রাতুল মুন্সী
প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৪১ পিএম
হলুদ ট্যাবেবুইয়া
পরিবেশকর্মী মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনে বৃক্ষবন্ধু
আজহারুল ইসলাম খান ভাই নতুন নতুন বৃক্ষের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন। গার্ডেন
জুড়ে বসন্তের আমেজ। প্রতিটি বৃক্ষের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার সময় মনে হচ্ছিল বৃক্ষরাজির
ফ্যাশন শোতে আসছি। প্রতিটি বৃক্ষের নতুন নতুন সাজসজ্জা। গায়ে গয়নার কমতি ছিল না।
নতুন পাতা, ফুল, ফল দিয়ে তৈরি গয়না। বেশ ভালো লাগছিল। সৌন্দর্যের বিচারে কারও থেকে
কারও সৌন্দর্যের কমতি নেই। অভ্যর্থনায় স্বাগত জানাল নাগেশ্বর আর অশোক।
বৃক্ষের সঙ্গে পরিচয় হতে হতে কখন যে দুপুর গড়িয়ে বিকাল
হয়ে আসছে বুঝতেই পারিনি। যত দেখছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি। এবার আমরা গার্ডেন থেকে বের
হয়ে যাব ভাবছি। এর মধ্যে আজহার ভাই বললেন আপনাকে তো হলুদ ট্যাবেবুইয়া দেখাইলাম না।
চলেন দেখে আসি।
এর আগে কখনও হলুদ ট্যাবেবুইয়ার নাম শুনিনি। এই প্রথম
নাম শুনলাম। নাম শুনে খুব বেশি আগ্রহ তৈরি হলেও আন্দাজ করতে পারছিলাম না কেমন হবে
গাছটা। শুধু এটুকু আন্দাজ করতে পারলাম হলুদ কিছু একটা হবে। মিনিট পাঁচেক হাঁটলাম।
গাছের কাছে যাওয়ার আগে দূরে থেকে ভাই বললেন ওপরের দিকে কিছু দেখতে পাচ্ছেন? ওপরের
দিকে তাকিয়ে যা দেখলাম। মনে হচ্ছিল বসন্তের রানী হলুদ শাড়ি পরে ঘোমটা দিয়ে অভিমান
করে গাছের মগডালে বসে আছে। পাতা নেই শুধু ফুল আর ফুল। ইচ্ছে হচ্ছিল উড়তে পারলে উড়ে
গিয়ে হলুদ ট্যাবেবুইয়ার ফুলের পরশ গায়ে মেখে আসতাম।
হলুদ ট্যাবেবুইয়া নিজস্ব প্রজাতির গাছ না হলেও
আমাদের দেশের পরিবেশের সঙ্গে ঠিকই মানিয়ে নিয়েছে নিজেকে। বসন্তের প্রথমে পাতা ঝরে
গিয়ে নতুন করে পাতার বদলৌতে ডালভর্তি থোকায় থোকায় ফুল আসে। ফুলের স্থায়িত্ব হয় গড়ে
৮-১০ দিন। ফুল ঝরে গিয়ে নতুন পাতা হয়। বসন্ত এলেই আমাদের দেশের কয়েকটা জায়গায় এই
বিরল প্রজাতির হলুদ ট্যাবেবুইয়ার দেখা পাওয়া যায়। অনেকে দেখে ফাল্গুনি মনে করে
ভুলও করে থাকেন।
লাতিন আমেরিকার ব্রাজিল, বলিভিয়া ও আর্জেন্টিনাসহ
বিভিন্ন দেশে এই গাছটির আদি নিবাস। প্রচলিত নাম ট্যাবেবুইয়া/বসন্তের রানী। অনেকে
একে ইয়েলো পোউই, ট্রাম্পেট ফ্লাওয়ার বলে থাকেন। বৈজ্ঞানিক নাম ট্যাবেবুইয়া সের্যাটিফোলিয়া
এবং বিগননিয়াসিয়া পরিবারের লামিয়ালেস বর্গের উদ্ভিদ।
উইকিপিডিয়ার তথ্য বলছে, হলুদ ট্যাবেবুইয়া গাছের গড়
উচ্চতা ১৫০ ফিট ও পরিধি ৭ ফিট পর্যন্ত হয়। এই গাছের ঔষধি গুণাগুণ এবং বাণিজ্যিক
গুরুত্ব রয়েছে। কাঠের গঠন অত্যন্ত মজবুত হওয়ায় সহজে ঘুণ ধরে না। আগুনে সহজে পোড়ে
না বলে একে ‘হার্ড উড’ অথবা ‘আয়রন উড’ বলেও আখ্যায়িত করা হয়। বাকলের ভেতরের অংশ
ক্ষত, পাকস্থলী ও ক্যানসারের ওষুধ তৈরির কাজে ব্যব্হৃত হয়।
আজহারুল ইসলাম খান বললেন, সঠিকভাবে যদি এই গাছের
বংশবিস্তার করিয়ে আমাদের রাস্তা, পার্ক এবং বাগানগুলোতে রোপণ করা যায়; তাহলে
রাস্তা, পার্ক বাগানগুলোর নান্দনিকতা আরও বেশি বৃদ্ধি পাবে। এ গাছের কাণ্ড বেশ
শক্ত, ঝড়-বৃষ্টিতে খুব সহজে ভেঙে পড়ে না। আমাদের প্রাণ, প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকর কোনো
দিকও নেই।