× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মৈমনসিংহ গীতিকায় খাদ্য ও প্রাণ প্রকৃতি

অহিদুর রহমান

প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৩:১৬ পিএম

আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৩:১৮ পিএম

অলঙ্করণ: গুপু ত্রিবেদী

অলঙ্করণ: গুপু ত্রিবেদী

আমাদের লোক-সংস্কৃতির ঐতিহ্যের হিরন্ময় স্মারক মৈমনসিংহ গীতিকা। চন্দ্রকুমার দের সংগ্রহ ও দীনেশচন্দ্র সেনের সম্পাদনায় গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৯২৩ সালে। চলতি বছর মৈমনসিংহ গীতিকার প্রকাশনার শতবর্ষ পূর্ণ হলো। এই গীতিকায় খাদ্য ও প্রাণ প্রকৃতির বর্ণনা নিয়ে বিশেষ লেখা...

মৈমনসিংহ গীতিকার চারণভূমি, মহুয়া মলুয়া, কাজলরেখা, দেওয়ানা মদিনা, চন্দ্রাবতী, বিদ্যাসুন্দর আর হাওর-বাঁওড়, নদী-নালা ঘেরা অলি-আউলিয়া আর বাউলের জনপদ নেত্রকোণা। এ অঞ্চলের মানুষের দুঃখ-সুখ, হাসি-কান্না, মননমুক্তির প্রবল আকাঙ্ক্ষা, কৃষি ও কৃষকজীবনের হৃদয়ান্তগত ভাবনাগুলো মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে মৈমনসিংহ গীতিকার কাহিনীর  পাতায় পাতায়। 

মৈমনসিংহ গীতিকায় পাহাড়, নদী, জঙ্গল, হাওর প্রভৃতির সমাবেশে পূর্ব ময়মনসিংহ বিচিত্র ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল। উত্তরে গারো পাহাড়, জয়ন্তা পাহাড় শ্রেণি, পূর্বে সুবিশাল হাওর, পাহাড়ের গা ঘেষে যেমন নেমেছে নদী তেমনি নেমেছে হিংস্র সর্প ব্যাঘ্র সংকুল ঘন অরণ্যভূমি। ঝিল ও বাঁওড়ে কুড়া পাখির গুরুগম্ভীর শব্দে নিনাদিত আকাশ, শালি ধানের ক্ষেত, বিন্নি ধানের খই, কবরী কলা, গামছা বাঁধা দই, সুরভিত কেয়াবন সব মিলে এক বিচিত্র বর্ণিল নিসর্গ ছায়া সুনিবিড় শান্তির পৃথিবী। মহুয়ার পালায় উনরা বাইদ্যা নয়াবাড়ী বাইন্দা কত বৈচিত্র্যময় সবজি চাষ করেন: মহুয়ার পালা বর্ণনায় একটি তালিকা পাওয়া যায়- নয়া বাড়ী লইয়ারে বাইদ্যা লাগাইল বাইঙ্গন।/ সেই বাইঙ্গন তুলিতে কইন্যা জুড়িল কান্দন।।/ নয়া বাড়ী লইয়ারে বাইদ্যা লাগাইল কচু।/ সেই কচু বেইচ্যা দিয়াম তোর হাতের বাজু।।/ নয়া বাড়ী লইয়ারে বাইদ্যা লাগাইল কলা।/ সেই কলা বেইচ্যা দিয়াম তোর গলার মালা।।

মৈমনসিংহ গীতিকার মলুয়ার কাহিনীতে চান্দবিনোদ মলুয়ার কাহিনী নেত্রকোণা অঞ্চলে মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করে। কাহিনীর নায়ক বিনোদ ছিল কুড়া শিকারি। কুড়া শিকারি বিনোদের প্রেমে পড়ে মলুয়া। বিনোদ কুড়াকে ভালোবাসত। তাই মলুয়ার মনে আশা জাগে কুড়া পাখি হওয়ার। তাই মলুয়ার কণ্ঠে শোনা যায়- আমি যদি হইতাম কুড়া যাইতাম তার সনে।/ তার সঙ্গে থাইক্যা আমি ঘুরতাম বনে বনে।।

