× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

প্রথম উপার্জনে কেনা ঈদ উপহার

সিফাত রাব্বানী

প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৩৯ পিএম

আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:০৪ পিএম

প্রথম উপার্জনের টাকায় ঈদের উপহার কেনার অনুভূতি কেমন তা জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা

প্রথম উপার্জনের টাকায় ঈদের উপহার কেনার অনুভূতি কেমন তা জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা

ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে প্রিয়জনদের জন্য আমাদের কতই না আয়োজন। বাবা-মা, ভাই-বোন কিংবা প্রিয় কারও জন্য হতে পারে ঈদের উপহার কেনা। আর উপহার যদি হয় নিজের প্রথম উপার্জনের টাকায়, সে অনুভূতি নিঃসন্দেহে দারুণ। এমন কয়েকজন শিক্ষার্থীর ঈদ উপহার কেনার পেছনের গল্প জানাচ্ছেন সিফাত রাব্বানী

বাবার দোকান থেকেই উপহার কিনেছি

বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর অনেকটা সময় কেটে গেল। হঠাৎ মনে হলো বাবার কষ্টের উপার্জনে আর কত চলব! এবার নিজের কিছু একটা করা উচিত। নিজের ওপর ভরসা করেই চলার ইচ্ছে হলো, যদিও কোনো সমস্যা দিয়ে যাচ্ছিলাম না। পড়াশোনা, সাংগঠনিক চাপ সামলে এইতো মাসখানেক আগে প্রথম টিউশন শুরু করি এবং একটা কোচিংয়ে যোগ দিই। বেশ আনন্দের সঙ্গেই আমার উপার্জনে পথচলা শুরু হয়। সেখান থেকে পাওয়া এক মাসের বেতন আমার জীবনের প্রথম উপার্জন। এ উপার্জন স্মৃতিময় করতে, বাবা-মাকে না জানিয়ে এ ঈদেই বাবারই নিজের দোকান থেকে কিনলাম ঈদ উপহার। আমি বেশ আনন্দিত এত বছর যারা আমাকে লালনপালন করলেন, তাদের নিয়ে কিছু করতে পেরে। আমি মনে করি প্রতিটি সন্তানের প্রথম উপার্জন ঘিরে থাকুক বাবা মা ও প্রিয় মানুষ। তাদের জন্য ক্ষুদ্র হলেও কিছু একটা করা উচিত এ উপার্জন দিয়েই।

সিদরাতুল মুনতাহা, সমাজকর্ম বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

অসহায় মানুষের জন্য ঈদসামগ্রী কিনেছি

নিজের পরিশ্রমে প্রথম উপার্জিত অর্থ সত্যিকার অর্থেই আলাদা একটা গুরুত্ব বহন করে। বিভিন্ন জনের বিভিন্ন রকমের ইচ্ছা থাকে, পরিকল্পনা থাকে। কেউ হয়তো টাকাটা নিয়েই পরিবারের জন্য কেনাকাটা করতে যান। কেউ নিজেই একা একা কিছু খরচ করে। আমার নিজের উপার্জিত প্রথম অর্থ দিয়ে উপহার কেনা বিষয়টা ছিল একটু ভিন্ন ধরনের। আমার প্রথম উপার্জনের টাকা আমি ব্যয় করেছি গরিব-অসহায়-দুস্থ মানুষের ইফতারি ও ঈদসামগ্রী বিতরণের কাজে। এ ছাড়া আমরা কলেজের কয়েক বন্ধু মিলে কিছু গরিব অসহায় মানুষের ঈদের পোশাকের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। উপহার পেয়ে তারা এতটাই আনন্দিত ছিল যে তাদের চেহারায় স্বস্তির ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছিল। নিজের প্রথম উপার্জন এত ভালো একটা কাজে ব্যয় হবে তা সত্যিই অবিশ্বাস্য ছিল। নিজের প্রথম উপার্জনের অর্থ ব্যয় আমার স্মৃতির পাতায় অমলিন থাকবে আজীবন।

রাহুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

বইমেলায় চাকরির টাকায় উপহার কিনি

মধ্যবিত্ত পরিবারের বড় সন্তান হলে দায়িত্ব বেড়ে যায় বহুগুণ। ছোট থেকেই দেখে এসেছি আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবারে ঈদে সব ভাই-বোনের জন্য জামা-জুতো। কিন্তু কিপটেমিটা বাবা-মার জন্য বরাদ্দই ছিল। তাদের উত্তর থাকতÑ ‘আরে কয়েক দিন আগেই তো কিনলাম! নিজের বয়স বাড়ল, বুঝতে শিখলাম বাবা-মায়েদের কাপড় পুরোনো হয় না। ভাবলাম একদিন বাবা-মাকে তাদের ঈদ ফিরিয়ে দিতেই হবে! তখন ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি, বিশ্ববিদ্যালয়ে সবে ভর্তি হয়েছি। তখনই খোঁজ পেলাম বইমেলায় বিভিন্ন প্রকাশনীতে বিক্রয়কর্মী নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। সুযোগ পেলাম একটি প্রকাশনীতে কাজ করার। ৮ হাজার টাকা পারিশ্রমিকে ফেব্রুয়ারিজুড়ে থেকেছিলাম সেখানে। এভাবেই উপার্জন করেছিলাম নিজের প্রথম পারিশ্রমিক। টাকাটা হাতে পেয়ে প্রথমেই গিয়েছিলাম বাবার জন্য পাঞ্জাবি কিনতে আর মায়ের জন্য লাল একটা থ্রি পিস। 

সুমাইয়া ইসলাম সিফাত, কারুশিল্প বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বাবার জামা কেনা হয়েছিল ভ্যান থেকে

২০২০ সালে করোনাকালে যখন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়, আমাদের এইচএসসি পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়। চিন্তা করি ঘরে একদম বসে না থেকে কোনো কাজ খুঁজি। তখন চাকরি শুরু করি একটি দলিল লেখার প্রতিষ্ঠানে। আমাকে বেতন দিত ৮ হাজার টাকা। এক মাস চাকরি করার পরই আসে ঈদুল ফিতর। হাতে আসে বেতনের টাকা। প্রবল খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠি। ওই ঈদে পরিবারের চার সদস্যকে কিছু উপহার কিনে দিতে পেরেছিলাম। যেটি ছিল আমার প্রথম উপার্জনের টাকায়। যেহেতু আমি ছোট চাকরি করতাম বেশি দামি কিছু দিতে পারিনি। আমি আমার বাবাকে ঢাকার মিরপুর-১-এ ভ্যানে বিক্রি করা জামা কিনে পাঠাই। অন্য সবাইকে মার্কেট থেকেই দিয়েছিলাম। প্রথম উপার্জনের টাকায় ঈদে পরিবারের সদস্যদের উপহার কিনে দেওয়ার যে অনুভূতি, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। 

সৈয়দ সজীবুর আলভি, হিসাববিজ্ঞান বিভাগ, নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজ

ভাই-বোনের খুশির দাম অনেক বড়

কলেজ লাইফের শুরু থেকেই ইচ্ছে ছিল এবার নিজের হাতখরচের জন্য নিজেকেই কিছু করতে হবে। তাই নিজেই টিউশনি শুরু করলাম। প্রথম মাসের টিউশনির টাকা হাতে পাওয়ার পর ইচ্ছে হলো ছোট ভাই-বোনগুলোকে কিছু উপহার দেব। আমার মনের কথা হয়তো সৃষ্টিকর্তা শুনেছিলেন তাই সে ইচ্ছেটাও পূরণ হয়ে গেল। আমার সেই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা থেকে এবার ঈদের জন্য কয়েক দিন আগে ছোট বোনকে তার পছন্দমতো এক জোড়া জুতা ও ছোট ভাইকে শার্ট উপহার দিই। জিনিসগুলো হয়তো তেমন দামি না, তবে সেগুলো পাওয়ার পর তাদের খুশির দাম আমার কাছে এক আকাশসম মনে হয়েছে। ছোট ভাইয়ের খুশি তো দেখার মতো ছিল! আমার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা থেকে চেষ্টা করেছি আপনজনদেরও খুশি করতে। সৃষ্টিকর্তা আমাকে সেই তৌফিক দিয়েছেন। আমি আরও বড় হতে চাই অন্তত আমার পরিবারের সদস্যদের খুশি রাখার জন্য।

কাশফিয়া কান্তা, দ্বাদশ শ্রেণি, শহীদ বীরউত্তম লে. আনোয়ার গার্লস কলেজ

বইয়ের রয়্যালটিতে ঈদ উপহার কিনেছি

পড়াশোনার পাশাপাশি আমি লেখালেখি করি। গত ৩ বছর বইমেলায় আমার তিনটি বই প্রকাশ পেয়েছে। ছোটবেলা থেকে আমাদের সবার একটা ইচ্ছা থাকে ‘বড় হবার’ ইচ্ছা। আমিও তাই চাইতাম। চাইতাম বাবা-মা, ভাই-বোনকে ঈদে নতুন জামা কিনে দেব। নতুন জামা পাওয়ার আনন্দ তাদের চোখমুখে দেখব। যেভাবে আমার বাবা-মা আমাদের জন্য কিনে থাকেন, আমাদের খুশি দেখে আনন্দ পান, সেভাবেই। সাধারণত এ বইগুলোর সম্মানী আমি ঈদের আগে পেয়ে থাকি। গত রমজানে বইয়ের সম্মানী পাওয়ার পর তাই ছোটবেলার সেই অপূর্ণ ইচ্ছা মেটাতে দুবার ভাবিনি। কাউকে না বলেই দোকানে গিয়ে বাবা-মা, ভাই-আপু আর ছোট দুটি ভাগ্নে-ভাগ্নির জন্য নতুন জামা কিনলাম। তারপর ক্যাম্পাস থেকে ঈদের ছুটি দিলে বাসায় গিয়ে যখন সবাইকে নতুন জামাগুলো দিলাম, আপনজনদের মুখে বিস্ময় আর আনন্দ দেখে আমার একটু লজ্জা লেগেছিল। মনে হচ্ছিল, এই তো বড় হয়ে গেছি। 

আশীব ফেরদৌস অংকন, এমবিবিএস পঞ্চম বর্ষ, শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ



শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা