× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

প্রচ্ছদ

বাঙালিয়ানায় শাড়ি

আরফাতুন নাবিলা

প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:৪৫ পিএম

আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ২০:০৩ পিএম

পোশাক ও ছবি : দেশাল

পোশাক ও ছবি : দেশাল

নারী আর শাড়ি জড়িত ওতপ্রোত। বাঙালি নারীর পছন্দ আর সংগ্রহের পোশাকে শাড়ি থাকবে না, তা যেন ভাবাই যায় না। যেকোনো উৎসব-পার্বণে কিংবা ঘরোয়া আড্ডায় নারীর পরনে শাড়ি অনন্যতা প্রকাশ করে বাঙালিয়ানার

প্রত্যেক বাঙালি মেয়েরই শাড়ির প্রতি ভালো লাগা তৈরি হয় ছোট বয়সেই। আলমারি থেকে মায়ের শাড়ি নামিয়ে পরে ফেলা, স্কুলের কোনো অনুষ্ঠানে বান্ধবীদের সঙ্গে মিলিয়ে শাড়ি পরা, ঘর থেকে বেরিয়ে বাইরের জগতে নিজেকে মেলে ধরার যে প্রয়াস সেখানেও মেয়েদের সবচেয়ে ভরসার পোশাক শাড়ি। সেই সঙ্গে ধীরে ধীরে আলমারির তাকে জায়গা করে নিতে থাকে পছন্দের সব শাড়ি। শাড়ি পরতে ভালোবাসে না বা নিজের সংগ্রহে শাড়ি রাখতে চায় না এমন মেয়ে সম্ভবত একজনও খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ বাঙালি নারী আর শাড়ি যে একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। কিন্তু এ শাড়ি কীভাবে বাঙালিয়ানার অংশ হয়ে উঠল?

শাড়ি শব্দটি এসেছে ‘শাটক’ থেকে। এর অর্থ সরু দৈর্ঘ্যের জোড়া দেওয়া কাপড়। বাংলায় তাঁতযন্ত্রের আবির্ভাবের আগে এ ধরনের কাপড় ব্যবহারের প্রচলন ছিল। যদিও তখন নারী-পুরুষ সবাই এ কাপড় ব্যবহার করত। খ্রিস্টপূর্ব ৩ হাজার বছর বা তারও আগে শাড়ির উল্লেখ থাকলেও তখন শাড়ি পরার ধরন ছিল একদম আলাদা। সে সময় নারী ব্লাউজ, সায়া ছাড়া এক টুকরো দীর্ঘ কাপড় সর্বাঙ্গে জড়িয়ে রাখত। সমাজের নিম্ন আয়ের পরিবারের সদস্যরাই এ পোশাক বেশি পরত। সে শাড়িই পরে হয়ে উঠল বাঙালি নারীর আভিজাত্যের পোশাক। অবশ্য নারীর বাঙালিয়ানায় শাড়িকে যুক্ত করার পেছনে ঠাকুরবাড়ির মেয়েদের বেশ অবদান আছে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাই সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন প্রথম ভারতীয়, যিনি ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে যোগ দিয়েছিলেন। এর ফলে বিদেশিদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল, নিয়মিত যাওয়া-আসাও ছিল। সে সময় অর্থাৎ উনিশ শতকে শাড়ি ছিল একটি একক পোশাক। আর তখন এটি পরা হতো সায়া-ব্লাউজ ছাড়া। এজন্য নারীদের বাইরে যাওয়া-আসা সামাজিকভাবে খুব একটা সহজ ছিল না। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী জ্ঞানদানন্দিনী দেবী তার সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতেন। ব্রিটিশ নারীদের সায়া-ব্লাউজের সঙ্গে শাড়ি পরতে দেখে তার এ পোশাকটি পরা নিয়ে ধারণা বদলে যায়। কলকাতায় ফিরে এসে তিনিও ঠিক সেভাবেই শাড়ি পরা শুরু করেন। স্বামী অসুস্থ থাকায় একবার কলকাতায় ভাইসরয়ের সংবর্ধনায় তাকে যেতে হয়েছিল। সেখানেও তিনি নতুন এ পদ্ধতিতে শাড়ি পরে যান। আমন্ত্রিত নারীরা শাড়ি পরার ধরনে আকৃষ্ট হয়ে সেভাবেই পরা শুরু করেন।