গ্রামের নারীরা শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার সময় সঙ্গে করে অনেক কিছু খাবার নিয়ে যেত, মলুয়া শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার সময় অনেক কিছুই সঙ্গে করে নিয়ে যায়Ñ ঝাইল পেটেরা দিল সঙ্গেতে করিয়া।/ সজ মসল্লা দিল থলিতে ভরিয়া।।/ আরো সঙ্গে দিল মাও চিকনের চাল।/ তৈল সিন্দুর দিল খৈয়া বিন্নির ধান।।

মৈমনসিংহ গীতিকায় এ অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি ও খাদ্যের বর্ণনায় কোথাও হাওরের সুবিশাল জলাভূমি, কোথাও সমতল কৃষিভূমির কথা বিবৃত হয়েছে। এসব গল্পের পরতে পরতে মিলে আমাদের নিত্যদিনের জীবনের গল্প। 

মৈমনসিংহ গীতিকায় নদীর কথা, হাওরের কথা, মহুয়া ও নদের চাঁদের পালিয়ে থাকার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। বিনোদ সুন্দরী মলুয়ার প্রেমে পড়ে মলুয়ার বাড়িতে আতিথেয়তা গ্রহণ করে। মলুয়া যেসব খাবার রান্না করে পরিবেশন করেন তার একটি বর্ণনা আমরা পাইÑ মানকচু ভাজা আর অম্বল চালিতার।/ মাছের সরুয়া রান্ধে জিরার সম্বার।।/ কাইটা লইছে কই মাছ চরচরি খারা।/ ঝাল কইর‌্যা রান্ধে বেনুন কালাজিরা।।/ একে একে রান্ধে বেনুন ছত্রিশ জাতি।/ শুকনা মাছ পুইড়া রান্ধে আগলবেসাতি।।/ পাতা পিঠা বরা পিঠা চিত চন্দ্রপুলি। / পোয়াচই খাইল কত রসে ঢলঢলি।।/ বাটাভরা সাচি পান লং এলাচি দিয়া।/ পাঁচ ভাইয়ের বউ দিছে পান সাজাইয়া।। 


এসব খাবার প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করা হতো। প্রকৃতি ও খাদ্য একসঙ্গে গাঁথা। প্রকৃতিকে কেন্দ্র করে গান, কবিতা, গল্প, অনুষ্ঠান, নৌকাবাইচ, নৌকা ভ্রমণ- কত কিছুই না রচিত হতো, আয়োজন হতো। প্রকৃতির অনেক উপকরণ হারিয়ে যাওয়া মানে সংস্কৃতি হারিয়ে যায়, গান, বিনোদন হারিয়ে যায়, ভাষা হারিয়ে যায়। কমলার কাহিনীতে চিকন গোয়ালিনির বর্ণনায়- গেরামে আছিল এক চিকন গোয়ালিনি।/ যৌবনে আছিল যেমন সবরী কলা চিনি।।/ বড় রসিক আছিল এই চিকন গোয়ালিনি।/ এক সের দৈয়েতে দিত তিনসের পানি।। 

কাজলরেখা কাহিনীতে সুঁচরাজা অতিথিদের জন্য রান্নার আয়োজন করলে নকল রাণী রান্না করেন চালতার অম্বল, ডেউয়ার ঝাল, আলবচন কচুশাক, কিন্তু কাজলরেখা রান্না করে বৈচিত্র্যময় দীর্ঘতালিকার খাদ্য; যেমন: মসল্লা পিটালি লইল পাটাতে বাটিয়া।/ মানকচু লইল কন্যা কাটিয়া কুটিয়া।/ জোড়া কইতর রান্ধে আর মাছ নানা জাতি। / পায়েস পরমান্ন রান্ধে সুন্দর যবতী।।নানা জাতের পিঠা করে গন্ধে আমোদিত। চন্দ্রপুলি করে কন্যা চন্দ্রের আকিরত।। /চই, চাপড়ি, পোয়া সরস রসাল।/ তা দিয়া সাজাইল কন্যা সুবর্ণের থাল।।

ময়মনসিংহ ও নেত্রকোণা অঞ্চলে কত বাহারি নামের পিঠাই না তৈরি করে গ্রামীণ নারীরা! ময়মনসিংহ-নেত্রকোণা অঞ্চলে তৈরিকৃত পিঠার নাম হলোÑ ধামা পিঠা, পুলি পিঠা, শাহী পিঠা, মেরা পিঠা, কেক পিঠা, পাটিসাপটা, গাজরের পাটিসাপটা, নারকেলের পিঠা, মলপিঠা, মালপোয়া, চ্যাপা পিঠা, ফুল পিঠা, দুধপুলি, শিঙাড়া পিঠা, সেমাই পিঠা, পাপড়া পিঠা, আউরাকেশী, শিরকাটা, শিল পিঠা, ছাচ পিঠা, ছিটকা পিঠা, চুটকি পিঠা, চাদ পাকন, সুন্দরী পাকন, পাতা পিঠা, পানতোয়া, মালাই পিঠা, মুঠি পিঠা, আন্দশা, কুলশি, কাটা পিঠা, ক্ষীরকুলি। প্রসঙ্গত, মৈমনসিংহ গীতিকার মলুয়া পালা থেকে কিছু অংশ উদ্ধৃত করা হলো- ‘আগরাঙ্গ্যা সাইলের খেত পাক্যা ভূমে পড়ে/ পন্থে আছে বইনের বাড়ী যাইব মনে করে।।/ মায়ের পেটের বইন গো তুমি শুন আমার বাণী।/ শীগারে যাইতে শীঘ্র বিদায় কর তুমি।/ ঘরে ছিল সাচি পান চুন খয়ার দিয়া।/ভাইয়ের লাগ্যা বইনে দিল পান বানাইয়া।।/ উত্তম সাইলের চিড়াগিষ্টেতে বান্ধিল/ ঘরে ছিল শবরি কলা তাও সঙ্গে দিল।।

মধ্যযুগে বাংলাসাহিত্যে, বিশেষ করে, মঙ্গলকাব্যে বাংলাখাদ্যের বিস্তর বর্ণনা পাওয়া যায়। মৈমনসিংহ গীতিকায় খাদ্যের যে বর্ণনা পাওয়া যায়, মধ্যযুগেও খাদ্যের একই জাতের বর্ণনা পাওয়া গেলেও তখন খাদ্যের রন্ধনশৈলী ছিল আরও উন্নত ও রাজসিক। বরিশালের ফুল্লশ্রী গ্রামের কবি বিজয়গুপ্তের মঙ্গলকাব্য পদ্মপুরাণে শিবপত্নী পার্বতী কর্তৃক পঞ্চাশ জাতের খাবার তৈরির বর্ণনা পাওয়া যায়Ñ রন্ধন করিল পত্নী আপনার মন।/ পঞ্চাশ ব্যঞ্জন অন্ন হইল তখন।।

চাঁদ সদাগরপত্নী সোনেকা কর্তৃকও পঞ্চাশ ব্যঞ্জন রান্নার কথা আছেÑ স্নান করিয়া সোনাই চড়াইল রন্ধন।/ নিরামিষ আমিষ রান্ধে পঞ্চাশ ব্যঞ্জন।। 

মধ্যযুগে বাংলার সওদাগর পরিবারের আমিষ-নিরামিষ জাতীয় এসব রান্নার মধ্যে নারকেল দিয়ে মুগ, কলাইয়ের বড়া দিয়ে সুকতা ও শাক, নারকেল দিয়ে ঝিঙা, ঘি ও আদা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের শাক বেগুন সেলুফা, ঢেঁকির কড়ি দিয়ে কাঁঠালের বিচি, খেসারির ডাল দিয়ে কাঁঠালের মোচা, হিঙ্গ মরিচ দিয়ে সরিষার শাক, নন্দন বেগুন দিয়ে ছোট চেঙ্গ মাছের ঝোল, সঙ্গচোর আলু দিয়ে বড় ইচা মাছ, লাউ আলু ও কচু দিয়ে বড় কই মাছ, চেঙ্গ পোড়া দিয়ে আমের বউল, কলার মূল দিয়ে পীপলিয়া শোল মাছ,  পাকা তেঁতুল দিয়ে খেলৈর, ধুম নিধুম দিয়ে চৈইর ঝাল রান্ধার কথা আছে। 

আঠাশ শতকের কবি ভারতচন্দ্র অন্নদামঙ্গল কাব্যে সামন্ত পরিবারের ব্যঞ্জন ও রান্নাপদ্ধতির বর্ণনা তুলে ধরেছেন। ঋবনন্দ মজুমদারের স্ত্রী পদ্মমুখী এসব ব্যঞ্জন প্রস্তত করেন। কবির ভাষায়Ñ ঘাস্যমুখে পদ্মমুখী আরম্ভিল পাক।/ মাড়শাড়ি খণ্ডভাজা নানামত শাক।।/ ডালি রান্ধে ঘনতর ছোলা অরহরে।/ মুগ মাষ বরবটী বুটল বটরে।। 

পনেরো, ষোলো, আঠারো শতকের তিনজন বিখ্যাত কবির কাব্যে বিভিন্ন ব্যঞ্জনের নাম ও রন্ধনপ্রণালীর যে তালিকা পাওয়া যায় তাতে অনেকাংশে মিল পরিলক্ষিত হয়। অভিজাত পরিবারের মতো গৃহস্থ পরিবারের ব্যঞ্জনের এত বৈচিত্র্য ছিল না। আমিষ ও নিরামিষ জাতীয় অনেক ব্যঞ্জনের মিল ছিল।

মাছে-ভাতে বাঙালি। মাছ না হলে আমাদের আর চলে না।  মাছের আছে অনেক গল্প, মাছ নিয়ে একটি লোকিক ছড়াÑ

অনেক রকম মাছ ধরেছি/একে একে বলি/ কৈ মাগুর শিং গজার আরো আছে কানফোলি।/ ভেউস ভ্যকুত বেলে মিড়কা/ পালুয়া বাচা আর ভাঁড়কা, কাগতি ছলুন বোলা/ মাছের মধ্যে মাহবুল্লা।/ কাঁটা পাতাসি ময়া পিঠালি/ বালু চারটা কুঁকড়ি চেলি/ তেল ঘাগড়া আর রীটা।/ ঘেইড়ার মাছটা খেতে মিঠা।।/ হেলতা পিয়ালি পুঁই দাঁড়ি।/ বাম কুচি আছে আর চিংড়ি।।/ তারে ঝালে ঝোলে খায়।/  ভাল ভদ্রলোকে লেয়।।

মৈমনসিংহ গীতিকার নায়িকারা নয়, মধ্যযুগের কবিদের স্ত্রীরাই নয়, বর্তমান কালের গ্রামের নারীরা যুগে যুগে প্রাকৃতিক এসব খাবারকে সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও জীবিকার জন্য বেছে নিয়েছে। প্রাকৃতিক খাদ্যসম্পদ আছে বলেই জীবন সংগ্রামে টিকে আছে গেন্দুর মা ও জরিনারা । এই বুনোশাক কুড়িয়ে বাজারে, বাসাবাড়িতে বিক্রি করে জীবন চালাচ্ছেন গেন্দুর মা, জরিনা, শুক্কুরী, আয়শা, আমেনা, আলেহা, মরিয়ম, চায়না, ময়না, নুরজাহান, বিলাসী, কাজলীসহ ময়মনসিংহ ও নেত্রকোণা অঞ্চলের ২১ জন নারী। 

ময়মনসিংহ ও নেত্রকোণা অঞ্চলের এসব নারী বনজঙ্গলে, ডোবা খানাখন্দ পাড়ি দিয়ে, খালবিলের জলে, নদী পেরিয়ে বিপদসংকুল জায়গা বিচরণ করে কুড়িয়ে আনেন এসব বিষমুক্ত পুষ্টিকর খাদ্যসম্পদ। অধিকাংশ নারীর বাড়ি ব্রহ্মপুত্র নদের আশপাশে বিদ্যাগঞ্জ, মুক্তাগাছা, চরকালীবাড়ী, দাপুনিয়া, বাড়েরা, নেত্রকোণার মৌগাতি, সাকুয়ার অধিবাসী। এসব শাকের মধ্যে কলমি শাক, হেলেঞ্চা শাক, গোল হেলেঞ্চা শাক, আগ্রা শাক, কচু শাক, গিমাই শাক, কচুর লতি, থানকুনি পাতা, কলার মোচা, দলকচু, সাঞ্চি, বেত শাক, কলার মোচা, ডুমুর, বউটুনি, শাপলা, ঘ্যাটকল, পেপুল তেলাকচু, সনচি, কাটানটি, ব্রাহ্মি, তিত বেগুন, কাটাকচু, বন কচু, ডুমুর, কলার মোচা বন আলু। বনকলার থোড় ও মোচা, কলমি, থানকুনি, বাঁশের কোড়ল, তেলাকুচা, ডেফল, ডেওয়া, গিমা, ঘৃতকাঞ্চন, কালমেঘ, শতমূলীর মতো বনজ খাদ্য-ফল-ঔষধি বিক্রি হতে দেখা যায় ময়মনসিংহ শহরের এই জরিনাদের কাছে। বাংলাদেশের খাল-বিল, নদী-নালা, পতিত জমি, বাড়ির আশপাশেই রয়েছে এসব উদ্ভিদ বৈচিত্র্যগুলো; যা মানুষের খাদ্যদ্রব্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়, আবার যেগুলো মানুষ খায় না সেগুলো পশুখাদ্য হিসেবেও স্বীকৃত। 

নাইল্যা-গিমা-কলমি নানা জাতের তিতা শাক খাওয়ার ভেতর দিয়ে বৈশাখ মাসে শুরু করে মৌসুমি শাক বিক্রি। বর্ষার দিনে হাওরে মেলে শালুক, পানি ফল, ঢ্যাপ, কইর‌্যালি আর মাতুক। চৈত্র মাসের সংক্রান্তিতে তিতা স্বাদের শাক খাওয়ার নিয়ম। প্রতিটি ঋতুর সঙ্গে কুড়িয়ে পাওয়া খাদ্যজগতের সম্পর্কটি দিনে দিনে আর ঠিক থাকছে না।

ঋতুর যেমন বদল ঘটছে, তেমনি হারিয়ে যাচ্ছে কুড়িয়ে পাওয়া খাদ্যের বৈচিত্র্য। কুড়িয়ে পাওয়া খাদ্যভান্ডার গ্রামীণ জনগণের দুর্দিন ও দুর্যোগের সাথী। বলা হয়ে থাকে, অভাব, দুর্দিন, মঙ্গা, নিদান ও দুর্ভিক্ষের কাল পাড়ি দেয় গরিব মানুষ পথঘাটের কচু-ঘেচু খেয়ে। সত্যি হলেও এসব অবহেলিত কচু-ঘেচুই বাংলাদেশের অভাব ও দুর্যোগকাল পাড়ি দিতে শক্তি, আহার ও পুষ্টি জোগায়, আয়রনের অভাব পূরণ করে। হাওর জলাভূমি থেকে শালুক, কুঁই কুড়িয়ে পুড়িয়ে খায় অনেকেই।

প্রতিদিন একজন তিনশ থেকে চারশ টাকার শাক বিক্রি করে। ময়মনসিংহ শহরের সাংকিপাড়া বাজার, বউবাজার, মেছুয়া বাজার, মিন্টু কলেজের সামনে রেললাইনে, নেত্রকোণার ঘোষের বাজারে শাক নিয়ে আসে গ্রামের এসব নারী। কাজলী বলেন, ‘আমাদের লাইগা বাজারে কোনো জায়গাও নাই। যে বেলা যেহানে পারি বইয়া পরি।’ এভাবেই চলছে এই পুষ্টি বিক্রেতাদের জীবন।

মৈমনসিংহ গীতিকার মতো অনেক কাহিনী এখনও চোখে পড়ে আমাদের সমাজের পরতে পরতে। আমরা তাদের চিনি না। আমাদের শেকড়ের কাছে যেতে হবে। লোকজীবনের কথা তুলে আনতে হবে। তবেই আমরা সাহিত্যে সমৃদ্ধ হবো।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা