রায়হান আবিদ
প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১২:২৬ পিএম
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১২:২৮ পিএম
সংগ্রহশালায় হরিনের কঙ্কালের সঙ্গে অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম
এটা কিসের কঙ্কাল? হাতি না ঘোড়া? এত এত কঙ্কাল দিয়ে কী হবে? এমন প্রশ্নই ভেটেরিনারি অনুষদের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের মনে আসে। প্রাণিকল্যাণ ও চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের প্রথমেই আয়ত্ত করতে হয় প্রাণীর কঙ্কালতন্ত্র। সার্জারি, মেডিসিন, ফিজিওলজির বিষয়গুলোয় দক্ষতা অর্জন করতে এ বিষয়ে জানা প্রয়োজন।
ভেটেরিনারি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা, গবেষণা ও প্রদর্শনীর জন্য দেশে প্রথমবারের মতো গয়াল ও আফ্রিকান কমন ইল্যান্ড কঙ্কাল প্রস্তুত করা হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি)। প্রাণীগুলোর কঙ্কাল প্রস্তুত করেছেন অ্যানাটমি অ্যান্ড হিস্টোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। এ পর্যন্ত তিনি ১৪টি প্রাণীর কঙ্কাল প্রস্তুত করেছেন।
বাকৃবির রিসার্চ সিস্টেম (বাউরেস) ও অর্থায়নে এবং বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার সহযোগিতায় ২০১৯ সাল থেকে অ্যানাটমি মিউজিয়ামের উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ হিসেবে উদ্যোগ গ্রহণ করেন অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। ১৪টি প্রাণীর কঙ্কালের মধ্যে গয়াল, আফ্রিকান কমন ইল্যান্ড, হাতি, জিরাফ, শুশুক, হরিণ, অ্যারাবিয়ান হর্স, বানর, খরগোশ, বিড়াল, কুকুর, টার্কি হাঁস ও মুরগি মিউজিয়ামে প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে। এ ছাড়া জলঢোঁড়া ও লেঙ্গুরের কঙ্কাল বানানোর কাজ চলমান।
কঙ্কাল তৈরির বিষয়ে অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম জানান, পূর্ণবয়সি প্রাণী মারা যাওয়ার পরই মূলত কঙ্কাল তৈরির ধাপ শুরু হয়। প্রাণীর দেহ থেকে চামড়া ও মাংসপেশি যতটুকু সম্ভব আলাদা করা হয়। অস্থিগুলো রাসায়নিক দিয়ে সেদ্ধ করে রোদে শুকাতে হয়। আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় কঙ্কাল তৈরি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। শুকানো শেষে অস্থির স্থায়িত্বকাল বৃদ্ধির জন্য বার্নিশ করা হয়। অস্থিগুলো সাজিয়ে প্রস্তুত হয় পূর্ণাঙ্গ কঙ্কাল।
কঙ্কালের মিউজিয়ামের গুরুত্ব নিয়ে অধ্যাপক রফিক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে থেকেই অ্যানাটমি মিউজিয়াম রয়েছে। তবে মানসম্পন্ন শিক্ষা ও গবেষণার লক্ষ্যে বিভিন্ন জাতের দেশি-বিদেশি, গৃহপালিত ও বন্য প্রাণীর কঙ্কাল সংযোজন করা হচ্ছে। ভেটেরিনারি শিক্ষার্থীদের প্রাণীর বিভিন্ন অঙ্গ, অস্থি ও মাংসপেশির অবস্থান সম্পর্কে ধারণা দিতে ভূমিকা রাখবে সংগ্রহশালাটি।
ভেটেরিনারি চিকিৎসকদের গৃহপালিত ও বন্য প্রাণীর চিকিৎসা করতে হয়। তাদের প্রাণীর অ্যানাটমি সম্পর্কে ধারণা রাখতে হয়। সার্জারি, মেডিসিন, ফিজিওলজির বিষয়গুলোয় দক্ষতা অর্জন করতে পারবে না। বিলপ্তুপ্রায় প্রাণীদের নিয়ে গবেষণা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতেও মিউজিয়ামটি তৈরি করা হচ্ছে। আরও অর্থায়ন পেলে বড় পরিসরে মিউজিয়ামটির উন্নয়ন ও সংগ্রহ বাড়াতে পারব।
দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আশিকুজ্জামান বলেন, প্রথম বর্ষে থাকতে কঙ্কালগুলো দেখে খুবই অবাক হয়েছিলাম। মানুষের যেমন অস্থি থাকে তেমন প্রাণীরও থাকে তবে গঠন ও সংখ্যায় ভিন্নতা রয়েছে। প্রতিটি অস্থি হাতে ধরে ধরে শেখানো হয়। আমার প্রথমে গরু ও ঘোড়ার কঙ্কাল দেখে খুবই অবাক লেগেছিল। অনেকটা মিল দুইয়ের কঙ্কালের মাঝে। তবে শিং দেখেই চিনতে পেরেছিলাম কোনটা কী। প্রথম দিন বিশালাকৃতির হাতির কঙ্কাল দেখে তো আবাক চোখে তাকিয়ে ছিলাম!