× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

উত্তরের ভেনিস ব্রুশের পথে

ফরিদ ফারাবী

প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২৩ ১২:৫২ পিএম

ব্রুশ সিটি সেন্টার 	ছবি : লেখক

ব্রুশ সিটি সেন্টার ছবি : লেখক

ব্রুশ সিটি সেন্টার 	ছবি : লেখক

ব্রুশ সিটি সেন্টার ছবি : লেখক

বেলজিয়ামের দ্রুতগামী ঝকমকে ট্রেনের দোতলার জানালায় তাকিয়ে দেখছিলাম দূরের ছুটে চলা ছবির মতো সব বাড়ি আর বিশাল সব উইন্ডমিল। আমাদের আজকের গন্তব্য ইউরোপের উত্তরের ভেনিস বলে পরিচিত প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী শহর ব্রুশ।

তবে তার আগে আমরা যাব নর্থ সি-সংলগ্ন শহর ওস্টেন্ডে। ওস্টেন্ডের সমুদ্র দেখেই আমরা আজকের মূল গন্তব্যে রওনা হব। বেলজিয়ামে অবস্থানরত পিএইচডি শিক্ষার্থী বন্ধু কৃষ্ণ কুমার সাহার সঙ্গে পরামর্শ করেই আমাদের আজকের পরিকল্পনা।

প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা লাগল আমাদের ওস্টেন্ডে পৌঁছাতে। পথিমধ্যেই আমরা ফেলে এসেছি ঘেন্ট ও ব্রুশের মতো দুই বিখ্যাত পুরোনো শহর। যেহেতু ফিরতি পথেই দেখার পরিকল্পনা, তাই শুধু সময়ের হিসাব রাখছিলাম। ট্রেন স্টেশনের সামনেই ট্রাম স্টপেজ। বন্ধুর নির্দেশনা অনুযায়ী ট্রেন থেকে নেমে ট্রামে উঠলাম। সরাসরি চলে এলাম ব্লাঙ্কেনবেরি সমুদ্রসৈকতে। ইউরোপে এটাই আমার প্রথম সমুদ্র দর্শন, তাই একটু বিশেষ উত্তেজনাও ছিল। কিন্তু উত্তেজনায় ভাটা পড়ল সমুদ্রতীরে এসে। আমরা যারা বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউ দেখে অভ্যস্ত, নর্থ সি দেখে তারা খানিকটা হতাশই হবে। ঠান্ডা বাতাসে সমুদ্রপাড়ে টেকাও বেশ কঠিন। বিচ ধরে কিছু সময় ঘুরেফিরে আমরা ফিরতি পথ ধরলাম। ট্রেন স্টেশনে খুব একটা লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হলো না। এখান থেকে একটা স্টপেজ পরেই ব্রুশ।

স্টেশনের নাম Bruges-এর বদলে Brugee দেখে স্বভাবতই দ্বিধান্বিত হতে হলো ঠিক জায়গাতেই আছি কি না। এখানে ফ্রেঞ্চ নাম ছাড়াও ডাচ ভাষায় অনেক সময় নাম লেখা থাকে; যাতে বানান এবং উচ্চারণ দুই-ই বদলে যেতে পারে। তাই বেলজিয়াম ভ্রমণে এটাও একটা মাথায় রাখার ব্যাপার। 

ট্রেন থেকে নেমে পাশের ডোমিনোস পিৎজাতে লাঞ্চ সেরে আমরা রওনা হলাম ব্রুশের দিকে। দলে দলে পর্যটকরা যাচ্ছে শহরের উদ্দেশে। আমরাও তাদের সঙ্গে ভিড়ে গেলাম। রাস্তা পেরিয়ে কিছুদূর এগোতেই যেন মধ্যযুগের ইউরোপে এসে পড়লাম। চারপাশে সব পুরোনো বাড়ি, চার্চ আর শহরজুড়ে চমৎকার ছিমছাম আর গোছানো শহর। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল এই শহর এখন মূলত ট্যুরিস্টদের কেন্দ্র করেই চলছে। তবে রক্ষণাবেক্ষণ নিঃসন্দেহে দুর্দান্ত। আমরা শহরের অলিগলি ধরে হাঁটতে থাকলাম। তাকিয়ে কেবল দেখছিলাম একেকটা বাড়ির নির্মাণকাল আর স্থাপত্যশৈলী। বেশিরভাগ বাড়িই দোতলা-তিনতলা, যা শত শত বছরের ঐতিহ্য আর আভিজাত্য বহন করে চলছে।

বেলজিয়ামের উত্তর-পশ্চিমের এই এলাকাটিকে বলা হয় ফ্ল্যান্ডার্স। এই অঞ্চলের আরও কয়েকটি বিখ্যাত শহর রয়েছে, এর মধ্যে ঘেন্ট আর লুভেন এখনও পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। অষ্টম শতকে এখানে গড়ে উঠেছিল ইউরোপের প্রথম বন্দর এবং যার মাধ্যমে ব্রুশ পরিণত হয়েছিল এক জমজমাট ব্যবসাকেন্দ্রে। এখানকার তৈরি কাপড় ছিল সমগ্র ইউরোপের বিখ্যাত। সমুদ্র থেকে নদী, আর নদীবন্দর থেকে শহরের আনাচে-কানাচে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য শহরজুড়ে তৈরি হয়েছিল অসংখ্য খাল। খালের এই আধিক্যের জন্য এই শহরকে অনেকে উত্তরের ভেনিস বলে থাকেন। 

খালের পাড় ধরে হেঁটে আমরা সিটি সেন্টার এসে পৌঁছলাম। ৪৩০ হেক্টর জায়গা নিয়ে অবস্থিত এই সিটি সেন্টার ইউনেস্কো ঘোষিত প্রসিদ্ধ ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। নির্মাণশৈলী অনেকটা ব্রাসেলসের গ্র্যান্ড প্যালেসের মতোই। সুবিশাল সব স্থাপনা অবাক চোখে কেবল চেয়ে দেখি। একসময়ের বিখ্যাত বাণিজ্যিক নগরী ব্রুশ টিকে থাকার প্রয়োজনেই এক দিন পর্যটন নগরীতে রূপান্তরিত হয়েছিল। 

মূলত বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে উন্নতির চরম শিখরে থাকা ব্রুশের গুরুত্ব কমতে থাকে পঞ্চদশ শতকে এসে। এ সময় নতুন পোর্ট আর ব্যবসাকেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে অ্যান্টোয়ার্প। ধীরে ধীরে পরবর্তী কয়েকশ বছরে ব্রুশ অনেকটা পরিত্যক্ত শহরে পরিণত হয়। প্রায় হারিয়ে যাওয়া ব্রুশ ঊনবিংশ শতাব্দীতে এসে আবার নতুন করে জেগে ওঠে। তবে এবার আর ব্যবসাকেন্দ্র হিসেবে নয়, চমৎকার সব পুরোনো স্থাপনা, পথঘাট আর খাল নিয়ে ব্রুশ পরিচিতি পায় পর্যটননগরী হিসেবে। দুই বিশ্বযুদ্ধ আর নানা চড়াই উতরাইয়ের মাঝেও সৌভাগ্যবশত ব্রুশ অক্ষত টিকে আছে। 

আশপাশ ঘুরে আরেকটু সামনে এগোতেই চোখে পড়ল জমজমাট খাবারের এলাকা। এখানে নানা দেশের মানুষ আর নানা রকমের খাবারের পসরা। হাঁটতে হাঁটতে আমরা চলে এলাম সুবিশাল এক চার্চের সামনে। আজকের জন্য প্রবেশদ্বার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর ভেতরে দেখা হলো না। আমাদের পাশ দিয়েই চলে যাচ্ছিল কিছুটা মধ্যযুগীয় কায়দায় তৈরি ট্যুরিস্ট বহনকারী ঘোড়ার গাড়ি। এ ছাড়া এখানে খাল ধরে পুরো শহর ঘুরে বেড়ানোর জন্য ট্যুরিস্ট বোট সার্ভিসও রয়েছে। তবে এসব পুরোনো শহর ঘুরতে সময় নিয়ে হেঁটে দেখতেই বরং বেশি স্বাচ্ছন্দ্য লাগে। অনেক বেশি অনুভব করা যায়।

অলিগলি ঘুরে কখন যে বেলা শেষ হয়ে এলো টেরই পেলাম না। যেহেতু পার্শ্ববর্তী শহর ঘেন্ট হয়ে ফিরব, তাই আর দেরি না করে আমরা ফিরতি পথ ধরলাম। ব্রুশ নগরীর চমৎকার কিছু স্মৃতি নিয়ে আমরা রওনা হলাম ইউরোপের পথে আমাদের নতুন গন্তব্যে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা