আনাম মাহমুদ
প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১২:২২ পিএম
ফুকেটের সৈকতের সৌন্দর্য পর্যটকদের মুগ্ধ করবেই
যেহেতু প্রাইভেট চাকরি করি, ছুটিছাটা মিলানো মুশকিল। তাই ঈদছাড়া বড় ধরনের ছুটি মিলানো কষ্টের। আমি মূলত চেষ্টা করি গ্রুপে ঘোরার, কিন্তু ছুটিছাটা মিলানোটা টাফ আমার জন্য। তাই সময় পেলে একাই বেরিয়ে পড়ি। একটা ট্যুরের প্ল্যান করলে অনেক ফ্রেন্ডস এসে বলবে, ‘আমিও যাব, আমিও যাব’।
কিন্তু ফাইনালি আর কেউ যেতে পারে না। আবার যাওয়ার পর কেউ কেউ বলবে, ‘ভাই একবার বলতেন আমিও যেতাম’। যাই হোক, একা ঘোরার কিন্তু একটা মজাই আলাদা!! বাচ্চু ভাইয়ের একটা গানের লাইন মনে পড়ে যায়- ‘সবি হবে অগোচরে জানবে না কেহ’।
যথারীতি যাওয়ার দিন। আর হ্যাঁ ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইটের জন্য অবশ্যই ২.৫-৩.০০ ঘণ্টা আগে এয়ারপোর্টে যেতে হয়। থাই-লায়ন মূলত বাংলাদেশে নতুন চালু করেছে। এদের ফ্লাইট রাত ২টা ৩০ মিনিটে ছাড়ে। সাধারণত বাংলাদেশের বিমানগুলো সুবর্ণভূমিতে ল্যান্ড করে। তারপর ওইখান থেকে ৪৫ মিনিটের ড্রাইভে ডংমুয়াংয়ে এসে ডোমেস্টিক ফ্লাইট ধরতে হয়। কিন্তু এই ফ্লাইটের একটা সুবিধা ডোমেস্টিকের জন্য এয়ারপোর্ট পরিবর্তন করা লাগে না। এটা ল্যান্ড করেই ডংমুয়াংয়ে। ২.১৫ ঘণ্টায় পৌঁছে গেলাম ব্যাঙ্ককের ডংমুয়াং এয়ারপোর্টে। এয়ারপোর্টে নেমেই মনটা জুড়িয়ে গেল। বিশাল এয়ারপোর্ট, খুব সুসজ্জিত এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। ল্যান্ডিং থেকে ইমিগ্রেশন অনেক দূরে। প্লেনেই ফরম দিয়েছিল পূরণ করে রেখেছিলাম বলে সোজা ইমিগ্রেশনে গিয়ে দাঁড়ালাম। ফরমে অবশ্যই হোটেলের নাম ও ঠিকানা লিখতে হবে। তাই আগে থেকে প্রিপারেশন থাকা ভালো।
আমি যেভাবে ট্যুর করেছিলাম তার সংক্ষিপ্ত প্ল্যান ও খরচ শেয়ার করলাম- ব্যাঙ্কক-ফুকেট (এয়ারপোর্ট থেকে নেমে ২৫০ থাই দিয়ে শেয়ারে পাতং বিচ এরিয়াতে বুকিং ডটকমে কাটা হোটেলে চেক ইন দিলাম। অবশ্য ব্যাঙ্কক থেকে আপনি বাস কিংবা ট্রেনেও যেতে পারেন। ১২-১৪ ঘণ্টা লাগে। আমি যেহেতু এই পন্থা অবলম্বন করিনি, তাই বিস্তারিত জানি না, আসার পথে ওরা একটা ব্রেক দেয়। সেখানে অনেক ট্যুর প্যাকেজ কোম্পানি আপনাকে বিভিন্ন দ্বীপে ভ্রমণের প্যাকেজ দেখাবে। আমি সেখান থেকে একটা প্যাকেজ নিয়ে ফেলি। চিন্তা করলাম ফুকেটে হোটেলে চেক ইন দিয়ে এই প্যারা নিতে চাই না। যাই হোক মোটামুটি কমের মধ্যেই একটা নিয়ে ফেলি। মাত্র ১২০০ থাই। ওইদিন তেমন কিছু করিনি। একটু রিল্যাক্স কাটিয়েছি। পাতং বিচে গিয়েছিলাম। হালকা-পাতলা রোমিং করে, ডিনার করে হোটেলে এসে ঘুম।
