প্রচ্ছদ
পল্লী মজুমদার
প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:১৬ পিএম
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:১৮ পিএম
মডেল : নিশাত; পোশাক : লা রিভ; মেকআপ : রেড; ছবি : ফারহান ফয়সাল
প্রকৃতিতে চলছে হেমন্ত। শীতের আগমনের আভাস পাওয়া গেলেও গরম কমেনি। এ সময়ে পোশাকের স্টাইল কীভাবে করলে ফ্যাশন ও আরাম দু-ই থাকে সেটাই বিষয়। সেখানে আপনার ফ্যাশনে যোগ করতে পারেন শ্রাগ; যা গরম লাগলে খুলে রাখা যাবে আবার হালকা শীতেও দেবে আরাম
না শীত না গরমের এই মৌসুমে এমন পোশাক চাই যা একই সঙ্গে মৌসুম ও ট্রেন্ড উপযোগী। সেক্ষেত্রে যেকোনো পোশাকের সঙ্গে শ্রাগ বা কটি হতে পারে প্রথম পছন্দ। ছাপা কিংবা একরঙা, লম্বা বা ছোট, ঢিলেঢালা ধরনের শ্রাগ আজকাল ভীষণ জনপ্রিয়। ফতুয়া, টি-শার্ট, স্কার্ট, কামিজ কিংবা শাড়ি সবকিছুর সঙ্গেই মানিয়ে যায়। অনেকে ঝামেলা এড়াতে ওড়নার বদলে বেছে নিচ্ছেন নানা কাটের শ্রাগ। একটু আলাদা ডিজাইন আর কাটছাঁটের ভিন্নতায় এসব কটি প্রচলিত ধারায় এনেছে নতুনত্বের ছোঁয়া।
কয়েক বছর ধরেই নতুন করে পোশাকে ফিউশন এনেছে শ্রাগ। শুরুতে নিট ফেব্রিক্সে এক ধরনের লম্বা জ্যাকেট তৈরি হতো; যা ধীরে ধীরে বিবর্তন হয়ে শ্রাগে রূপ নেয়। বর্তমানে নানা কাটের শ্রাগ পাওয়া যায়। যেমন ক্লাসিক কাট, বাটারফ্লাই, লেস, রাফল, ভিসকস জার্সি, ওভারসাইজড ধরনের শ্রাগ। শ্রাগের হাতায়ও দেখা যায় ভিন্নতা। ফুলহাতা, ম্যাগি হাতা, থ্রি-কোয়ার্টার হাতা, স্লিভলেস, ফ্রিলসহ নানা রকমের হাতার শ্রাগ বাজারে দেখতে পাওয়া যায়।
পোশাক হোক সাদামাটা বা জমকালো, তার ওপর একটা শ্রাগ বা কটি চাপিয়ে নিলেই পুরো লুক বদলে যায়। অফিস শেষে যদি কোনো অনুষ্ঠানে বা দাওয়াতে যেতে হয় তবে ক্যাজুয়াল অফিস পোশাকের ওপর শ্রাগ চাপিয়ে নেওয়া যেতে পারে; যা এনে দেবে ভিন্ন মাত্রা। আমাদের শহুরে জীবনের প্রতিদিনের চলাচল, পরিবেশ, আবহাওয়া, পরিস্থিতিÑ সব বিবেচনায় রেখেই এ সময় নানা ম্যাটেরিয়ালের শ্রাগ ডিজাইন করেছেন নকশাকাররা। শ্রাগ দিয়ে ফান, ফরমাল কিংবা জমকালো যেকোনো লুক তৈরি করা সম্ভব। বিষয়টি নির্ভর করে পরিধানকারীর ওপর।
ফেব্রিকে ভিন্নতা
বাজারে নানা ধরনের কাপড়ে শ্রাগের দেখা পাওয়া যায়। সুতি, খাদি, জর্জেট, লিনেন, কাতান, মসলিন, কাঞ্জিভরম সব ধরনের কাপড়েই তৈরি হচ্ছে শ্রাগ। কিছু শ্রাগ হয় বোতামহীন আবার কাঠ-পুঁতি, পাথরের বোতাম বসানো শ্রাগও পাওয়া যায়। শীতে উলিকট, সুতি কিংবা গেঞ্জি মেটেরিয়ালের শ্রাগও বেছে নিতে পারেন। এতে আরামের সঙ্গে স্টাইলটাও হবে ঠিকঠাক।
প্যাটার্ন ও কাটছাঁট
শ্রাগ বিভিন্ন রকম কাটের হতে পারে। নি লেন্থ, ওয়েস্ট লেন্থ, ফুল লেন্থ। এ পোশাক মূলত ভেতরের পোশাককে আরও দৃষ্টিনন্দন করার কাজে ব্যবহৃত হয়। তাই কোন পোশাক ভেতরে পরা হবে তার ওপর নির্ভর করবে শ্রাগের লেন্থ বা স্লিভ ও ফেব্রিক কেমন হবে।
স্কার্টের সঙ্গে শ্রাগ পরতে চাইলে তার লেন্থ হতে হবে স্কার্টের লেন্থের সমান। নয়তো মানাবে না। স্কার্ট ও টপ যদি একই ফেব্রিক ও রঙের হয় তবে শ্রাগ পরতে পারেন কন্ট্রাস্ট করে। যদি টপ ও স্কার্ট ভিন্ন রঙ ও নকশার হয় তবে শ্রাগ স্কার্টের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে পরা যেতে পারে। একরঙা কিংবা কম কাজের সিল্কজাতীয় শাড়ির সঙ্গে জমকালো নেট কিংবা কাতানের শ্রাগ অভিজাত লুক তৈরি করবে। শাড়ির সঙ্গে নি লেন্থ কিংবা ওয়েস্ট লেন্থ শ্রাগ বেশি মানাবে।
ফ্যাশন ব্র্যান্ড কিউরিয়াসের প্রধান ডিজাইনার বিপ্লব বিপ্রদাস বলেন, বর্তমানের ট্রেন্ড অনুযায়ী নানা রঙের ও ঢঙের শ্রাগ আমরা ডিজাইন করছি। যার ফেব্রিক ও নকশায় রয়েছে নতুনত্ব। এমনভাবে শ্রাগ তৈরি করা হয় যাতে ওয়েস্টার্ন কিংবা সালোয়ার-কামিজ পরতে পারবেন সবকিছুর সঙ্গে। অন্যদিকে সারা লাইফস্টাইলের প্রধান ডিজাইনার শামীম রহমানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় শ্রাগের নকশায় নানা ধরনের অর্নামেন্টাল আঁকিবুঁকি ব্যবহার করেছেন তারা। কোনো কোনো শ্রাগে দেখা মেলে নানা রঙের নান্দনিক নকশা। এমন শ্রাগ একরঙা টপ বা কামিজের সঙ্গে পরেতে পারবেন সহজেই।
একরঙা গাউনের সঙ্গে ওয়েস্টলাইনের শ্রাগ মানানসই। সে ক্ষেত্রে সেই শ্রাগের নকশা যদি একটু জমকালো হয়, তাহলে গাউনটা অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। আবার টি-শার্টের ক্ষেত্রে নি লেন্থের শ্রাগই বেশি পরা হয়। জিগজ্যাগ কাটিং, বুকে কুচি রয়েছে এমন জর্জেটের শ্রাগ বেশি মানানসই এ ক্ষেত্রে। টি-শার্টের সঙ্গে শ্রাগ পরার সময় রঙের কম্বিনেশনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। সাদা প্লেন টি-শার্টে পরতে পারেন সব ধরনের শ্রাগ। তবে টি-শার্ট যদি কয়েক রঙের মিশ্রণের হয় তবে শ্রাগ এক রঙের হলেই ভালো দেখাবে। সে ক্ষেত্রে একরঙা শ্রাগে পাড়ের মতো করে কাজ থাকলেও দেখতে সুন্দর লাগবে।
কামিজকে আরেকটু দৃষ্টিনন্দন করার জন্য ওয়েস্ট, হিপলাইন বা থাই লেংথ বরাবর শ্রাগ মানায়। কারণ কামিজ হাঁটু পর্যন্ত বা এর নিচ পর্যন্ত লম্বা থাকে। আর কামিজের নিচের অংশে কমবেশি নকশা থাকেই। ফলে এমন শ্রাগ পরা উচিত যা কামিজে নতুন আবেদন যোগ করবে আবার কামিজের নকশাকেও ঢেকে ফেলবে না। থ্রি কোয়ার্টার বা ফুল হাতার পোশাকের সঙ্গে স্লিভলেস শ্রাগ মানানসই। এতে হাতার নকশা দৃশ্যমান থাকে। অন্যদিকে টি-শার্টের হাতা ছোট থাকে, ফলে লম্বা হাতার শ্রাগই বেশি ব্যবহৃত হয়।
শ্রাগ দিয়ে নানা লুক
স্পোর্টস ওয়্যার বা ক্যাজুয়াল পোশাকের ওপর প্লেন, একরঙা কভার-আপ হিসেবে শ্রাগ ব্যবহার করা যেতে পারে যা দেবে কম্ফি লুক ও স্প্রোর্ট ভাইভ। হালকা শীতে এ লুকটি বেশ ট্রেন্ডি। ট্যাংক টপ ইনার আর হাই ওয়েস্ট প্যান্টের সঙ্গে শর্ট এমব্রয়ডারি করা শ্রাগ এনে দেবে ফরমাল লুক। একই এমব্রয়ডারি করা শ্রাগ ফতুয়ার সঙ্গে পরলে তা এনে দেবে ফেস্টিভ লুক। ক্রপ টপ ও নানা কাটের প্যান্টের সঙ্গে কনট্রাস্টের শ্রাগ ও সঙ্গে বোহেমিয়ান জুয়েলারি পরে সহজেই কোনো অনুষ্ঠানে সবার চাইতে আলাদা দেখাতে পারেন নিজকে।
কোথায় পাবেন ও দরদাম
দেশি ফ্যাশন হাউসগুলো এখন নানা কাটের ও নানা প্যাটার্নের শ্রাগ তৈরি করছে। শ্রাগ মিলবে আড়ং, বিশ্বরঙ, রঙ বাংলাদেশ, ইয়েলো, লা রিভ, রাইজ, সেইলরসহ নানা ফ্যাশন ও বুটিক হাউসে। ভিন্নমাত্রা ও ইউনিক ডিজাইনের শ্রাগ পেয়ে যাবেন অনলাইনেও। নানা পেজে এখন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন রকমের শ্রাগ মেলে। এতে নিজের ইচ্ছামতো ডিজাইনে এবং রঙে শ্রাগ বানিয়ে নিতে পারবেন। চাইলে কাপড় কিনে বিশ্বস্ত দর্জির কাছ থেকেও বানিয়ে নিতে পারেন পছন্দের শ্রাগটি। সাধারণত শ্রাগের দাম ৬০০ থেকে ১ হাজারের মধ্যে। তবে কাস্টমাইজ ও ডিজাইনার শ্রাগের ক্ষেত্রে গুনতে হতে পারে ১ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা।