শনিবারের হাসি
জোবায়ের রাজু
প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৩:১৫ পিএম
আমার চেহারা ভালো না হলেও ছবি ওঠে কিন্তু ঝাক্কাস। যে পোজেই সেলফি তুলি, অন্যরকম সুন্দর হয়। এই অন্যরকম সুন্দর ছবিগুলো ঘনঘন ফেসবুকে আপলোড করার বাতিক আমার পুরোনো। সবাই ধুমসে লাইক মারে আর কমেন্টের এলাহিকাণ্ড ঘটায়।
তেমনি এলাহিকাণ্ড ঘটানোর একটি ছেলে মিঠু খান। ফেসবুকে পরিচয়। এই ছেলে আমার চেহারার কঠিন ভক্ত। ছবি আপলোড করলেই লাইক আর সুন্দর সব কমেন্ট করে। একদিন মেসেঞ্জারে নক করল।
-হাই ভাইয়া।
-হ্যাঁ, মিঠু। ভালো?
-জি। আপনি তো পুরাই মডেল।
-হা হা হা।
-সত্যি বলছি। মডেলিং করতে পারেন।
-আমি তো মডেলিং করি।
-সত্যি?
-হ্যাঁ। তিনটি বিজ্ঞাপনের শুটিং শেষ করেছি। আরও চারটিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি।
-ওয়াও!
ঠাট্টা করে কথাটি বলেছি আর মিঠু সত্যি ভেবে বিশ্বাস করে ফেলল। মডেল তারকা হওয়ার যোগ্যতা আমার নেই। এ আমি বুঝি। আরেক দিন মেসেঞ্জারে নক করল মিঠু।
-ভাইয়া, আমি ভাগ্যবান।
-কেন?
-আমার মতো এই অধমকে আপনার মতো মডেল তারকার ফ্রেন্ডলিস্টে জায়গা দিয়েছেন।
-হা হা হা।
-ভাইয়া, আপনার করা বিজ্ঞাপনগুলো টিভিতে প্রচার হচ্ছে?
-এখনও হয়নি। হবে।
-কী কী পণ্যের মডেল হয়েছেন?
-জুস, ব্যাটারি, আর জুতার মডেল হয়েছি।
-বাহ।
আজকাল এমন সরল ছেলে হয় না। কত প্রশ্ন ওর। একটা বিজ্ঞাপনে কত টাকা দেয়, কীভাবে শুটিং করে, মডেলকন্যারা কি বাস্তবেও সুন্দর, মিঠুর এমন রকমারি প্রশ্নের বানে ভাসতে থাকি। বেচারা বুঝতেই পারছে না এসব সাজানো গল্পকথন। কথায় কথায় জানলাম মিঠুদের বাড়ি কৃষ্ণপুরে। কৃষ্ণপুর আমাদের গ্রাম থেকে কয়েক গ্রাম পরেই। মিঠুর আবদার আমি যেন তার বাড়ি যাই।
২.
আমি এখন কৃষ্ণপুরে। মিঠুদের বাড়িতে। আজ মিঠুর বড় ভাইয়ের ছেলের আকিকা প্রোগ্রামে আমাকে ইনভাইট করা হয়েছে। মিঠু আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে বন্ধুমহলে প্রচার করে দিয়েছে এ অনুষ্ঠানে একজন মডেল তারকা আসবে। সে মডেল তারকা স্বয়ং আমি। কিন্তু এটা যে একটা ভুয়া নিউজ, সেটা কেউ জানে না। আমাকে দেখে মিঠুর একদল মেয়ে কাজিন কাছে এসে নানান গল্পের আসর তুলে ফেলল। ছবি আর সেলফিও হয়ে গেল এরই মধ্যে। আমি একজন মডেল, এটা জেনে মিঠুর ভাইয়েরা বিশেষ গুরুত্ব দিলেন। বন্ধুমহলেও নানান কৌতূহল। সবাই মডেলকে একনজর দেখতে বেশ ব্যাকুল।
দুপুরে খানাপিনার আয়োজনে অতিথিদের ঢল। মিঠুর বড় ভাই আমাকে তার বন্ধুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে ঘর থেকে বাইরে ডেকে নিলেন। কিন্তু তার বন্ধুর দিকে তাকিয়ে আমি আকাশ থেকে পড়লাম। কারণ মিঠুর ভাইয়ের বন্ধুটি স্বয়ং আমার মেজো মামা।
মিঠুর বড় ভাই তার বন্ধুকে বললেন, ‘ও আমার ছোট ভাইয়ের ফ্রেন্ড। টিভিতে মডেলিং করে।’
মামা অবাক হয়ে বললেন, ‘কী আন্দাজে বকছিস, ও তো আমার ভাগ্নে। বড় আপার ছেলে। কিরে, তুই এখানে?’
মিঠুর বড় ভাই বললেন, ‘দূর পাগল। ও তোর ভাগ্নে হতে যাবে কেন? ও মডেল তারকা।’
আমার গা কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে। মামা এখানে আসবে জানলে আমি কি আসতাম?
মামা বললেন, ‘কিরে, এরা কী বলছে?’
আমি তখন ভীষণ নার্ভাস। মিঠুর বড় ভাই আর মিঠু আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মিঠু বলল, ‘ভাইয়া, উনি যা বলছেন, সত্য? আপনি ওনার ভাগ্নে?’
আর আমি এই প্রসঙ্গ পাল্টাব কী করে, সেই ফন্দি খুঁজছি।