বাঙালি নারীর সঙ্গে শাড়ির এই যে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক তা কিন্তু ছড়িয়ে আছে দেশের সর্বত্র। সত্যি বলতে, আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শাড়ির যে বৈচিত্র্য সেটাই নারীকে শাড়ির প্রতি ভালোবাসা ধরে রাখতে অনেকটা সাহায্য করেছে। বাংলার বুননশিল্পীরা তাদের নিখুঁত কাজের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন দেশের ঐতিহ্য। তেমনই কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী শাড়ি হচ্ছে মসলিন, ঢাকাই জামদানি, কুমিল্লার খাদি, টাঙ্গাইলের তাঁত ও খেশ, রাজশাহীর সিল্ক, কাতান, কোটা, মণিপুরি, জুম, তসর সিল্ক ইত্যাদি। প্রতিটি শাড়ি নিজস্ব বুননে হয়ে উঠেছে অনন্য আর নারীকে করে তুলেছে অনন্যা। বর্তমানে এসব শাড়িতে আরও নানা কাজ করে যোগ করা হচ্ছে ভিন্নমাত্রা। যেমন নানা নকশায় ব্লক, অ্যাপ্লিক, বাটিক, সুতার কাজ, অ্যাম্বুস, এমব্রয়ডারি ইত্যাদি। দেশি ফ্যাশন ব্র্যান্ড আড়ং, রঙ বাংলাদেশ, অঞ্জন’স, বিশ্বরঙ, দেশালসহ অনেক ব্র্যান্ড এ ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছে নিয়মিত।

সারা বছর বাঙালিয়ানার ছাপ থাকলেও বৈশাখ এলে তা যেন দ্বিগুণ বেড়ে যায়। বাংলা নতুন বছর উদ্‌যাপন করে নিতে বেশিরভাগ নারীই বেছে নেন শাড়ি। তবে বৈশাখ মানেই কি শুধু লাল-সাদা শাড়ি? বৈশাখী যেকোনো আয়োজনে নারীর প্রথম পছন্দ সাদা শাড়ি, লাল পাড়। কিন্তু বৈশাখের চিরায়ত এ রঙটি কবে চালু হলো আর কেন? এর উত্তর নিয়ে অবশ্য মতভেদ রয়েছে। তবে এ কথা সত্যি, বৈশাখে লাল-সাদা প্রচলনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। সাদা হচ্ছে শুভ্রতার প্রতীক। গ্রীষ্মে সাদার আবেদন সর্বজনীন। মোগল আমলে বাদশাহকে খাজনা দেওয়া হতো লাল শালুতে বেঁধে। ধারণা করা হয়, নতুন বছর নতুন আশা নিয়ে আসে। আর বছরের শুরুতেই খোলা হয় হালখাতা আর এর রঙ হয় লাল। তার সঙ্গে মিল রেখে নতুন বছর শুরু হয় লাল-সাদা দিয়ে। হালখাতা অনুষ্ঠানের দিন ব্যবসায়ীরা সাদা ধুতি ও পাঞ্জাবি পরত। নারীরা পরত লাল পাড় সাদা শাড়ি। সেখান থেকেই অলিখিতভাবে বৈশাখে লাল-সাদা পোশাক পরার প্রচলন বলে ধারণা করা হয়।

বর্তমানে ফ্যাশনসচেতন অনেক নারী প্রচলিত এ ধারা থেকে বেরিয়ে এসেছেন। তারা লাল সাদার বদলে বেছে নিয়েছেন হালকা রঙ। মূলত ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোই তাদের সংগ্রহে রঙিন নানা নকশা যুক্ত করেছে। যেহেতু বৈশাখে প্রচুর গরম থাকে তাই হালকা রঙই প্রশান্তিদায়ক। সত্যি বলতে, সাদা শাড়ির ট্রেন্ড সব সময়ই থাকবে, তবে নানা রঙ নিয়ে যে পরীক্ষানিরীক্ষা হচ্ছে তাকেও খারাপ বলা যায় না।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা