দুটি আলাদা ইভেন্টে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষার্থীরা দারুণ দুটি সাফল্য অর্জন করেছেন।
আইনের শিক্ষার্থীদের সচেতনতা ও আগ্রহ বাড়ানো এবং তরুণ আইন শিক্ষার্থীদের অ্যাডভোকেসি দক্ষতা বিকাশে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আয়োজন হয় মুট কোর্ট প্রতিযোগিতা। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এসব প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে দেশের জন্য সাফল্য বয়ে আনেন। সাম্প্রতিক সময়ে এমনই দুটি আলাদা ইভেন্টে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষার্থীরা দারুণ দুটি সাফল্য অর্জন করেছেন। বিস্তারিত লিখেছেন আসমাউল হুসনা
সেরা আন্তর্জাতিক দল আইইউবি
ভারতের পুনেতে ভগবতী আন্তর্জাতিক মুট কোর্ট প্রতিযোগিতায় সেরা আন্তর্জাতিক দল হিসেবে পুরস্কার জিতে নিয়েছে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (আইইউবি)। ২৩ মার্চ ভারতী বিদ্যাপীঠ নিউ ল কলেজ আয়োজিত মানবাধিকার বিষয়ক ১২তম বারের মতো এ মুট কোর্ট প্রতিযোগিতার ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে ২১ মার্চ প্রতিযোগিতা শুরু হয়। প্রতিযোগিতায় ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি করে দল অংশগ্রহণ করে। সিঙ্গাপুর, নেপাল, ভারত, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ৫০টি দলের মধ্যে একমাত্র আন্তর্জাতিক দল হিসেবে ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় কোয়ার্টার ফাইনালে কোয়ালিফাই করার যোগ্যতা অর্জন করে এবং সেরা আন্তর্জাতিক দলের পুরস্কার জিতে নেয়। আন্তর্জাতিক দল হিসেবে জয়ী হওয়া ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের দলটিতে ছিলেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থী জাকারিয়া ইসলাম ও আসফি ফাতিমা ঐশী। সংশ্লিষ্ট টিমের মডারেটর ছিলেন আইন বিভাগের শিক্ষিকা মাইমুনা সৈয়দ আহমেদ। বিচারপতি পি এন ভগবতী ইন্টারন্যাশনাল মুট কোর্ট কমপিটিশনের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বড় খ্যাতি রয়েছে এবং এটি মানবাধিকার বিষয়ক সবচেয়ে সম্মানিত বৈশ্বিক মুট কোর্ট প্রতিযোগিতাগুলোর মধ্যে একটি।
প্রতিযোগিতার ফাইনালে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অভয় এস ওকা, বিচারপতি অনিল সুমার সিনহাসহ নেপালের বিচারপতি হুসনু আল সুউদ, মালদ্বীপের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অরুম কুমার সিং দেশওয়াল, এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি সোফি থমাস, কেরালা হাইকোর্টের বিচারপতি অনিরুধা পি মেই উপস্থিত ছিলেন। বিজয়ী শিক্ষার্থীরা জানান, বিজয়ী হতে পেরে আমরা বেশ আনন্দিত। সমস্যা সমাধানে দক্ষতা প্রদর্শনের এমন আয়োজন শিক্ষার্থীদের সমৃদ্ধ করে। এসব প্রতিযোগিতা একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের উৎসাহ জোগায়, তেমন প্রোগ্রামারদের উদ্ভাবনী চিন্তা ও বুদ্ধিমত্তা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
চবির ‘ বেস্ট মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড’ জয়
ভারতের বেঙ্গালুরুতে ড. টিএমএ পাই ইন্টারন্যাশনাল টেকনোলজি আরবিট্রেশন মুট, ২০২৪ প্রতিযোগিতায় ‘বেস্ট মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড’ জিতে নিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ। ৩১ মার্চ মানিপাল ল স্কুল আয়োজিত প্রথমবারের মতো প্রযুক্তির সংযুক্তি ও আন্তর্জাতিক সালিশ আইন বিষয়ক এ প্রতিযোগিতাটির ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়।
২০ হাজার রুপি পুরস্কার মূল্যের এ অ্যাওয়ার্ড জিতে নেওয়া চবির আইন বিভাগের তিন সদস্য হলেন ইসমেতা আজিম, এম মনিরুল ইসলাম ও ইতমিনান মনির বাসিলিস। ৩০ মার্চ দুই দিনব্যাপী ড. টিএমএ পাই ইন্টারন্যাশনাল টেকনোলজি আরবিট্রেশন মুট প্রতিযোগিতা ভারত, বাংলাদেশ, কেনিয়ার শীর্ষ ১৬টি দল দিয়ে শুরু হয়।
প্রতিযোগিতাটি দুই ধাপে অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম ধাপে মেমোরিয়াল সাবমিট করে বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিযোগী টিমের মধ্য থেকে ওরাল সাবমিটের জন্য চূড়ান্ত পর্বে জায়গায় করে নেয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। ৩০-৩১ মার্চ হওয়া চূড়ান্ত পর্বের ওরাল সাবমিটে বিশ্বের ১৫টি টিমের ৪৫ জন প্রতিযোগীকে হারিয়ে বেস্ট মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
এ বিষয়ে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে ইতমিনান মনির বলেন, ‘আমাদের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। আন্তর্জাতিকভাবে চবির আইন বিভাগের খ্যাতি ও দেশের সম্মান অর্জনে ভূমিকা রাখতে পেরেছি ভেবে অনেক ভালো লাগছে। এটা আমাদের গৌরবের বিষয়। প্রতিযোগিতার বিচারকরা পরে আলাদা করে ডেকে আমাদের বলেছিলেন, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে, তারা নাকি তা বিশ্বাসই করতে পারছেন না। কারণ আমাদের মেমোরিয়াল চেক করে তারা খুবই ইমপ্রেসড ছিলেন।’
বিজয়ী শিক্ষার্থীরা জানান, চবির আইন বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে আমরাই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিকভাবে বেস্ট মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড জিতেছি। আমরা এজন্য গর্বিত। আশা করি ভবিষ্যতে আমাদের হাত ধরে অথবা আমাদের সতীর্থদের হাত ধরে এ ধারা অব্যাহত থাকবে। এটা মাত্র শুরু। এ লক্ষ্য অর্জনে আমরা কঠোর পরিশ্রম করে যাব। সর্বোপরি আমাদের ডিপার্টমেন্টের ডিন স্যারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই, যাদের সমর্থনে আমরা এত দূর পর্যন্ত আসতে পেরেছি।