× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সাক্ষাৎকার: মুনতাসির মামুন

ধরে নিই পরিচ্ছন্নতাকর্মী তো আছেই, এটা তাদের কাজ

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২৩ ১১:৫৫ এএম

ইন্টারন্যাশনাল কোস্টাল ক্লিনআপের বাংলাদেশ সমন্বয়ক মুনতাসির মামুন গড়ে তুলেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘কেওক্রাডং বাংলাদেশ’

ইন্টারন্যাশনাল কোস্টাল ক্লিনআপের বাংলাদেশ সমন্বয়ক মুনতাসির মামুন গড়ে তুলেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘কেওক্রাডং বাংলাদেশ’

পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। পরিবেশ নিয়ে গবেষণা ও গণসচেতনতার জন্য পেয়েছেন ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ‘কানেক্ট ফর ক্লাইমেট’, ব্রিটিশ কাউন্সিলের ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্লাইমেট চ্যাম্পিয়ন’, আলোকচিত্রী হিসেবে আইইউসিএনের ‘বায়োডাইভার্সিটি ইন ফোকাস’ ও ‘ইন্টারন্যাশনাল এইডস সোসাইটি’ পুরস্কার। ইন্টারন্যাশনাল কোস্টাল ক্লিনআপের বাংলাদেশ সমন্বয়ক মুনতাসির মামুন গড়ে তুলেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘কেওক্রাডং বাংলাদেশ’

প্রশ্ন : কিছুদিন ধরে কেওক্রাডং বাংলাদেশ সাগর উপকূলে পরিচ্ছন্নতার কাজ করে আসছে। সূচনাটা কীভাবে?

উত্তর : ২০০৫ সালে আমি জাপানে একটা এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে গিয়েছিলাম। সেখানে একজন শিক্ষকের কাছে জানতে পারি ইন্টারন্যাশনাল কোস্টাল ক্লিনআপের কথা। জাপান থেকে ফিরে ওশান কনজারভেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করি। বিশ্বজুড়ে ইন্টারন্যাশনাল কোস্টাল ক্লিনআপ পালিত হয় প্রতি সেপ্টেম্বরের প্রথম অথবা দ্বিতীয় ছুটির দিন। বাংলাদেশে যেহেতু সপ্তাহের ছুটি শুক্র ও শনিবার তাই আমরাও সেই দিনটিই বেছে নিই। প্রথম ক্লিনআপ করেছিলাম খুব ছোট আকারে, ২০০৫ সালে, এই কক্সবাজারে। এরপর ২০০৬ সালে কিছুটা বড় পরিসরে শুরু হয়েছিল কক্সবাজারেই।

প্রশ্ন : কাজ শুরুর পরের অভিজ্ঞতা জানতে চাই।

উত্তর : একদম শুরুর দিকে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছিল বলাই যায়। একদল মানুষ সৈকতের বালু ঘাঁটাঘাঁটি করছে, এটা দেখতে মানুষ জড় হতো। আমরা কে, কী করছি, এটা করে কী হবে? এ-জাতীয় প্রশ্নের সামনে আমরা পড়েছি। তবে এও সত্য, সবাই হয়তো আমাদের সঙ্গে যোগ দেননি কিন্তু মন্দও বলেননি। স্বেচ্ছাসেবী সংগ্রহ করাও কিছুটা কঠিন ছিল। এ টোকাইয়ের কাজে মানুষ পাওয়া শক্তই। আমরা বিভিন্ন জায়গায় কথা বলতে গিয়েছি স্বেচ্ছাসেবী সংগ্রহের জন্য। আমার স্কুলের স্কাউটগ্রুপের সদস্যরা এগিয়ে এসেছিলেন। আবার অনেকেই যোগ দিতে চেয়েও পারেননি। অর্থও একটা বড় ব্যাপার। আমরা শুরু করেছিলাম নিজের যা আছে তাই দিয়ে। পরে কোকাকোলার সঙ্গে কাজটি ১৩ বছর ধরে সেন্টমার্টিন দ্বীপে করছি। আমরা বেশ কিছু স্কুল শিক্ষার্থীকে সঙ্গে নিয়ে কাজটি করেছি বা এখনও করছি। ছোটরা আসলেও সহজ। এ ধরনের কাজে তাদের আগ্রহ বড়দের থেকে বেশি। এ আগ্রহটা সারা বছর ধরে রাখার জন্য শিক্ষকদের এগিয়ে আসা দরকার। তবে একটা কথা না বললেই নয়। অনেকের আগ্রহ থাকে কিন্তু চক্ষুলজ্জায় অংশ নেন না। তবে বর্তমান অন্যরকম। এখন অনেকেই এ কাজ করছেন। কাজের ধরনে পার্থক্য থাকতে পারে কিন্তু ফল একই।

প্রশ্ন : বঙ্গোপসাগর উপকূলের প্রধান বর্জ্য সম্ভবত প্লাস্টিক। এর পরিমাণ ও প্রকারগুলো সম্পর্কে বলবেন?

উত্তর : প্লাস্টিক বা প্লাস্টিকে তৈরি বর্জ্যই সব থেকে বেশি। এটা শুধু বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীজুড়েই। পচনশীল আবর্জনা যে থাকে না তা নয়, তবে পচনশীল বলেই হয়তো একটা সময় পর আর দেখতে পাওয়া যায় না। কিন্তু প্লাস্টিক পচে না, তাই রয়ে যায়। আমাদের এখানে সব থেকে বেশি পাওয়া যায় খাবারের মোড়ক। তবে প্রতি বছর দুই ধরনের বর্জ্যের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয় প্রথম, দ্বিতীয় স্থান নিয়ে। সিগারেটের ফিল্টার পৃথিবীতে সব থেকে বেশি পাওয়া প্লাস্টিক-জাতীয় বর্জ্য। অনেকে হয়তো বলবেন, এটা তো পচনশীল। কথাটা অর্ধসত্য। এটাও প্লাস্টিক, যা মাটিতে দ্রুত মিশে যেতে পারে না। আমাদের এখানে সিগারেটের ফিল্টারকে ঠিক আবর্জনা হিসেবে ধরা হয় কি না সেটাই বলা মুশকিল। তার ওপর এটাকে প্লাস্টিকও বলতে হবে। আকারে ছোট হওয়ার কারণে একে আমরা অবহেলা বা না দেখে থাকার ভান করতে পারি। কিন্তু তাতে সত্যটা হারিয়ে যায় না বরং আড়াল হয়ে থাকে।আকারে ছোট হওয়ার কারণে এটাকে উপকূল বা অন্য কোনো জায়গা থেকে তুলে নিয়ে আসাও অনেকটা কঠিন। তাই আমাদের অভিজ্ঞতায় সিগারেটের ফিল্টারের সংখ্যা বেশি হলেও তুলে নিয়ে আসতে পারা বর্জ্যের মধ্যে খাবারের মোড়কই বেশি। সংখ্যার হিসাবে এ দুই জাতীয় বর্জ্য মোট সংগ্রহের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ। ওজনের দিক থেকে অন্য কিছু যেমন পিইটি বা পানি-জুস-তেলের বোতল ইত্যাদি।

প্রশ্ন : সাগর পরিচ্ছন্ন রাখতে কোন কাজগুলো জরুরি মনে করেন?

উত্তর : গণসচেতনতা। আমরা যদি শিশুর টিকাদান কর্মসূচি এতটা কার্যকর করতে পারি, তবে অন্য যেকোনো সমস্যাও সচেতনতার মাধ্যমে সমাধান করতে পারি। এখানে সরকারের একটা বড় ভূমিকা আছে। যেমন এ ধরনের কাজকে উৎসাহ দেওয়া। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী যারা, তারা বছরে এক দিনের জন্য হলেও এমন কাজে অংশগ্রহণ করতে পারেন। পাশের দেশ ভারতেই এমন উদাহরণ আছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সবারই স্বেচ্ছাসেবী অঙ্গসংগঠন আছে। তারাও মাসে একবার নিজ নিজ এলাকার খালবিল-নদীনালা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে পারে। এতে জনসাধারণের মধ্যে যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে তা অকল্পনীয়। এ সমস্যার গভীরতা ব্যাপক। সামাজিকভাবে এর সুরাহা করা না গেলে বিশদ আকারে এর সুফল পাওয়া অসম্ভব।

প্রশ্ন : আপনাদের এ কাজে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী?

উত্তর : শিক্ষিত মানুষের আগ্রহ কম। এখানে শিক্ষিত বলতে আমি আসলে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া বা পড়ছেন এমন মানুষের কথাই বলছি। সে তালিকায় আমি, আপনি, আমাদের বাবা-মা, শিক্ষক, নেতা সবাই চলে আসেন। মূলত সম্পদ বা টাকা যার বেশি তার আগ্রহই মনে হয় সব থেকে কম, আবার আমরাই ভোক্তা পিরামিডের ওপরের দিকে। আরও সরল করে বললে কোনো কিছু পুনর্ব্যবহার করার অনাগ্রহ, প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ এবং এর ব্যবস্থাপনা কঠিন করে ফেলে। আবার সামাজিকতার ভয়ে আমরা নিজেরাও খুব বেশি এগিয়ে আসি না। ধরে নিই পরিচ্ছন্নতা কর্মী তো আছেই, এটা তাদের কাজ। এ মনোভাব আদতে অসুন্দর।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা