লীলা নাগ : দ্য রেবেল
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:৫৪ পিএম
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২৩ ১৭:১৮ পিএম
বিপ্লবী লীলাবতী নাগ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী নারী শিক্ষার্থী। তিনি ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক, নারী শিক্ষার প্রচলনকারী, নারীদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার সুদক্ষ কারিগর ও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের পুরোধা নারী নেত্রী। কিন্তু তাকে নিয়ে যেমন আলোচনা হয় না, তেমনি নেই স্মৃতি রক্ষার উদ্যোগ। লীলাবতী নাগের স্মৃতি রক্ষার গুরুত্ব উঠে এসেছে ‘লীলা নাগ : দ্য রেবেল’ তথ্যচিত্রটিতে।
সমাজ সংস্কারক, নারী শিক্ষায় অগ্রগামী ও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নারী নেত্রী লীলাবতী নাগকে নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্র ‘লীলা নাগ : দ্য রেবেল’–এর প্রথম প্রদর্শনী হয়ে গেল গতকাল (৮ নভেম্বর) বুধবার। এদিন বিকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে প্রথম প্রদর্শনী হয় এ তথ্যচিত্রের। প্রদর্শনী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া আলোচক ও অতিথিদের কথায় উঠে এসেছে এসব বিষয়।
প্রায় ৬০ মিনিটের এই তথ্যচিত্রে স্থান পেয়েছে লীলা নাগের সংস্পর্শে আসা বাংলাদেশ ও ভারতের অনেক মানুষের বক্তব্য। অবিভক্ত বাংলায় লীলা নাগ যত জায়গায় বসবাস করেছেন, সেসব স্থান উঠে এসেছে এতে। সমাজ সংস্কারে লীলা নাগের অবদান উঠে এসেছে তাদের কথায়। এক ঘণ্টারও বেশি দীর্ঘ এই ছবিটিতে লীলা নাগের বর্ণাঢ্য জীবনের ওপর নানাদিক থেকে আলো ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, ‘লীলাবতী নাগ নামটাই হৃদয়ে স্পর্শ করে। এই তথ্যচিত্র লীলা নাগের স্মৃতি রক্ষা ও চর্চার আমাদের দায়বদ্ধতা তুলে ধরেছে। তার বক্তব্যে উঠে আসে দীপালি সংঘ প্রতিষ্ঠায় লীলা নাগের ভূমিকা এবং এ নিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতামত।’
লীলা নাগের মৌলভীবাজারের পৈতৃক ভিটা রক্ষার কাজটি আইনি প্রক্রিয়ায় সমাধান হওয়া ভালো বলে উল্লেখ করেন মফিদুল হক। অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হবে। মৌলভীবাজারে লীলা নাগের নামে একটি সড়ক নামকরণের উদ্যোগ নেওয়ার কথাও জানান তিনি।
চলচ্চিত্র নির্মাতা ও গবেষক মানজারে হাসিন মুরাদ বলেন, ‘লীলা নাগ : দ্য রেবেল’ প্রদর্শনের সময় দর্শকের মুগ্ধতা তথ্যচিত্র নিয়ে আশা জাগাচ্ছে। কাজটিতে শ্রম বিষয়ভিত্তিক হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ তথ্যচিত্রের বড় সম্পদ গবেষণা।
সংসদ সদস্য ও বরেণ্য অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর বলেন, লীলা নাগ সম্পর্কে অস্পষ্ট ধারণা অনেকটা স্পষ্ট হলো এ তথ্যচিত্র দেখে। ইতিহাসের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, লীলা নাগের জীবন বিপ্লব দিয়ে শুরু করে বিপ্লব দিয়ে শেষ হয়েছে।
এ ছাড়া ‘লীলা নাগ : দ্য রেবেল’ প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারের পরিচালক মৃন্ময় চক্রবর্তী, মৌলভীবাজারে অবস্থিত লীলা নাগ স্মৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খসরু চৌধুরীসহ আরও অনেকে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জুলহাস আলম। প্রদর্শনী শুরুর আগে সব ধরনের সহযোগিতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানান তথ্যচিত্রটির গবেষক ও প্রযোজক এলিজা বিনতে এলাহী এবং পরিচালক আবু রেজওয়ান নাসির।
লীলাবতী নাগ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী নারী শিক্ষার্থী। ১৯২৩ সালে উপমহাদেশের প্রথম নারী সংগঠন দীপালি সংঘের প্রতিষ্ঠা হয় তার হাত ধরে। ১৯৩১ সালে প্রকাশ করেন দীপালি সংঘের মুখপত্র ‘জয়শ্রী’ নামের একটি নারী পত্রিকা। ঢাকা, মৌলভীবাজার, মানিকগঞ্জে লীলা নাগ প্রতিষ্ঠিত প্রায় ১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল। এর মধ্যে টিকে আছে মাত্র চারটি।