নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ
আসমাউল হুসনা
প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ ১৪:০৫ পিএম
১৫২ দেশের ৮ হাজার ৭১৫টি দলকে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করল বাংলাদেশের ‘টিম ভয়েজার্স’
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (নাসা) আয়োজিত ইন্টারন্যাশনাল স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে হ্যাটট্রিক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ। এবার ১৫২ দেশের ৮ হাজার ৭১৫টি দলকে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করল বাংলাদেশের ‘টিম ভয়েজার্স’
‘নাসা ইন্টারন্যাশনাল স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ-২০২৩’-এর বেস্ট স্টোরি টেলিং ক্যাটাগরিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশের টিম ভয়েজার্স। এ নিয়ে এ প্রতিযোগিতায় টানা তিনবার এবং মোট চারবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) দশমবারের মতো এ প্রতিযোগিতার বাংলাদেশ পর্বের আয়োজন করে।
চার ধাপের ‘অ্যাকুয়া এক্সপ্লোরার’ গেম বানিয়ে নাসার বেস্ট স্টোরি টেলিং ক্যাটাগরিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে দলটি। রাজশাহী বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় টিম ভয়েজার্সের টিম লিড খালিদ সাকিব। তিনিই লিখেছেন মূল গল্পটি। পুরো প্রক্রিয়ায় গবেষণা সহযোগী ছিলেন ফাহমিদা আকতার। ঘটনাটি মোবাইল অ্যাপে তুলে ধরেন আবদুল মালেক। এ ছাড়া এ কাজে ইউআইইউএক্স নকশাকার ছিলেন মো. সাখাওয়াত হোসেন আর লেভেল ডিজাইনার মো. আতিক।
এবারের প্রতিযোগিতায় ১৫২ দেশ থেকে ৩০ ক্যাটাগরিতে ৮ হাজার ৭১৫ দলের ৫৭ হাজার ৯৯৯ জন বিভিন্ন বয়স, পটভূমি, আগ্রহ ও দক্ষতার ভিত্তিতে অংশগ্রহণ করেন। যা এখন পর্যন্ত নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জের সবচেয়ে বড় আয়োজন। বিশ্বের মোট ৫ হাজার ৫৫৬ প্রজেক্টের মধ্যে বাংলাদেশ অতুলনীয় উদ্ভাবন প্রদর্শন করেছে; যা মহাকাশ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে দেশের উদীয়মান প্রতিভার অনন্য দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে। টিম ভয়েজার্সের প্রজেক্টের মূল প্রতিপাদ্য ‘এভরিথিং স্টার্টস উইথ ওয়াটার’। পৃথিবীতে ৩৭০ কুইন্টিলিয়ন গ্যালন পানি রয়েছে, তবে এর মধ্যে আমাদের ব্যবহার্য নিরাপদ পানির পরিমাণ শুধু ০ দশমিক ০১ শতাংশ। তাদের মিশন ছিল পৃথিবীতে সম্পূর্ণ পানিপ্রবাহের পথ বোঝানোর জন্য একটি দৃশ্যাত্মক সরঞ্জাম তৈরি করা, যা ছাত্রছাত্রীদের পৃথিবীর সিস্টেমে পানির প্রবাহপথ এবং এ অমূল্য সম্পদ কীভাবে আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে, তা বোঝানো।
টিম ভয়েজার্সের অন্য সদস্যরা হলেন মো. আবদুল মালেক, মো. সাখাওয়াত হোসেন, মোসা. ফাহমিদা আক্তার ও মো. আতিক। দলনেতা মো. খালিদ সাকিব বলেন, ‘ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করা থেকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া- এ যাত্রাটা এত সহজ ছিল না আমাদের জন্য। তবে এখন বিশ্বদরবারে দেশের নাম তুলে ধরতে পেরে আমরা প্রত্যেকেই অনেক গর্বিত, আলহামদুলিল্লাহ। এত বড় একটা অর্জনে সব সময় আমাদের পাশে থাকায় বাংলাদেশ পর্বের আয়োজক বেসিস কর্তৃপক্ষকে অসংখ্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা।’
নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ-২০২৩-এর বাংলাদেশ পর্বের আহ্বায়ক এবং বেসিসের পরিচালক তানভীর হোসেন খান বলেন, ‘এ বিশ্বজয় আমাদের সৃজনশীলতা এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতার প্রমাণ। বাংলাদেশ আবারও দেখিয়েছে বৈশ্বিক মঞ্চের সর্বোচ্চ স্তরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কীভাবে বিজয় ছিনিয়ে আনতে হয়। আমরা আমাদের চ্যাম্পিয়নদের জন্য অত্যন্ত গর্বিত এবং তাদের কঠোর পরিশ্রমের জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি।’ নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ-২০২৩ বাংলাদেশ পর্বের উপদেষ্টা ছিলেন আরিফুল হাসান অপু ও মাহদী-উজ-জামান।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যারোনটিকস অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্র্রেশন (নাসা) আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বের ১৫২ দেশের প্রযুক্তিবিদ, বিজ্ঞানী, ডিজাইনার, আর্টিস্ট, শিক্ষাবিদ, উদ্যোক্তার মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রের মেধাবী তরুণ একত্র করে বৈশ্বিক সমস্যায় উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজে বের করার লক্ষ্যে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এরই অংশ হিসেবে এ বছরের অক্টোবরে বেসিসের উদ্যোগে বাংলাদেশের নয়টি শহরে (ঢাকা, চট্রগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা) বাংলাদেশ পর্বের আয়োজন করেছিল।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘লুনার ভিআর প্রজেক্ট’ বেস্ট ইউজ অব ডেটা ক্যাটাগরিতে চাঁদে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা দেবে এমন ভার্চুয়াল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘টিম অলীক’। ২০২১ সালে ‘বেস্ট মিশন কনসেপ্ট’ ক্যাটাগরিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এবং বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (বাউয়েট)-এর সম্মিলিত দল ‘টিম মহাকাশ’ এবং ২০২২ সালে ‘টিম ডায়মন্ডস’ ‘সবচেয়ে অনুপ্রেরণামূলক’ বিভাগে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়।