রাফিয়া তাহসিন ইথিকা
প্রকাশ : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:৩৪ পিএম
আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:৩৪ পিএম
গল্পটির জন্য সুন্দর ছবিটি এঁকেছে মিথিলা ভৌমিক। সে ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী
প্রতিদিন শুধু পঞ্জিকা দেখছি আর দিন গুনছি। কখন ফেব্রুয়ারি আসবে? বাড়ির লোকজনের কাছে এ কারণে কম কথা শুনতে হয়নি। ক্যালেন্ডার দেখলেও শান্তি পেতাম না, সবাইকে তারিখ জিজ্ঞাসা করতাম। সবাই মনে করছে হয়তো আমি অপেক্ষা করছি একুশে ফেব্রুয়ারির জন্য। কারণ প্রতি বছর এদিন আমি আমার বাবার সঙ্গে শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাই। শহীদ মিনারে ফুল দিতে যেতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। এ ভালো লাগার পেছনেও একটা কারণ আছে। আমার বাসার ছাদে যে ফুলগুলো ফুটে থাকে, সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি আমি ছিঁড়ে নিয়ে আসি। আসলে নিজের বাসার ছাদ থেকে নিয়ে আসা ফুল শহীদ মিনারে দিতে একটা অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে। কিন্তু গত বছর ওই সময়ে আমি খুব অসুস্থ ছিলাম। তাই শহীদ মিনারে ফুল দিতে পারিনি। আমার বাড়ির লোকজন ভাবছে গত বছর ফুল দিতে পারিনি বলে এ বছর একুশে ফেব্রুয়ারি আসার আগেই আমি প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছি আর সেজন্যই এ উত্তেজনা। কিন্তু আমার এ প্রস্তুতি আর উত্তেজনা ছিল অন্য কারণে। ফেব্রুয়ারি মানেই শুধু একুশে ফেব্রুয়ারি না, একুশে ফেব্রুয়ারির সঙ্গে জড়িয়ে আছে আরেকটি নাম, একুশে বইমেলা। বইমেলায় যাওয়ার আমার তেমন ভালো কোনো অভিজ্ঞতা নেই। একবার শুধু গিয়েছিলাম রাজশাহী কলেজের বইমেলায়। কোনো বই পছন্দ হয়নি তাই চলে এসেছিলাম। প্রতি বছরই একুশে বইমেলার কথা শুনছি। কিন্তু কখনও যাইনি। শুনেছি একুশে বইমেলায় অনেক রকমের বই পাওয়া যায়। কেন জানি না এ বছর খুব ইচ্ছে করছে বইমেলায় যাওয়ার। অবশেষে ফেব্রুয়ারি এলো। ভয়ে ভয়ে সবাইকে জানালাম আমি ঢাকার বইমেলায় যাব। প্রথমে কেউ রাজি হলো না, কিন্তু তারপর বাবা বলল, আমাকে ঢাকায় বইমেলা দেখাতে নিয়ে যাবে। আমার খুশির যেন কোনো বাঁধ ছিল না। মা তখনও রাজি হয়নি, পরে বাবা বুঝিয়ে বলায় রাজি হলো। এরপর আমি, আমার বাবা আর ছোট ভাই মিলে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম। ট্রেনের কু-ঝিকঝিক শব্দ আর চারপাশের সবুজ পরিবেশ, এর মাঝে আমার মাথায় শুধু একটা চিন্তাই আসছে, কখন বইমেলায় যাব? দীর্ঘ যাত্রার পর অবশেষে বইমেলায় পৌঁছালাম। এত বড় বইমেলা আগে দেখিনি। মনে হচ্ছিল যেন বইয়ের সমুদ্র। আমার তো ইচ্ছে করছিল সব বই কিনে ফেলি। বইমেলায় অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরির পর তিনটি বই পছন্দ হলো। আর কোনো কথা নয় সঙ্গে সঙ্গে কিনে ফেললাম। বাবা ছোটভাইকে জিজ্ঞাসা করছিল, ‘তুমি কী বই নিতে চাও?’ ছোট ভাই বলছে, ‘বই কিনলেই তো পড়তে হবে, তাই আমি কিনব না। আমার মতো ফাঁকিবাজ যদি বই কেনে তাহলে সেটা ভালো দেখায় না।’ ওর কথা শুনে আমরা হেসে ফেললাম। আগে আমারও বই পড়তে একদম ভালো লাগত না, কিন্তু এখন বই পড়তে ভালোই লাগে, আর আজ বইমেলায় আসার পর মনে হচ্ছে প্রতি বছরই বইমেলায় আসতে হবে। সত্যিই ‘বইমেলা’ শব্দটির মধ্যে লুকিয়ে আছে একটি আবেগ। আমি যার নাম দিয়েছি আনন্দ।
অষ্টম শ্রেণি, সরকারি প্রমথনাথ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, রাজশাহী