খুব সকালে প্যাকেজের গাড়ি এসে আমাদের নিয়ে গেছে, সেখানে হালকা-পাতলা স্ন্যাক্স ফ্রি খাওয়ায়। খুব সুন্দর করে সহজ ইংলিশে আপনাকে নিয়মকানুন বোঝাই দেবে। তারপর বোর্ডিং করাবে আনুমানিক ৮.৩০-এর দিকে। আমি মূলত জেমস বন্ডসহ মায়া-বে, খাই আইল্যান্ডের টিকিট কেটেছিলাম সঙ্গে দুপুরের খাবার ইনক্লুড থাকে। এখানে বেশ কয়েকটা ওয়াটার অ্যাক্টিভিটিজ আছে। ফ্রি স্নোর্ক্লিং ছিল। আমি ট্রাই করেছিলাম একটু করে। দিন-দুনিয়া অন্ধকার হয়ে গেছিল। যাই হোক, আন্দামান সাগরের এই জায়গাই সমুদ্র থেকে মাথা তুলেছে অনেক চুনাপাথরের পাহাড়। যেমন বৈচিত্র্যময় সেসব পাহাড়ের গড়ন তেমনই। হলিউডের সিনেমার শুটিংয়ের দৌলতে একটি দ্বীপের নাম হয়ে গেছে জেমস বন্ড আইল্যান্ড। ফিরতে ফিরতে বিকাল হয়ে গিয়েছিল। গোসল দিয়ে রেস্ট নিয়ে রাতের ফুকেট উপভোগের উদ্দেশে বের হয়ে যাই। আসার পথে ১৫০০ থাইয়ে ফিফি আইল্যান্ডের একটা ট্যুর প্যাকেজ কিনে ফেলি বুফে লাঞ্চ/স্ন্যাক্স ইত্যাদির সুবিধাসহ।
হোটেল-ফিফি আইল্যান্ড-হোটেল। আন্দামান সাগরের মধ্যে ফিফি ডন আর ফিফি লে এই দুটি দ্বীপ নিয়ে ফিফি আইল্যান্ড সবুজ রঙের সমুদ্রের মাঝে পাহাড়-জঙ্গল ভরা ছোট ছোট নির্জন দ্বীপ আর বেলাভূমি। আর মাথার ওপার ঝকঝকে নীল আকাশ আমাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে তোলে। ফিফি ডনে আছে হোটেল রিসোর্ট বাজার রেস্তোরাঁ জনপ্রতি সব ফিফি লে কিন্তু জনবসতিবিহীন আরও খাড়া কিছু উঁচু-নিচু পাহাড়ের সমষ্টি। তার আনাচে-কানাচে লুকিয়ে আছে কয়েকটা ছোট-বড় অপূর্ব সমুদ্রসৈকত কিছু গা ছমছমে গুহা ইত্যাদি সুবিধা। যদিও এক দিনের প্যাকেজ ট্যুর ঘুরে নেওয়া যায়, তবু ফিফি আইল্যান্ডের প্রকৃতিকে বুঝতে হলে অন্তত এক-দুই রাত ফিফি ডন-এ কাটাতে হবে, সেভাবেই ট্যুর অপারেটরদের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া উচিত। যাই হোক আমার টাইম নেই। কিন্তু মনে মনে প্ল্যান করে আসি, নেক্সট টাইম ফিফি থাকব। ওইদিন ফিরে সেই আগের মতোই। পরদিন ফ্লাইট ব্যাঙ্ককের উদ্দেশে।
খরচের একটা সামারি দিচ্ছি-