× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

গুলতি ও ঘুড়ির গল্প

ইমন চৌধুরী

প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৪ ১২:২২ পিএম

আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২৪ ১২:৩৫ পিএম

অলংকরণ : জয়ন্ত সরকার

অলংকরণ : জয়ন্ত সরকার

‘আমার মেয়েটা কী আঁকছে?’ ছোট্ট আরিহা ড্রইং খাতায় ছবি আঁকছিল আনমনে। পেছন থেকে হঠাৎ জানতে চাইল আরিহার আব্বু। আরিহা একটু থামল। চোখ তুলে বাবাকে দেখল একটুখানি। তারপর আবারও ড্রইং খাতায় পেনসিল চালাতে চালাতে বলল, ‘গ্রামের দৃশ্য আঁকছি।’
‘বাহ, সুন্দর তো!’ বলতে বলতে মেয়ের পাশে আরাম করে বসল আরিহার আব্বু। তারপর এক জায়গায় আঙুল রেখে জানতে চাইল, ‘এটা কী?’
‘এটা হচ্ছে ঘর। তুমি ঘরও চিনতে পারছ না!’ বাবার কাণ্ড দেখে ফিক করে হেসে দিল আরিহা।
‘হুম, তাই তো। এটা তো ঘর। কিন্তু ঘরের পেছনে ওটা কী?’ আবারও মেয়ের কাছে জানতে চাইল আরিহার আব্বু।
‘ওটা একটা গাছ।’
‘বাহ! গাছটাও তো অনেক সুন্দর দেখছি। এটা কী গাছ মা?’
‘এটা আমগাছ।’
‘এরপর কী আঁকবে?’
‘এরপর আঁকব পাখি। আগে গাছ এঁকেছি। গাছ না থাকলে পাখিরা বসবে কোথায়!’ বলতে বলতে কয়েকটা পাখি এঁকে ফেলল আরিহা।
মুগ্ধ হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইল আরিহার আব্বু। আরিহা বড়দের মতো গম্ভীর গলায় বলল, ‘কিছু বলবে আব্বু?’
‘হুম, এরপর কী আঁকবে?’
আরিহা মুখে পেনসিল ঠেকিয়ে ভাবল কিছুক্ষণ। তারপর বাড়ির পাশে একটা নদী আঁকতে শুরু করল।
সেটা দেখে আরিহার আব্বু আবারও প্রশ্ন করল, ‘এটা কী?’
‘এটা নদী। নদীতে কী থাকে বলো তো আব্বু?’
‘নদীতে নৌকা থাকে, মাছ থাকে।’
‘আর কী থাকে বলো তো?’
‘আর কিছু তো থাকে না।’
‘থাকে। নদীতে সাঁকো থাকে।’ বলতে বলতে এবার নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো আঁকতে শুরু করল আরিহা। মেয়ের কাণ্ড দেখে মুচকি হেসে আরিহার আব্বু বলল, ‘এরপর কী আঁকবে?’
‘এরপর একটা গরু আঁকব। হোয়াইট কাউ। আমার অনেক পছন্দ।’
আরিহার আব্বু চুপচাপ মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইল। গরু আঁকা শেষ হলে আরিহা বলল, ‘বলো তো আব্বু, এরপর কী আঁকব?’
‘কী আঁকবে?’
‘হি হি...বোকা রে বোকা! এরপর একটা মাঠ আঁকব। মাঠে অনেক অনেক ঘাস থাকবে। ঘাস না থাকলে গরুটা খাবে কী?’
‘হুম, তাই তো। সেটাও তো একটা কথা। তারপর কী আঁকবে?’
আরিহা চুপচাপ মাঠ আঁকল। মাঠে ঘাস আঁকল। তারপর আব্বুর দিকে ছবি আঁকার খাতাটা এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘এইবার তুমি কিছু একটা এঁকে দাও তো আব্বু।’
আরিহার আব্বু পেনসিল হাতে নিয়ে নদীর পাড়ে একটা ছেলে আঁকল। ছেলেটার হাতে একটা গুলতি। আরিহা বলল, ‘আব্বু, ছেলেটার হাতে এটা কী এঁকেছ?’
‘এটা হচ্ছে গুলতি।’
‘গুলতি দিয়ে কী করে?’
‘গুলতি দিয়ে পাখি শিকার করে। তুই যে পাখিগুলো এঁকেছিস, সেগুলো এই গুলতি দিয়ে শিকার করবে ছেলেটি।’
আরিহা চুপ হয়ে গেল হঠাৎ। কয়েক সেকেন্ড পর গম্ভীর গলায় বলল, ‘পাখিগুলো মারা যাবে না! এত সুন্দর পাখি! মেরে ফেললে আমার খারাপ লাগবে খুব।’
মেয়ের কথায় চমকে ওঠেন আরিহার আব্বু। তাই তো। পাখিদের মারা ঠিক না। পাখিরা মুক্ত আকাশে ঘুরে বেড়াবে। মানুষ যেমন স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ায়, পাখিদেরও নিশ্চয়ই ঘুরতে ইচ্ছে করে। 
হঠাৎ ইরেজার দিয়ে ছেলেটার হাত থেকে গুলতিটা মুছে ফেলল আরিহা। তারপর খাতাটা এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘ছেলেটার হাতে অন্য কিছু এঁকে দাও আব্বু।’
আরিহার আব্বু ভাবলেন খানিকটা। তারপর আকাশে একটা রঙিন ঘুড়ি আঁকলেন। লাল রঙের ঘুড়ি। আর সেই ঘুড়ির নাটাইটা ধরিয়ে দিলেন ছেলেটার হাতে। অমনি মুখে হাসি ফুটল আরিহার। আরিহার সঙ্গে যেন হেসে উঠল আরিহার আঁকা পাখিরাও।
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা