× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ঈদের ছুটিতে

গোলাম কিবরিয়া

প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:৫৭ পিএম

আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৫৯ পিএম

ভোরের সতেজ বাতাস, আকাশচুম্বী সবুজ পাহাড় আর মেঘের সাগরে ভেসে থাকতে পর্যটকরা বারবার ছুটে যান মেঘের দেশখ্যাত সাজেক ভ্যালিতে

ভোরের সতেজ বাতাস, আকাশচুম্বী সবুজ পাহাড় আর মেঘের সাগরে ভেসে থাকতে পর্যটকরা বারবার ছুটে যান মেঘের দেশখ্যাত সাজেক ভ্যালিতে

ঈদের ছুটিতে সবারই কোথাও না কোথাও ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকে। কারও ভালো লাগে পাহাড়, কারও সমুদ্র। সময়, সুযোগ ও অবস্থান বুঝে যে-কেউ বেছে নিতে পারে তার পছন্দের বেড়াবার জায়গা। ঈদের ছুটিতে দেশের অন্যতম সেরা ৩ গন্তব্য নিয়ে আজকের আয়োজন। লিখেছেন গোলাম কিবরিয়া

ডাকছে সাজেক

পাহাড়ের প্রতি ভালোবাসা আর এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে যে কয়টা নাম মাথায় আসে, এর মধ্যে নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম বেছে নেওয়া যায় সাজেক ভ্যালিকে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ৮০০ ফুট ওপরে অবস্থিত সাজেক ভ্যালি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য আদর্শ স্থান এবং এখানে বিদ্যমান সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা পর্যটকদের মূল আকর্ষণের কারণ। আঁকাবাঁকা পথ আর এলোমেলো পাহাড়ের মাঝ দিয়ে চলে যাওয়া সুবিন্যস্ত পাহাড়ি রাস্তার সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে কখন যে সাজেক ভ্যালিতে পৌঁছে যাবেন, টেরও পাওয়া যাবে না। লিখছি চট্টগ্রাম বিভাগে অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ পর্যটনকেন্দ্র সাজেক ভ্যালির কথা। ভোরের সতেজ বাতাস, সকালের কোমল রোদ, খুব কাছ থেকে মেঘদের আলত করে ছুঁয়ে যাওয়া, সীমানার বাইরে যতদূর চোখ যায় শুধুই আকাশচুম্বী সবুজ পাহাড়, আদিবাসীদের আন্তরিকতা এবং আঁধার নেমে এলে নীল আকাশে, ছায়াপথের আনাগোনা এসব কেবল একটা জায়গা থেকেই উপভোগ করা গেলে বিষয়টা নেহাত মন্দ নয়। আর তাই মেঘের সাগরে ভেসে থাকতে পর্যটকরা বারবার ছুটে যান মেঘের দেশখ্যাত সাজেক ভ্যালিতে।

চাঁদের গাড়িতে সাজেক যাত্রায় ভোরের সতেজ বাতাস আপনাকে আলিঙ্গন করে নেবে, পথ চলতে চলতে পাহাড়ি ছেলেমেয়েদের হাত নেড়ে জানানো উষ্ণ অভ্যর্থনা করে তুলবে বিমোহিত। রুইলুইপাড়ায় থাকার বাহারি ব্যবস্থা, মনোরম পরিবেশনায় পাহাড়ি খাবার, ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের ভাঙা গলায় দারুণ গান, কংলাকপাড়া অর্থাৎ সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া থেকে দেখা সূর্যাস্ত কিংবা ভোরের সূর্যোদয়, রাতের নিস্তব্ধতা, রাতের আকাশে অগণিত নক্ষত্রের মিলনমেলা উপভোগ করার পাশাপাশি যে বিষয়টা বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে গণ্য হয়, সেটা হলো দুপুরে দেখে আসা সবুজ পাহাড়গুলোর খুব সকালে শুভ্র মেঘের চাদরে ঢেকে যাওয়া। সাজেকের পথ ধরে হাঁটলে মনে হবে গ্রামের মেঠোপথ ধরে হাঁটছি, যে পথ পিচঢালা। এই পথ ধরে ৪৫ মিনিটের দূরত্বে রয়েছে সিপ্পু পাহাড়ে অবস্থিত কংলাকপাড়া।

সিপ্পু পাহাড়, যেটি শুধু সাজেকেরই নয়, পুরো রাঙামাটি জেলার সর্বোচ্চ পাহাড়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২ হাজার ৮০০ ফুট উঁচু। ছোট এই পাহাড়টিতে বসবাস করেন ‘পাংখো’ আদিবাসীরা। তারা টুকটাক বাংলা বলতে পারলেও ইংরেজিতে বেশ দক্ষ। কংলাকপাড়ায় রয়েছে সুস্বাদু লাল পেয়ারা, কলা, জাম্বুরা। পাহাড়ি মরিচের কথা না বললেই নয়। এত ঝাল, বলার বাইরে। সাজেকের দুঃখ হলো ‘লুসাই পাহাড়’। সাজেকের দুই পাশে রাস্তায় তাকালে যেদিক দিয়ে সূর্যোদয় হয় সেপাশে দেখা যাবে ছোট ছোট অনেক পাহাড়ের পরে দূরে বিশাল এক পাহাড়, এটাই লুসাই পাহাড়।

দীঘিনালা থেকে বেলা ১১টা এবং ৩টায় সেনাবাহিনীর এসকর্ট শুরু হয়। সাজেক থেকেও একইভাবে সকাল ১০টা এবং বেলা ৩টায় এসকর্ট শুরু হয়। এসকর্ট ছাড়া একা যাওয়া যায় না। মনে রাখবেন, বিকালের এসকর্ট মিস হলে সেদিন আর যেতে পারবেন না। সাজেকে নিজস্ব গাড়ি বা বাইক নিয়ে যাওয়া যায়। তবে পাহাড়ি রাস্তায় গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা না থাকলে নিজস্ব গাড়ি নিয়ে না যাওয়াই উত্তম। বাইকে যাওয়া যায় যদি নিজের চালানোর ওপর ভরসা থাকে। মনে রাখবেন, খাগড়াছড়ির পর আর কোনো ফিলিং স্টেশন নেই।

সাগরে রোমাঞ্চ

বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্থান কক্সবাজার। প্রতিবছর লাখ লাখ পর্যটক ভিড় করেন কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে। তবে এখন শুধু আর সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই কক্সবাজার ভ্রমণ। বিশ্বের যেকোনো জনপ্রিয় সমুদ্রসৈকতের মতো কক্সবাজারেও এখন অনেক বিচ অ্যাকটিভিটি সহজলভ্য। কক্সবাজারের অ্যাডভেঞ্চার অ্যাকটিভিটি আমাদের আশপাশের দেশগুলো থেকে কোনো অংশেই কম নয়। চলুন আজ জেনে নেওয়া যাক আপনার কক্সবাজার ভ্রমণকে কীভাবে ভিন্নভাবে সাজানো যায়।

কক্সবাজারে রয়েছে প্যারাসেইলিং করে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নেওয়ার সুযোগ 

প্যারাসেইলিং : আকাশে ওড়ার সাধ কার না জাগে বলুন। আর সে যদি হয় ভ্রমণপিপাসু, তা হলে তার মনটা যেন পাখির মতোই। আরাধ্য সে ইচ্ছাপূরণের সুযোগটাই এখন পাওয়া যাচ্ছে দেশের সবচেয়ে প্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য কক্সবাজারেই। প্যারাসেইলিং করে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে সৈকতের হিমছড়ি দরিয়ানগর পয়েন্টে মেরিন ড্রাইভের দক্ষিণ পাশের সৈকতে প্যারাসেইলিং করা হয়। দুটি প্রতিষ্ঠান সেখানে পর্যটকদের জন্য প্যারাসেইলিংয়ের আনন্দ উপভোগের সুযোগ দিচ্ছে। সেখানে গেলেই চোখে পড়বে প্যারাসুটে চড়ে মানুষ আকাশে উড়ছে। নিচে উত্তাল সমুদ্র।

ট্যুরিস্ট ক্যারাভানে ভ্রমণ : আপনি যদি গাড়ির বদলে একটি দোতলা ট্যুরিস্ট ক্যারাভানে একজন ট্যুরিস্টের মতো পুরো কক্সবাজারের মূল স্থানগুলো ঘুরে আসতে চান, সেটার জন্যও কিন্তু চমৎকার ব্যবস্থা এখন কক্সবাজারেই রয়েছে। একটি দোতলা বাসে করে মেরিন ড্রাইভ ধরে ঘুরতে ঘুরতে খাবার খাওয়া এবং সেই সঙ্গে খোলা ছাদে বই নিয়ে সমুদ্রের ঠিক পাশ দিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে এর আগে হয়নি। দোতলা এই ট্যুরিস্ট ক্যারাভানে ২০ জন ধারণক্ষমতাসহ আছে ছোট লাইব্রেরি, ওয়াশরুম এবং তিন বেলা খাবারসহ চা-কফির ব্যবস্থা। অ্যাকুয়াহোলিক ট্যুরিস্ট ক্যারাভানে আপনি এই সেবা পাবেন পূর্ণ বয়স্ক জনপ্রতি ২০৯৯ থেকে ২২৯৯ টাকায়। 

রেজু খালে কায়াকিং : চারপাশের শান্ত পরিবেশে একা অথবা বন্ধুদের নিয়ে কায়াকিংয়ের অভিজ্ঞতা নিতে চাইলে আসতে হবে রেজু খালে। কক্সবাজারের পাশেই রেজু খালে যে এখন কায়াকিংয়ের সুযোগ আছে।

এ ছাড়াও পুরো পরিবার, বিশেষ করে বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে যদি সারা দিন দারুণ সময় কাটাতে চান তাহলে চলে যান কক্সবাজারেই সি পার্ল ওয়াটার পার্কে। ছয়টি রাইডে চড়তে পারবেন এখানে। পরিবার ও বন্ধুবান্ধব মিলে একটা দিন অনেক আনন্দে কাটিয়ে দেওয়া যায় সহজেই। আর অ্যাডভেঞ্চার না করতে চাইলে পরিবারসহ চলে যেতে পারেন শহরে অবস্থিত রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ডে। সমুদ্রের জগৎকে একদম কাছ থেকে উপভোগ করা যাবে। ফুড আর অ্যাডভেঞ্চারের মিশ্রণ পাবেন ফ্লাই ডাইনিং অভিজ্ঞতা নিলে। সুগন্ধা বিচের পাশেই ব্যতিক্রম এই অভিজ্ঞতা নেওয়ার সুযোগ থাকছে।

সিলেটের নীল সবুজে

ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন বা ব্যক্তিগত বাহনে রাতে রওনা দিয়ে ভোরে পৌঁছে যাবেন সিলেট। সকালের নাশতা সেরে দিনভর ঘুরে দেখতে পারেন সিলেটের দুই উপজেলার চারটি পর্যটনকেন্দ্র। ব্যক্তিগত বাহন না থাকলে সারা দিনের জন্য ভাড়া নিতে পারেন সিএনজি অটোরিকশা বা মাইক্রোবাস। 

রাতারগুল : সিলেট শহর থেকে সিএনজি অটোরিকশা, মাইক্রোবাস বা ব্যক্তিগত বাহনে প্রথমে যেতে পারেন গোয়াইনঘাট উপজেলার বিখ্যাত জলাবন রাতারগুলে। শহর থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরত্ব। পৌঁছা যাবে এক ঘণ্টারও কম সময়ে। বর্ষা মৌসুমে রাতারগুল গ্রামের ঘাট থেকেই নৌকায় উঠতে পারবেন। শুকনো মৌসুমে খানিকটা হেঁটে বনের ভেতরে যেতে হবে। সেখানে ৭৫০ টাকায় নৌকা ভাড়া করে ঘুরতে পারবেন বনের ভেতরটায়। বর্ষায় সবচেয়ে সুন্দর হিজল-করচের রাতারগুল। তবে শুকনো মৌসুমেও বনটি আপনার চোখে ধরা দেবে ভিন্নরূপে।

চা-বাগান, দুই দিকের সুউচ্চ সবুজ পাহাড় আর নদের নীলজলের মায়ায় সময় বেশ কাটবে লালাখালে

লালাখাল : রাতারগুল থেকে ফতেহপুর-হরিপুর-তামাবিল সড়ক হয়ে ৩৭ কিলোমিটার দূরত্বে সোয়া এক ঘণ্টায় যাওয়া যাবে লালাখালে। জৈন্তাপুর উপজেলার সারি নদের আরেক নাম লালাখাল। চা-বাগান, দুই দিকের সুউচ্চ সবুজ পাহাড় আর নদের নীলজলের মায়ায় সময় বেশ কাটবে লালাখালে। তামাবিল সড়কের সারিঘাট থেকে নৌকায় যাওয়া যায় লালাখাল জিরোপয়েন্ট। তবে সময় বাঁচাতে চাইলে সারিঘাট থেকে সরাসরি লালাখাল ঘাটে যেতে পারেন। ঘণ্টাপ্রতি নৌকা ভাড়া ৫৫০ টাকা।

শ্রীপুরের রাংপানি : তামাবিল সড়ক দিয়ে আট কিলোমিটার দূরত্ব জৈন্তাপুরের শ্রীপুর চা-বাগান, হ্রদ ও রাংপানি নদ। তামাবিল সড়কের দুই পাশের চা-বাগান ও এর পাশঘেঁষা খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড় মুগ্ধতা দেবে কিছু সময়ের জন্য। শ্রীপুর লেকের উল্টো দিকে হেঁটে নামতে পারেন পাথুরে নদ রাংপানিতে। পাশেই রয়েছে সুপারি বাগান ও খাসিয়াপল্লী। 

জাফলং : এক দিনের ভ্রমণের শেষটা করতে পারেন জাফলংয়ে। নৌকা না নিয়ে সংগ্রামপুঞ্জির সোনাটিলা হয়ে হেঁটে পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ পানিতে হরেকরঙা পাথর ও ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ দেখতে যেতে হবে জিরোপয়েন্ট। ডাউকি নদীর পাশেই রয়েছে খাসিয়াপল্লী ও পানপুঞ্জি। সময় থাকলে যাওয়া যেতে পারে সেখানেও। এর আগে জাফলংয়ে সেরে নিতে পারেন দুপুরের খাবার। 


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা