংলাদেশে এক্সপোর্ট কোয়ালিটির কটন দিয়ে বেশিরভাগ ফ্যাশনেবল প্যান্ট ডিজাইন করা হয়েছে। তবে কটনের পাশাপাশি লিনেন ফেব্রিক্সের প্যান্টও রয়েছে। এ ছাড়া ট্রেন্ডি প্যান্টে চেরি জর্জেট, ডাবল জর্জেট, জিন্সের পাতলা ফেব্রিক্স, মাইশা কটন ও তসর সিল্ক ফেব্রিক্সের ব্যবহারও দেখা যায়।
রঙ বাছাই
বেশিরভাগ পোশাকের রঙ নির্ধারণ করা হয় ঋতুভিত্তিক ও উৎসবের ওপর ভিত্তি করে। প্যান্টের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম ঘটেনি। বর্ষা মৌসুমে নীল রঙকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হলেও আসন্ন দুর্গাপূজার কথা মাথায় রেখে উৎসবকে রঙিন করে তুলতে এখনকার প্যান্টগুলোর নকশা করা হয়েছে বেশ রঙিন করে। ঋতুভেদে গরমের সময় হালকা রঙ, বর্ষার সময়টায় হালকা ও গাঢ়র মাঝামাঝি কোনো রঙ এবং শীতের সময়টায় গাঢ় রঙ নির্বাচন করা হয়।
ডিজাইনে ফিউশন
গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে এসে বাজার ঘুরে এবং ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী বর্তমান সময়ের নজরকাড়া আরামদায়ক, ফ্যাশনেবল প্যান্টগুলো তৈরি করা হয়েছে। প্যান্টের ওপরের অংশের ডিজাইন করা হচ্ছে সমসাময়িক প্যাটার্নে। মূলত টার্গেট কাস্টমার যেমনটা চায় ঠিক সেভাবে প্যান্ট তৈরি করছেন ডিজাইনাররা। প্যান্ট যেন আরামদায়ক হয়, সেজন্য কল্কা, ভরা প্রিন্ট, আনারস ফয়েল প্রিন্ট, কাঠ ব্লক, স্কিনপ্রিন্ট ও ব্লক প্রিন্ট জাতীয় ডিজাইন বেশি করা হয়েছে। এ ছাড়া পূজা উপলক্ষে একরঙা প্যান্টের চাহিদা বেশি হওয়ায় ভিন্ন ভিন্ন প্যাটার্নে নতুনত্বও আনা হয়েছে। কোনো কোনো প্যান্টের সাইডে স্ট্রাইপড করা হয়েছে। কিছু প্যান্ট আকর্ষণীয় করে তুলতে বিশ্ববিখ্যাত চিত্রশিল্পী ভ্যানগগের স্টেরিনাইট চিত্রকর্মের ডিজিটাল প্রিন্ট ব্যবহার করা হয়েছে পকেটে।
প্যাটার্ন ও মোটিফ
এ সময়ের প্যান্টগুলোয় প্রায় ৮ থেকে ১০ ধরনের প্যাটার্ন দেখা যায়। যার মধ্যে হাই এম স্টাইল, পালাজো স্টাইল ও স্কার্ট পালাজো উল্লেখযোগ্য। এসব প্যাটার্নের ওপর বিভিন্ন ধরনের মোটিফ নিয়ে কাজ করছেন ডিজাইনাররা। জামদানি মোটিফ থেকে শুরু করে হ্যান্ড প্রিন্টÑ সবই ডিজিটালে কনভার্ট করা হচ্ছে। এ ছাড়া পূজার জন্য আল্পনা মোটিফ ও পদ্মফুল মোটিফ বেশ সাড়া ফেলেছে ক্রেতাদের মধ্যে।
জামার সঙ্গে মিল
সবারই নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ রয়েছে। তাই কোন জামার সঙ্গে কেমন প্যান্ট বা সালোয়ার মিলবে, সেটা সম্পূর্ণভাবে যিনি পরবেন তার রুচির ওপর নির্ভর করে। রুচির পাশাপাশি পরিবেশ, পরিস্থিতি ও বয়সভেদেও পোশাক নির্বাচন হয়ে থাকে। তবে চলতি সময়ের ফ্যাশনেবল ট্রেন্ডি প্যান্টগুলো মূলত বেশিরভাগই কামিজ, কুর্তি, টিউনিক, ওয়ান পিস, প্রিন্টেড জর্জেট টপস, নিটেড টি-শার্ট, লংস্লিভ বা স্লিভলেস টপস ইত্যাদির সঙ্গে মানিয়ে যায় ভালো। কারণ তরুণীদের কাছে ক্লাসরুম থেকে ক্যাম্পাসের আড্ডা, ঘোরাঘুরি, বেড়ানো কিংবা কাজে যাওয়ার সময় প্যান্ট পরাই বেশি সুবিধাজনক বলে মনে হয়। অন্যদিকে কিশোরীদের ক্ষেত্রে লিনেন ও কটনের স্লিভলেস টপসের সঙ্গে হেরেম প্যান্ট খুব ভালো মানায়। মূলত যে যেভাবে ক্যারি করতে চায়, সে সেভাবেই প্যান্ট পরছে। অনেকেই বড় ড্রেসের সঙ্গে স্কার্ট পালাজো পরিধান করে। স্কার্ট পালাজো ব্যবহারে মূলত বয়সের কোনো সীমারেখা নেই। এ কারণে মাঝবয়সি থেকে বয়স্ক- সবার পছন্দের প্যান্ট এটি।
প্যান্টের বিপরীতে স্কার্ট
অনেকেই একটু বেশি ঢিলেঢালা বটমস পরিধান করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তাদের জন্য স্কার্ট নির্বাচন সবচেয়ে আরামদায়ক ও স্টাইলিশ ফ্যাশন আইডিয়া। যেকোনো লংড্রেস কিংবা ক্রপ টপস বা ফতুয়ার সঙ্গে স্কার্ট খুব ভালো মানায়। বর্তমানে রিকশা আর্ট মোটিফে ডিজাইন করা স্কার্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছে। পাশাপাশি শাপলা, আল্পনা, ক্যাটার্স, জঙ্গলাফুল, নীলকমল এবং ফোক আর্ট মোটিফে (ফুল, লতা, পাতা, পাখি) ডিজাইন করা স্কার্টগুলো আরামদায়ক ও ফ্যাশনেবল।