ডাকটিকিটে ইন্দোনেশিয়ার লোকগল্প
অনুবাদ : নিজাম বিশ্বাস
প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:২৭ পিএম
আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:৩০ পিএম
অলংকরণ : অর্নিলা ভৌমিক, নবম শ্রেণি, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা
কানচিল নামে ছোট্ট একটি হরিণ ছিল। চারদিকে তার শত্রু আর শত্রু। তাকে ধরার জন্য কেউ না কেউ সব সময় ওত পেতে থাকে। কিন্তু কানচিল বেজায় চালাক হরিণ! শত্রুকে যে কতবার সে বোকা বানাল তার হিসাব নেই। হরিণটির সবচেয়ে বড় শত্রু ছিল কুমির। বনের পাশ ঘেঁষে বয়ে চলা নদীতে সেই ভয়ানক প্রাণীর বাস। কি বিশাল তাদের শরীর, ইয়া বড় চোয়াল আর ধারালো দাঁত! কিন্তু তারা যত বড়ই হোক না কেন, এক্কেবারে মাথামোটা! কানচিলের বুদ্ধির কাছে বারবার ধরাশাই হয়ে আসছিল।
দেখতে দেখতে গরমের দিন চলে এলো। বনের পুকুর শুকিয়ে গেছে, যেখানে একসময় টলমল জল ছিল, বনের পশু যে জল খেয়ে পিপাসা মেটাত, সেখানে আজ শুকনো কাদা পড়ে আছে। কানচিল সারা বন ঘুরে একটুও পানির দেখা পেল না। পিপাসায় তার বুকের ছাতি ফেটে যাচ্ছে। হঠাৎ তার মনে পড়ল নদীটির কথা। যদিও সে জানত নদীতে বাস করে ভয়ংকর কুমির। তবু পানির তেষ্টায় সে নদীর দিকেই দিল ছুট।
নদীর পাড়ে এসে কানচিল প্রথমে আশপাশ দেখে নিল। না, কোনো কুমির দেখা যাচ্ছে না। ধীরে ধীরে সে জলের কাছে এসে দাঁড়াল। তীক্ষ্ন চাউনি আর কান খাড়া করে শুনছিল শত্রুর কোনো সাড়া আসে কি না! তার মনে হলো আজ কোনো বিপদ নেই। তারপর সে নদীর পানি পান করা শুরু করল। আঃ পরানটা জুড়াল! হঠাৎ চোখে পড়ল গাছের গুঁড়ির মতো কী যেন একটা ভেসে আসছে তার দিকে। ধীরে ধীরে গুঁড়িটি অনেকটাই কাছে চলে এলো।
গুঁড়িটিকে ঠিক কুমিরের পিঠের মতোই মনে হলো। এদিকে কানচিলের এতই পিপাসা পেয়েছিল যে, সে পানি থেকে মুখ তুলতেই পারছিল না। কীভাবেই বা বোঝা যাবে ওটা গাছের গুঁড়ি নাকি কুমির! হরিণের মাথায় হঠাৎ এক বুদ্ধি এলো। সে চিৎকার করে বলল, ‘তুমি কে ভাই নদীতে? যদি কুমির হও তাহলে জবাব দিতে হবে না। আর যদি গাছের গুঁড়ি হও তাহলে বলো আমাকে।’
ওটা সত্যি সত্যিই কুমির ছিল। আর কানচিলকে ধরার জন্যই সে লুকিয়ে লুকিয়ে আসছিল। হরিণের কথা শুনে দশপাঁচ না ভেবে সে জবাব দিলÑ
‘ভয় পেয়ো না, আমি গাছের গুঁড়ি।’
সঙ্গে সঙ্গে কানচিল ওখান থেকে এক দৌড়ে চলে এলো। কুমিরকে উদ্দেশ করে বলল,
‘ওরে বোকা কুমির, গাছের গুঁড়ি কি কখনও কথা বলে!’
কয়েক দিন কেটে গেল। গরম আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। নদীর সেই শীতল জলের কথা মনে পড়ল কানচিলের। ‘আঃ ওই পানিতে যদি একটু গোসল করা যেত!’ সেদিনের কথা তার একেবারেই মনে ছিল না। এক দৌড়ে সে নদীর পাড়ে চলে এলো। নদীতে নেমে ইচ্ছামতো শরীর ভেজাতে লাগল। মনের আনন্দে একটা শুকনো ডাল দিয়ে পানিতে শব্দ করতে থাকল। পাশেই ঘুমিয়ে ছিল এক মস্ত বড় কুমির। পানির শব্দে তার ঘুম ভেঙে গেল।
‘আজ পেয়েছি তোকে’ বলেই কুমিরটি আচমকা কানচিলের এক পা কামড়ে ধরল। কানচিল খেয়াল করল তার পা কুমির কামড়ে ধরেছে। সে ভীষণ ব্যথা পাচ্ছিল। কিন্তু মুখ বুজে সহ্য করল। তারপর হাতে থাকা শুকনো ডালটি জলে ঢুবিয়ে কুমিরকে উদ্দেশ করে বলল, ‘কী ভেবেছ তুমি? ওটা আমার পা না। তোমার মুখে একটা শুকনো ডাল। আর এই দেখ আমি পা নাড়াচ্ছি। পারলে ধরো...’
কুমির পানিতে খুব একটা দেখতে পায় না। তার ওপর আবার ওই কুমিরটি চোখেও একটু কম দেখে। সে কানচিলের কথা বিশ্বাস করে বসল। আর সত্যি সত্যি পা ছেড়ে দিয়ে শুকনো ডালটি গপাস করে কামড়ে ধরল। এ সুযোগে কানছিল দ্রুত লাফিয়ে জল থেকে উঠে এলো। দৌড়ে নিরাপদ দূরত্বে চলে গেল। এভাবেই কুমিরকে সে আরও একবার বোকা বানাল।