× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কাশবনে ধ্রুব এষ

আবুল কালাম আজাদ

প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:৪৮ পিএম

আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:০৭ পিএম

প্রচ্ছদ: মামুন হোসাইন

প্রচ্ছদ: মামুন হোসাইন

সফি ও মাহিন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। একসঙ্গে থাকে। ওদের বাড়ির অদূরে একটি নদী আছে। নদীর দুই পাড় কাশফুলে ভরে গেছে। ওদের ইচ্ছা হলো নদীর ধারে কাশবনে যাবে। ছবি তুলবে। তাই সফি ওর বড় ভাইয়ের সেলফোনটা চেয়ে নিল।

সফি মাহিনকে বলল, চল, কাশবন দেখে আসি। শরৎকাল এসেছে, নদীর পাড় ভরে আছে সাদা সাদা কাশফুলে। খুব ভালো লাগবে। কিছু ছবিও তুলে রাখব।

সফির ভেতর একটু কবি কবি ভাব আছে। স্কুল ম্যাগাজিনে ওর একটি কবিতা ছাপা হয়েছে।

মাহিন বলল, চল যাই।

যাওয়ার পথে দেখে বাড়ির সামনে বেঞ্চিতে শম্পা আর ওর বন্ধু রিমি বসে গল্প করছিল। ওরা দুজনেও সফিদের বন্ধু। একসঙ্গে পড়ে। শম্পা বলল, কোথায় যাচ্ছো তোমরা?

সফি বলল, আমরা নদীর ধারে কাশবনে বেড়াতে যাচ্ছি।

দাঁড়াও, আমরাও যাব তোমাদের সঙ্গে। মাহিন, তুমি ভালো ছবি তুলতে পারো। আমাদের সুন্দর কিছু ছবি তুলে দিও।

চারজনে নদীর পাড়ে কাশবনে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। ছবি তুলছিল। বেশ আনন্দ ওদের মনে। মৃদুমন্দ বাতাস। মাথার ওপর ঝকঝকে নীল আকাশ। নদীর ধারে ছোট ছোট পাখির হাঁটাহাঁটি, ওড়াউড়ি, কিচিরমিচির।

রিমি একগুচ্ছ কাশফুল মুখের কাছে টেনে নিয়ে বলল, মাহিন, একটা ছবি তোলো তো।

ওরা কাশবনের বেশ ভেতরে চলে এসেছে। হঠাৎ লক্ষ করল, একটু দূরেই একটি লোক দাঁড়িয়ে আছে। লোকটি একা একা এখানে কী করছে?

কাছে গিয়ে ওরা দেখে লোকটি ছবি আঁকছে। লোকটির মাথায় লম্বা চুল। গায়ে লাল রঙের ফতুয়া। পরনে জিন্সের প্যান্ট। পায়ে চটি জুতা। লোকটি বলল, এই, তোরা এদিকে আয়।

শম্পা বলল, আমাদের ডাকছেন?

হুম।

কেন?

এলেই বুঝতে পারবি।

কি অদ্ভুত এক লোক! তুই তুই করে কথা বলে। ওরা একটু এগোতেই লোকটি বলল, ওখানেই চারজন দাঁড়া। পাশাপাশি দাঁড়া। নড়াচড়া করিস না।

ওরা দাঁড়াল। লোকটি আর্ট পেপারে কাশবনের ছবি এঁকে রেখেছিল। কাশবনের ভেতর দুটি ছেলে আর দুটি মেয়েকে দাঁড় করিয়ে দিল। তারপর বলল, কেমন হলোরে?

সফি বলল, অসাধারণ!

তোদের ধন্যবাদ।

আপনি ছবি আঁকেন?

হুম।

আর কী করেন?

আর ভাত খাই, চা খাই, কফি খাই, লোকজনের সঙ্গে গপসপ করি।

হিহিহিহি। চারজন হেসে উঠল।

শম্পা বলল, চাকরিটাকরি করেন না?

নাঃ, ছবি আঁকা ছাড়া আমি আর কিচ্ছু পারি না।

আমরা চারজন ক্লাস সিক্সে পড়ি।

বিরাট ব্যাপার!

ওরা এর-ওর মুখের দিকে তাকাল। এখানে বিরাট ব্যাপারের কী হলো বুঝতে পারল না।

লোকটি ওদের চারজনের হাতে চারটি ছবি দিল। বলল, এখানেই এঁকেছি। তোদের দিলাম। খুশি তো?

চারটিই কাশবনের ছবি। তবে ভিন্নরকম। একটিতে আকাশ আর কাশফুল। আরেকটিতে কাশবনের পাশে ছোট একটি নৌকা। আরেকটি নদীর ধার। আরেকটি কাশবনের ভেতর চারটি ছেলেমেয়ে। ওরা খুবই খুশি হলো। ঘুরতে এসে এত সুন্দর ছবি উপহার পাবে তা কি ভাবতে পেরেছিল?

রিমি বলল, আপনি তুই তুই করছেন কেন?

তাহলে কী বলব?

‘তুমি’ বলবেন।

আমার প্রিয় শিক্ষক নবারুণ স্যার আমাকে ‘তুই’ বলতেন। আমার বাবা-মাও... আমাদের ছোট্ট-সুন্দর একটি দেশ। একটিই আকাশ। একটিই জাতীয় পতাকা। একজনই বঙ্গবন্ধু। একজনই রবীন্দ্রনাথ। একজনই নজরুল। একজনই জীবনানন্দ। একজনই জয়নুল। একজনই সুলতান। একটিই সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি। সুতরাং আমরা সবাই খুব আপন। তাই আমরা সবাই তুই তুই...

শম্পা আর রিমি ঠোঁট বাঁকা করে হাসল। সফি আর মাহিনও হাসল। সত্যি লোকটি একটু অন্যরকম। সফি বলল, আপনার নাম কী?

ধ্রুব।

শুধু ধ্রুব? আগেপিছে কিছু নাই?

ধ্রুব এষ।

ও! বইয়ের কভার আঁকেন যে ধ্রুব এষ। আপনি কি সে-ই?

হুম বলে ওদের কাছে ডাকল। আয়, তোদের সঙ্গে একটি ছবি তুলে রাখি। ফেসবুকে দিয়ে দেব। না থাক...

থাকবে কেন?

আমার তো ফোন নেই। ফেসবুকও নেই।

মাহিন বলল, আমার আছে। আসেন ছবি তুলি।

ধ্রুব এষ তার বিরাট দুটি হাত পাখার মতো করে ওদের বুকের কাছে নিল। মাহিন ক্লিক করল। ধ্রুব এষ বলল, আরেকটি ক্লিক দে। আমার মুখটা হাসি হাসি ছিল না।

ওরা সবাই হেসে উঠল। মাহিন আরেকটি ক্লিক দিল।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা