জাহিদ খান
প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২৩ ১২:১৬ পিএম
আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০২৩ ১৬:৫২ পিএম
সম্প্রতি আইইএলটিএসে চালু হয়েছে ‘ওয়ান স্কিল রিটেক’ নামে একটি নতুন সুবিধা। চারটি মডিউলের মধ্যে যেকোনো একটি পরীক্ষা পুনরায় দেওয়ার সুযোগ পাবেন শিক্ষার্থীরা। আইইএলটিএসের নতুন সুবিধা এবং প্রস্তুতির আদ্যোপান্ত নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন জাহিদ খান
‘ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম’ সংক্ষেপে আইইএলটিএস নামে পরিচিত। বিভিন্ন দেশে উচ্চশিক্ষা, অভিবাসন, ভিসা কিংবা চাকরির আবেদনে পূর্বশর্ত হিসেবে আইইএলটিএস স্কোর গ্রহণ করা হয়। আইইএলটিএস পরীক্ষায় মূলত একজন পরীক্ষার্থীর ইংরেজি ভাষাদক্ষতার চারটি ধাপ- রাইটিং, রিডিং, লিসেনিং ও স্পিকিংয়ের ওপর সক্ষমতা যাচাই করা হয়।
রয়েছে রিটেক সুবিধা
সম্প্রতি আইইএলটিএসে চালু হয়েছে ‘ওয়ান স্কিল রিটেক’ নামে একটি নতুন সুবিধা। অর্থাৎ রিডিং, রাইটিং, স্পিকিং, লিসেনিং চারটি মডিউলের মধ্যে যেকোনো একটি পরীক্ষা পুনরায় দেওয়ার সুযোগ পাবেন শিক্ষার্থীরা। রিটেক দিতে হলে ফি কত হবে, কিংবা যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইইএলটিএসের গ্রহণযোগ্যতা আছে, সবাই ‘রিটেক স্কোর’ গ্রহণ করবে কি না তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মনে প্রশ্ন আছে। তবে এ সুবিধা শিক্ষার্থীদের জন্য ইতিবাচক হবে বলেই অধিকাংশের মত।
প্রথমবার পরীক্ষা দেওয়ার পরে কোনো মডিউলে কম স্কোর এলে রিটেকের সুযোগ কাজে লাগানো যাবে। বলা হচ্ছে, কম্পিউটার টেস্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ৬০ দিনের মধ্যে রিটেকের সুযোগ গ্রহণ করতে পারবেন। আবেদন করতে হবে আইইএলটিএস টেস্ট টেকার পোর্টালের মাধ্যমে। ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের শিক্ষক ও আইইএলটিএস প্রশিক্ষক সাব্বির সরকার বলেন, ‘অনেক দেশে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইইএলটিএসের বিভিন্ন মডিউলের জন্য নির্দিষ্ট স্কোর চাওয়া হয়। যেমন রাইটিংয়ে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭.০-এর চেয়ে কম স্কোর গ্রহণযোগ্য নয়। কেউ যদি আগে ৬.৫ পায়, তাহলে আগে পুরো পরীক্ষা আবার দিতে হতো। এখন কম্পিউটার স্কিল টেস্টে পুরো পরীক্ষা দিতে হবে না। এটা একটা ভালো দিক।’
আইইএলটিএস পরীক্ষার ফি এখন ২২ হাজার ৫০০ টাকা। রিটেক পরীক্ষার জন্য আলাদা ফি দিতে হবে, এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, ধীরে ধীরে সব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ই রিটেক স্কোর গ্রহণ করবে। তবে সনদে আগের স্কোরেরও উল্লেখ থাকবে। রিটেক দিয়ে আপনি যদি আগের চেয়েও কম পান, তাহলে আগের স্কোরই গ্রহণযোগ্য হবে।
বিস্তারিত জানতে : www.britishcouncil.org.bd/ en/exam/ielts/one-skill-retake
আইইএলটিএস পরীক্ষার বিভিন্ন মডিউল
আইইএলটিএস পরীক্ষার স্কোর উচ্চশিক্ষা কিংবা অভিবাসনের ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। দুই ধরনের পরীক্ষা হয়- একাডেমিক ও জেনারেল ট্রেনিং। স্নাতক, স্নাতকোত্তর অথবা পিএইচডি পর্যায়ে পড়াশোনার জন্য একাডেমিক মডিউলে পরীক্ষা দিতে হয়। কোনো কারিগরি বিষয় বা প্রশিক্ষণে অংশ নিতে হলে সাধারণত জেনারেল ট্রেনিং মডিউলে পরীক্ষা দিতে হয়। আইইএলটিএস পরীক্ষায় দুই ধরনের মডিউলেই চারটি অংশ থাকে- লিসেনিং, রিডিং, রাইটিং ও স্পিকিং। পেপার বেইজড (কাগজে-কলমে পরীক্ষা) ও কম্পিউটার বেইজড (নির্ধারিত সেন্টারে গিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে কম্পিউটারে পরীক্ষা) দুটির মধ্যে যেকোনো একটি ধরন আপনি বেছে নিতে পারেন।
স্পিকিং
স্পিকিং টেস্টের দৈর্ঘ্য সাধারণত ১১-১৪ মিনিট। তিনটি অংশে ইংরেজিতে কথা বলার পরীক্ষা দিতে হয়। প্রথম অংশে প্রশ্নকর্তা সাধারণত পরিবার, কাজ, পড়াশোনা, শখ- এ ধরনের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আলাপ করেন। দ্বিতীয় অংশে শিক্ষার্থীকে একটি নির্ধারিত বিষয় দেওয়া হয়। সে বিষয়ে প্রায় দুই মিনিট কথা বলতে হবে। প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য অবশ্য আগে এক মিনিট সময় পাবেন। তৃতীয় অংশের আলাপ হবে মূলত দ্বিতীয় অংশে আপনি যা বলেছেন, তার ওপর ভিত্তি করে। প্রশ্নকর্তা আপনাকে নানা রকম প্রশ্ন করবেন, বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সেসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
লিসেনিং
লিসেনিং অংশে শিক্ষার্থীকে চারটি অডিও শোনানো হয়। কোনো অডিওতে হয়তো একাধিক মানুষের কথোপকথন থাকবে। আবার কোনোটায় একজনের কণ্ঠস্বরই শুনতে পাবেন, যিনি কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয় বর্ণনা করবেন। লিসেনিং অংশে বেশ কিছু বহুনির্বাচনী প্রশ্ন থাকে। কোথাও কোথাও এক শব্দ বা তিন শব্দে উত্তর দিতে বলা হয়।
রিডিং
তিনটি অনুচ্ছেদ পড়ে ৬০ মিনিটের মধ্যে আপনাকে ৪০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। এর মধ্যে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন আছে, শূন্যস্থান পূরণ আছে। নির্ধারিত অনুচ্ছেদ পড়ে ‘সত্য, মিথ্যা’ বা ‘উল্লেখ নেই’ এমন মন্তব্যও করতে হবে। ‘ম্যাচিং সেনটেন্স এন্ডিংস’ ধরনের প্রশ্নে অনুচ্ছেদ পড়ে বাক্য শেষ করতে হবে। ‘সেনটেন্স কমপ্লিশন’ ধরনের প্রশ্নও থাকতে পারে। এ ছাড়া কোনো একটা অনুচ্ছেদ পড়ে আপনাকে টেবিল বা ফ্লোচার্ট পূরণ করতে হতে পারে।
রাইটিং
একাডেমিক রাইটিংয়ে ৬০ মিনিটে দুটি অংশ লিখতে হয়। প্রথম অংশে গ্রাফ, টেবিল, চার্ট বা ডায়াগ্রামসংশ্লিষ্ট একটি বিষয়ে আপনাকে লিখতে হবে। গ্রাফ বা টেবিলে উল্লিখিত তথ্যের ব্যাখ্যা ও সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিতে হয় ১৫০ শব্দের মধ্যে। পরীক্ষার দ্বিতীয় অংশে ৪০ মিনিটে ২৫০ শব্দের মধ্যে উত্তর লিখতে হয়। আপনার ভোকাবুলারি কতটা সমৃদ্ধ, ইংরেজি ভাষা আপনি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেন কি না রাইটিং অংশে তা-ই পরীক্ষা করা হয়।
প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে
আইইএলটিএস চারটি সেকশনের জন্য কিছু টিপস :
১. লিসেনিং টেস্টে কী তথ্য দেওয়া হচ্ছে তা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। ভিন্ন ধরনের উচ্চারণ শুনে ভয় না পেয়ে কী বলছে তা বোঝার চেষ্টা করতে হবে। পরীক্ষার সময় যে রেকর্ডিং বাজানো হয়, সেখানে প্রতিটি অংশের প্রশ্নের ওপর চোখ বুলিয়ে নেওয়ার কিছু সময় দেওয়া হয়। সেই সময়টা কাজে লাগিয়ে প্রশ্নে কী চাওয়া হচ্ছে, সে জাতীয় শব্দ পেনসিল দিয়ে দাগিয়ে নেওয়া যেতে পারে। এতে সময় নষ্ট কম হয়। আর পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে প্রচুর ইংরেজি ডায়ালগ, নিউজ বুলেটিন শুনতে হবে।
২. রিডিং সেকশনটিতে ভালো করার জন্য ইংরেজি ভোকাবুলারি সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি প্রচুর ইংরেজি আর্টিকেল, নিউজ, ম্যাগাজিন, জার্নাল পড়তে হবে। আর পরীক্ষার সময় আগে প্রশ্ন দেখে নিতে হবে কী চাওয়া হয়েছে, প্রয়োজনে কি-ওয়ার্ডগুলো দাগিয়ে নিতে হবে, সে তথ্যগুলোই প্যাসেজ থেকে আগে খুঁজে নিতে হবে। কেননা প্রথমেই পুরো প্যাসেজ পড়তে গেলে অপ্রয়োজনীয় তথ্য পড়তে গিয়ে সময় অপচয় হতে পারে।
৩. লেখার হাত সবার ভালো হবে, এমন কোনো কথা নেই, তবে নিজেকে চ্যালেঞ্জ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। নিয়মিত লেখার অভ্যাস থাকলে, গ্রামারের ভুল সংশোধন করে নিলে লেখার দক্ষতা বাড়বেই। এ ধাপের প্রথম সেকশনে একটি গ্রাফ বা চার্টের ওপর বর্ণনা লিখতে হয়। কোনো বড় ধরনের উন্নতি বা অবনতি গ্রাফে লক্ষণীয় কি না বুঝতে হবে এবং সেটা প্রথমে লিখতে হবে তারপর বাকি গ্রাফটি ধীরে ধীরে বুঝিয়ে লিখতে হবে। আর মতামত বর্ণনার অংশে নিজের যুক্তি সঠিক গ্রামার ও ভোকাবুলারি দিয়ে সহজবোধ্য করে লিখতে হবে।
৪. স্পিকিংয়ে ভালো করার প্রথম শর্তই হলো স্পিকিংকে ভয় পেলে চলবে না। মক টেস্ট দেওয়ার সময় স্পিকিং মক টেস্ট দিতে এবং মক পরীক্ষকের পরামর্শ নিলে সুবিধা হবে মূল পরীক্ষায়। স্পিকিংয়ের দুই মিনিট উপস্থিত বক্তৃতা অংশটির জন্য আয়নার সামনে, বন্ধুদের সঙ্গে ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ইংরেজি চর্চা করলে মানুষের সামনে কথা বলার জড়তা কেটে যাবে। ১১ থেকে ১৪ মিনিটের এ সময়টিতে যথাসম্ভব ফরমাল ইংরেজিতে কথা বলতে হবে, এটি ভালো স্কোর এনে দেয় স্পিকিংয়ে।
একনজরে