‘সায়েন্টিস্ট অব দ্য ফিউচার’ অ্যাওয়ার্ড অর্জন
আসমাউল হুসনা
প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:১২ এএম
আইইউটির মার্স রোভার টিম
২৪ থেকে ২৯ জানুয়ারি ভারতের তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটোরের পিএসজি আইটেকে অনুষ্ঠিত হয় এসপিআরওএস আইআরসি ২০২৪ প্রতিযোগিতা। প্রজেক্ট আলতাইর প্রদর্শনের মাধ্যমে আইআরসিতে নিজেদের সেরা বিদেশি দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে আইইউটির মার্স রোভার টিম
আন্তর্জাতিক রোভার চ্যালেঞ্জ (আইআরসি) ২০২৪ প্রতিযোগিতায় অ্যাস্ট্রোবায়োলজি এক্সপিডিশন মিশনে চ্যাম্পিয়ন এবং পুরো প্রতিযোগিতায় বিশ্বব্যাপী ষষ্ঠ স্থান অধিকার করেছে বাংলাদেশের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির শিক্ষার্থী দল প্রজেক্ট আলতাইর।
প্রজেক্ট আলতাইর প্রদর্শনের মাধ্যমে আইআরসিতে নিজেদের সেরা বিদেশি দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে আইইউটির মার্স রোভার টিম। এ বছর ২৪ থেকে ২৯ জানুয়ারি ছয় দিনব্যাপী ভারতের তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটোরের পিএসজি আইটেকে অনুষ্ঠিত হয় এসপিআরওএস আইআরসি ২০২৪ প্রতিযোগিতাটি।
প্রতিযোগিতার প্রাথমিক পর্বের জন্য প্রজেক্ট আলতাইর তিন মিনিটের একটি ভিডিও তৈরি করে, যেখানে তারা কিছু কাজ সিমুলেট করে দেখায়। রোভার কতটা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে তার ওপর ভিত্তি করে বিচারকরা এ ফলাফল দেন। আন্তর্জাতিক রোভার ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট রিভিউ (এসডিডিআর)-এর পর্বে এ রিপোর্ট এবং ভিডিওর স্কোরগুলো বিবেচনা করা হয়। আইআরসির চূড়ান্ত পর্বে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য আইআরডিসির পরীক্ষায় সফল হতে হয়েছে মার্স রোভার টিমের প্রজেক্ট আলতাইরকে। আইআরডিসি হলো আইআরসির ডকুমেন্টেশন সেগমেন্ট। এ সেগমেন্ট থেকে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ২৬টি দল নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় অন-সাইট আইআরসি চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা।
এবিইএক্স (অ্যাস্ট্রোবায়োলজি এক্সপিডিশন), আইঅ্যান্ডএমও (ইনস্ট্রুমেন্ট ডিপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স অপারেশনস), আর অ্যান্ড ডিও (রিকোনাইসেন্স অ্যান্ড ডেলিভারি অপারেশন), এইউটিইএক্স (স্বায়ত্তশাসিত অভিযান), পিমা (প্রকল্প বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনা মূল্যায়ন) এবং বিপিপি (ব্যবসা ও অংশীদারি পরিকল্পনা) চারটি প্রযুক্তিগত ও দুটি প্রকল্প ব্যবস্থাপনা মিশন এ ছয়টি ভিন্ন ধাঁচের পরীক্ষায় সফলতার মাধ্যমে প্রজেক্ট আলতাইর চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় নিজেদের প্রতিষ্ঠা করে। পৃথক মিশনে সেরা পারফরম্যান্সের জন্য দলগুলোকে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। ছয়টি মিশনে মোট স্কোর করা পয়েন্টের ভিত্তিতে শীর্ষ তিনটি দলকে পুরস্কৃত করা হয়।
প্রজেক্ট আলতাইর অ্যাস্ট্রোবায়োলজি এক্সপিডিশন মিশনে সেরা ফল এবং ‘সায়েন্টিস্ট অব দ্য ফিউচার’ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে। এ মিশনে রোভারটিকে সিমুলেটেড মার্সইয়ার্ডের দুটি ভিন্ন সাইট থেকে নমুনা সংগ্রহ এবং রাসায়নিকভাবে বিশ্লেষণ করতে হয়েছে। রোভারগুলোকে পরিবেশগত তথ্য সংগ্রহ এবং সামগ্রিক সংগৃহীত ডেটা (সেন্সরের পরিবেশগত ডেটা এবং শারীরিক নমুনার) ওপর ভিত্তি করে মার্সইয়ার্ডের একটি সামগ্রিক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করতে হয়েছে।
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির আগের মার্স রোভার দল ‘টিম অভিযাত্রিক’ ও ‘টিম অনির্বাণ’ একত্র হওয়ার মাধ্যমে প্রজেক্ট আলতাইর প্রতিষ্ঠিত হয়। পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন ডিপার্টমেন্ট থেকে আসা ৯০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীর নিরলস পরিশ্রম, উদ্ভাবনী চিন্তা, দলবদ্ধভাবে একত্র হয়ে কাজ করার ফল প্রজেক্ট আলতাইর। প্রজেক্ট আলতাইর সাবটিমগুলোর মধ্যে রয়েছে ইলেকট্রিক্যাল সাবটিম, মেকানিক্যাল সাবটিম, সফ্টওয়্যার সাবটিম, সায়েন্স সাবটিম, ডকুমেন্টেশন সাবটিম, ম্যানেজমেন্ট সাবটিম ও পিআর (জনসংযোগ) সাবটিম। কম্পিউটার, মেশিন ওে বিদ্যুতের সঙ্গে হাতে-কলমে কাজ করা থেকে শুরু করে প্রকল্প পরিচালনা এবং সৃজনশীল প্রচেষ্টায় পারদর্শী প্রতিটি সদস্যের অনন্য প্রতিভা প্রজেক্ট আলতাইরকে একটি প্রগতিশীল দলে পরিণত করতে অবদান রাখে।
২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো শুরু হয় আইআরসি প্রতিযোগিতা। পরে প্রতি বছর জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিযোগিতাটি। আন্তর্জাতিক রোভার চ্যালেঞ্জ মূলত একটি স্পেস রোবোটিকস ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিযোগিতা। পরবর্তী প্রজন্মকে মহাকাশচারী-সহায়ক প্ল্যানেটোরি রোভার সম্পর্কে ধারণা, নকশা, বিকাশ এবং তা পরিচালনাসহ মঙ্গলগ্রহের সিমুলেটেড পরিস্থিতিতে বিভিন্ন লক্ষ সম্পাদনের মাধ্যমে সম্পাদিত হয় প্রতিযোগিতাটি।
প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য হলো বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বাস্তব বিশ্বের আন্তঃবিভাগীয় মহাকাশ প্রকৌশল অভিজ্ঞতা প্রদান, ব্যবহারিক প্রকৌশল দক্ষতা নমনীয় দক্ষতার সঙ্গে সমন্বয় করা যার মধ্যে পরিকল্পনা এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনা অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়া ইউরোপীয় রোভার চ্যালেঞ্জ (ইআরসি)-২০২৩-এ প্রজেক্ট আলতাইর রিমোট পর্বের কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডে তৃতীয় স্থান এবং বিশ্বব্যাপী ২৫টি দলের মধ্যে চূড়ান্ত ফল হিসেবে অনসাইট রাউন্ডে এশিয়ায় দ্বিতীয় এবং বিশ্বব্যাপী ১৭তম র্যাংকিং অর্জন করে। দলটির পরবর্তী গন্তব্য ইআরসি-২৪। যেটি এ বছর সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। এখানে তাদের একমাত্র লক্ষ্য মেধা ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে সারা বিশ্বের মানুষকে প্রজেক্ট আলতাইর এবং বাংলাদেশের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া।
প্রজেক্ট আলতাইর সদস্য রাইয়ান ইবনে হোসাইন বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা আমাদের যোগাযোগব্যবস্থার সঙ্গে লড়াই করেছি। যদিও পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে সফল হয়েছি। তবে ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতার জন্য একটি স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন।’
প্রতিটি প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিযোগিতাকে আলিঙ্গন করে প্রজেক্ট আলতাইর শুধু সাফল্যের জন্যই চেষ্টা করে না বরং বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের বিস্তৃত ক্ষেত্রে অবদান রাখার লক্ষ্যে কাজ করে। দলটির প্রধান লক্ষ্য হলো ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পৃথিবীর সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে তাদের মহাজাগতিক বিশাল সম্ভাবনাগুলো অন্বেষণের স্বপ্ন দেখতে উৎসাহিত করা।