হেমন্তের হালকা হিমে

হেমন্তের দিনে মিষ্টি রোদ আবার রাতের দিকে হালকা হিম বাতাস। না গরম আবার না শীত- সময়টা এখন এমন। এ সময়ে আপনার ফ্যাশনে যোগ করতে পারেন শাল। হালকা শীতে উষ্ণতার পাশাপাশি শাল এনে দেবে স্টাইলিশ লুক-

চারদিকের রুক্ষতা আর হিমেল হাওয়া জানান দিচ্ছে সময়টা এখন হেমন্ত। এখনই তীব্র শীতের কাঁপন অনুভূত না হলেও হালকা শীতের আমেজ রয়েছে। এ সময়ে জ্যাকেট বা ভারী শীতকাপড় পরা যায় না আবার হিম বাতাস উপেক্ষা করলে ঠান্ডা-কাশি-গলাব্যথার মতো সমস্যা হতে পারে। তাই বেছে নিতে হবে এমন কিছু, যা হালকা শীতে উষ্ণতা দেবে আবার ফ্যাশনেবল হবে। এদিক থেকে এ সময়ে আদর্শ পছন্দ হতে পারে শাল। একটি শাল নানা রকম স্টাইল করে ব্যবহার করা যায় বলে তরুণীদের শীতপোশাকে এটি বেশ জনপ্রিয়। পরতে ঝামেলা নেই, ইচ্ছামতো গলায় বা গায়ে চাপিয়ে নিলেই হলো। আবার গরম লাগলে চাইলেই ব্যাগেও বহন করা যায়। ফ্যাশনেও বেশ কেতাদুরস্ত এখনকার স্টাইলিশ মোটিফের শালগুলো। শালে সব সময় কটনের মধ্যেই নানা ধরনের এক্সক্লুসিভ ডিজাইন নিয়ে আসে বলে জানালেন ফ্যাশন হাউস লা রিভের ডিজাইনার মারুফা শিল্পী। প্রধানত স্কিন প্রিন্টের দারুণ সব কালেকশনের দেখা মেলে লা রিভে। তবে এবার তাতে আরও আছে ট্যাডিশনাল মোটিফ, যা একেকটা চাদরকে করেছে আকর্ষণীয়। কোনটাতে পাড়ের ব্যবহার করা হয়েছে, কোনটাই আবার পুরো জমিনে ছোট কাজ। কারচুপি ও এমব্রয়ডারির কাজ দিয়েও আছে তাদের দারুণ সব কালেকশন বলে জানালেন মারুফা।

ছেলেমেয়ে উভয়ের কাছেই শাল খুব পছন্দের পোশাক। ঘরে কিংবা দাওয়াতে সব পোশাকের সঙ্গেই মানিয়ে যায় শাল। ছেলেরা পাঞ্জাবির সঙ্গে তো বটেই, শার্ট বা টি-শার্টের সঙ্গেও এখন ব্যবহার করছেন শাল। মেয়েরাও শাড়ি, স্যালোয়ার, কুর্তি, টপস, জিন্স সবকিছুর সঙ্গেই নানা ধরনে ব্যবহার করছে শাল।

ম্যাটারিয়াল ও নকশা

ফ্যাশন হাউস লা রিভের ডিজাইনার মেহেরুবা আলম বলেন, ডেনিম ও ফেলালিন কাপড় দিয়ে দারুণ সব চাদরের কালেকশন এবার রয়েছে তাদের হাউসে। এগুলোর ওপরে লেইসের নকশা ও বিভিন্ন ড্রাই প্রিন্ট দিয়ে একদম ব্যতিক্রম ধরনের শাল দেখতে পাওয়া যাচ্ছে তাদের হাউসে।

কটন কাপড় : এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় কটন বা সুতি ধরনের শাল। এগুলো অনেক হালকা আর আরামদায়ক। শীতের শুরু আর শেষের দিকে এগুলো খুবই উপযোগী আর জনপ্রিয়। এগুলোর মধ্যে প্রিন্ট ডিজাইন দেখতে বেশ ভালো লাগে। আবার স্টাইপ বা চেক নকশার কটন শালের দেখাও মেলে। ব্লক ও বাটিকের কটন চাদরের আবেদন সব সময়ই ছিল। এখন নানা ধরনের ব্লক ও বাটিকের শাল বেছে নিচ্ছেন অনেকে।

দু-তিন রঙের চাদরগুলোও বেশ টেন্ডি এখন, যা সব ড্রেসের সঙ্গে মিলিয়ে পরা যায়। এগুলোর কোনটাতে নিচের দিকে থাকে টারসেল লাগানো। সঙ্গে ওড়না কিংবা চাদর দুভাবেই ব্যবহার করা যায় এটি। এজন্য এ ধরনের শালের চাহিদা অনেক ফ্যাশন সচেতন তরুণীর কাছে। তবে এগুলো হালকা বলে ছেলেমেয়ে উভয়েই ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

ডেনিম কাপড়

এটি বিশেষভাবে ধোয়া থাকে বলে খুবই আরামদায়ক। অনেক নরম আর পোশাকের ওপরে সহজে বহন করা যায়। বেশিরভাগ ফ্যাশন হাউস ঘুরেই এই ডেনিম চাদরের দাপট দেখা গেল। এই চাদরের আরও একটি বৈশিষ্ট্য হলোÑ এটি যেকোনো বয়সের মানুষই ব্যবহার করতে পারবে। ক্যাজুয়াল ও আকর্ষণীয় লুক দেয় বলে নারী-পুরুষ সবাই বেছে নিচ্ছেন এই শাল।

উলের শাল

আদিকাল থেকে চলে আসা এই শালের আবেদন এখনও কম নয়। আগেকার দিনে নানি-দাদি ও মা হাতে বুনতেন এই শাল-উলের কাঁটা দিয়ে। তবে এখন মেশিনেই তৈরি হচ্ছে এ উলের চাদর। হাতে বুনলে এগুলো একটু ফাঁকা ফাঁকাভাবে বুনে তার ওপর কুশিকাঁটার ফুল বসানো হতো, আবার একই উল দিয়ে নিচে দেওয়া হতো টারসেল। আর এখন যেহেতু মেশিনে করা হয়, তাই বুননটা খুবই সূক্ষ্ম হয়। থাকে আলাদা করে সুতার কাজের এমব্রয়ডারি। চারকোনা দিয়ে পাড়ের মতন করে মাঝখনে একই ডিজাইনের ছোট ছোট ফুল বা কলকাÑ এসব চাদরে দেখা মেলে। বেশ হাড় কাঁপানো শীতের জন্য এগুলো যেমন স্টাইলিশ সঙ্গে উপযোগীও।

খাদি শাল

এটি ছেলেদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয়। পাঞ্জাবির সঙ্গে অর্ধেক চাদর মেলে বা টি-শার্টের সঙ্গে পুরো চাদর গায়ে প্যাঁচিয়ে খুব সহজেই শীত নিবারণ করা যায়। একরঙা হলেও খাদি শালের আলাদা একটা আবেদন আছে। নিচের দিকে কিছু শালে থাকে টারসেল। আর ধারগুলো সাধারণভাবেই একটু আঁকাবাঁকা হওয়ায় আর্টিস্টিক একটা ধরন থাকে। তবে এগুলো একটু মোটা ও ভারী হয়, যা অনেক শীতে পরার জন্য উপযোগী।

লিনেন চাদর

এটি খুবই হালকা। চাইলে স্কার্ফের মতো ব্যবহার করা যায় বলে তরুণীদের বেশ পছন্দ। আর এই চাদর মেলে নানা রঙে, সঙ্গে দামেও বেশ সুলভ। অনেক সময় চাদরের দুই পাশে দুই ধরনের রঙ থাকায় দুই পাশই ব্যবহার কর যায়।

এখনকার একটি জনপ্রিয় নকশার নাম হলো প্যাচওয়ার্কের কাজ। ভিন্নধর্মী করতে প্যাচওয়ার্কের কাজের শাল করছে দেশি ফ্যাশন হাউসগুলো। এক পাটের তো আছে অনেক সময় একটা চাদরের ওপরে আলাদা করে কাপড় জোড়া দিয়ে করা হচ্ছে এ কাজগুলো।

শীতের গদ্য, কবিতা, ছড়া দিয়ে ক্যালিগ্রাফিও জড়িয়ে থাকছে অনেক চাদরে। লোককথা, ময়মনসিংহ গীতিকার সঙ্গে চাদরপ্রেমীদের মেলবন্ধন করিয়েছেন অনেক ফ্যাশন হাউস। এ ধরনের চাদরের নিচে ফ্রিলের ব্যবহার এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তবে বাইরের দেশের শালের কদরও কিন্তু কম নয়। লুধিয়ানা, জয়পুরি, চাইনিজ, বার্মিজ, কাশ্মিরি আরও অনেক ধরনের শাল দেশে আসে এ সময়ে। এগুলোতে থাকে অঞ্চলভেদে কারুকাজ।

শীতের সময়ে গাঢ় রঙের পোশাক পরেন কমবেশি সবাই। শালেও তার ব্যতিক্রম নয়। খয়েরি, কালো, নীল, সবুজ, নেভি ব্লু রঙের শালগুলো সচরাচর দেখা যায়। তবে মাস্টার্ড ও পিচ রঙের চাদর বেশ জনপ্রিয়। কারণ এগুলো সব রঙের পোশাকের সঙ্গেই মিলিয়ে পরা যায়।

কোথায় পাবেন, কেমন দাম

দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো একদম ভরপুর হয়ে গেছে সব ধরনের চাদরে। এ ছাড়া নিউমার্কেট, গাউছিয়া, টোকিও স্কয়ার, সানরাইজ প্লাজা, রাপা প্লাজা, পিংক সিটিসহ সব শপিং মলেই পেয়ে যাবেন পছন্দের শাল। আবার অনেক অনলাইন শপেও দেখা মিলছে বিভিন্ন দামের ও নকশার শাল। ব্র্যান্ডের নিতে গেলে চাদরের মুল্য পড়বে ১ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে। ব্র্যান্ড ছাড়া নিলে ৫০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ২ হাজার টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন শাল। তবে অবশ্যই স্থান ও কাপড়ভেদে দামের তারতম্য হবে।