বিয়ের আগে দুই পক্ষের সাক্ষাৎ থেকে পাকা কথা পর্যন্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বরকনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা বিষয়টি সবাই এড়িয়ে যায়। কিন্তু সুন্দর বৈবাহিক জীবনের জন্য এর গুরুত্ব রয়েছে
বিয়ে একটি সমাজস্বীকৃত পবিত্র সম্পর্ক। তবে দাম্পত্য সম্পর্কে বিভিন্ন কারণে ফাটল দেখা দেয়। শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা কিংবা রোগব্যাধির কারণে অনেক সময় বিয়ের পর দুজনের মধ্যে ঝামেলার সৃষ্টি হয়। বিয়ের আগেই যদি কয়েকটি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা যায় তাহলে আর দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে থাকতে হয় না। এ কারণে বিয়ের আগে হবু বরকনের কয়েকটি মেডিকেল পরীক্ষা করা জরুরি। জেনে নিন কোন পরীক্ষাগুলো করাবেন-
হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিস : পরীক্ষাটির মাধ্যমে বর বা কনে থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত কি না, কিংবা এ রোগের বাহক কি না জানা যায়। বর ও কনে দুজনই এ রোগের বাহক হলে তাদের সন্তানের থ্যালাসেমিয়ার মতো দুরারোগ্য ব্যাধি হতে পারে। এ রোগে আক্রান্তের রক্তে লোহিত কণিকা উৎপাদন কমে যায়, ফলে হিমোগ্লোবিন কমে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। নির্দিষ্ট সময় পর পর ব্লাড ট্রান্সফিউশন করে অ্যানিমিয়া নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এ ছাড়া বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন করা যায় কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটা খুবই ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য একটি প্রক্রিয়া। স্বামীস্ত্রী উভয়েই যদি থ্যালাসেমিয়ার বাহক হয়, তাহলে তাদের সন্তানের ‘থ্যালাসেমিয়া মেজর’ হওয়ার ঝুঁকি ২৫ শতাংশ। যদি স্বামীস্ত্রীর কোনো একজন বাহক হয়, তবে সন্তানের থ্যালাসেমিয়া হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। দুজন বাহকের মধ্যে বিয়ে হলে সন্তানের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
ব্লাড গ্রুপিং এবং আরএইচ টাইপিং : বরকনের রক্তের গ্রুপ একই হলে সন্তানধারণে কোনো সমস্যা হয় না। তবে রক্তের গ্রুপের রেসাস বা আরএইচ ফ্যাক্টর খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় (অর্থাৎ রক্তের গ্রুপ পজিটিভ নাকি নেগেটিভ)। কেননা মা আরএইচ নেগেটিভ, কিন্তু বাবা আরএইচ পজিটিভ হলে অনাগত সন্তান পেটের মধ্যে থাকা অবস্থায় ইরাইথ্রোব্লাস্টোসিস ফিটালিস নামে মারাত্মক প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে মা আরএইচ নেগেটিভ, কিন্তু বাবা আরএইচ পজিটিভ হলেও প্রথমবার গর্ভধারণের সময় থেকেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিলে সুস্থ সন্তান জন্ম দেওয়া সম্ভব।
যৌনবাহিত রোগ শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা : এইডস, সিফিলিস, গনোরিয়া, হেপাটাইটিস বি, সি ইত্যাদি মারাত্মক রোগ স্বামীস্ত্রীর যৌনমিলনের মাধ্যমে একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়ায় এমন রোগ নিয়ে কথা বলতে সবার মধ্যেই প্রচণ্ড অনীহা। অথচ এ রোগগুলো নিয়েই সবচেয়ে বেশি কথা বলা উচিত আমাদের। যেহেতু HIV পজিটিভ মানেই এইডস নয় এবং হেপাটাইটিস বি ও সি নিয়ন্ত্রণে রাখার সুযোগ আছে, তাই বিয়ের আগেই এ নিয়ে খোলাখুলি কথা বলা উচিত। ঠিকমতো চিকিৎসা করলে এসব রোগ নিরাময় করা সম্ভব।
বন্ধ্যত্ব পরীক্ষা : বন্ধ্যত্ব সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে বন্ধ্যত্বের জন্য নারীকে দায়ী করা হয়; যা একেবারেই সঠিক নয়। তাই বিয়ের আগে পাত্রপাত্রী উভয়েরই বন্ধ্যত্ব পরীক্ষা করা উচিত।
বংশগত রোগের পরীক্ষা : বংশগত রোগগুলো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বিস্তার লাভ করে। তাই বিয়ের আগে, বিশেষ করে নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়ের আগে বংশগত রোগের পরীক্ষা করানো উচিত।
ক্রনিক রোগ স্ক্রিনিং : ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা ইত্যাদি রোগের পরীক্ষা করানোর মাধ্যমে পাত্রপাত্রী দুজনেরই জেনে নেওয়া উচিত কেউ এসবে ভুগছে কি না এবং অন্যকে জানানো উচিত।
মানসিক রোগ : অনেকেই ভেবে থাকেন বিয়ে করলেই মানসিক রোগ ঠিক হয়ে যাবে, যা একেবারেই সঠিক নয়। সিজোফ্রেনিয়া, ডিপ্রেশন, বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার ইত্যাদি মানসিক রোগ বিয়ের আগেই শনাক্ত করে চিকিৎসা করানো উচিত এবং মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক সময়ে তাদের বিয়ে দেওয়া উচিত।