বিশ্ব কিডনি দিবস
রাজবংশী রায়
প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৩ ২৩:৪৪ পিএম
আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২৩ ০১:২৪ এএম
ছবি : সংগৃহীত
দেশে কিডনি রোগীর মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশ ডায়ালাইসিস করার সুযোগ পান। অন্যরা অর্থাভাবে ডায়ালাইসিস নিতে পারেন না। বলছেন কিডনি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক হারুন অর রশিদ। আরও করুণ অবস্থার কথা জানালেন কিডনি অ্যাওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ সামাদ। তিনি বলেন, দেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত। বছরে প্রায় ৪০ হাজার রোগী কিডনি বিকল হয়ে মারা যাচ্ছে। শতকরা পাঁচ ভাগ রোগীরও দীর্ঘমেয়াদি ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য নেই। আক্রান্তদের ৭৫ শতাংশ বুঝতেই পারেন না তিনি কিডনি রোগে আক্রান্ত। বিশ্ব কিডনি দিবস উপলক্ষে অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে এই চিত্র মিলেছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছে।
কিডনি চিকিৎসার একমাত্র সরকারি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান রাজধানীর ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেজ অব ইউরোলজি (নিকডু) হাসপাতালে রোগীর দীর্ঘ লাইন থাকে। টিকেট কাউন্টার থেকে শুরু করে আউটডোরে চিকিৎসকের কক্ষ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা কক্ষ ও ডায়ালাইসিস সেন্টার—সর্বত্রই রোগীর ভিড়। দেড়শ শয্যার এ হাসপাতালটিতে ভর্তিপ্রার্থীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি থাকে। আউটডোরে গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ রোগী চিকিৎসা নেন দৈনিক। লজিস্টিক সাপোর্টের তুলনায় রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। আর সারাদেশে মাত্র ১২৬টি ডায়ালাইসিস সেন্টারে ২০ হাজার রোগী এই সেবা পান।
নিকডুর পরিচালক অধ্যাপক বাবরুল আলম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, হাসপাতালের লজিস্টিক সাপোর্ট অনুযায়ী ৫০ জন রোগীর মধ্যে মাত্র একজনের ডায়ালাইসিস এবং ৬০ জনে মাত্র একজনকে ভর্তি করা সম্ভব হচ্ছে। এতে করে বেশিরভাগ রোগীই চিকিৎসার বাইরে থেকে যাচ্ছে। এ সংকট দূর করতে মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে চলতি মাসে আরও সাড়ে তিনশ শয্যা চালু হবে। তখন প্রতিষ্ঠানটি ৫০০ শয্যায় উন্নীত হবে। একই সঙ্গে ডায়ালাইসিস মেশিনও আরও ২৫টি বাড়বে। এতে করে রোগীর চিকিৎসার পরিধি কিছুটা বাড়বে। তবে রোগীর যে ভিড় তাতে আরও চিকিৎসা সুবিধা বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
সারাদেশেই কিডনি রোগীর চিকিৎসার পাশাপাশি ডায়ালাইসিস সেন্টারের স্বল্পতার চিত্র পাওয়া গেছে। জেলা পর্যায়ে চিকিৎসা নেই। দুই কোটিরও বেশি মানুষ কিডনী রোগে আক্রান্ত হলেও দেশের বড় বড় হাসপাতালে এ রোগের জন্য পৃথক কোনো ইউনিট নেই। মাত্র ৮০ থেকে ৯০ জন বিশেষজ্ঞ রয়েছেন সারা দেশে। পুরানো আটটি মেডিকেল কলেজের সবগুলোতে ডায়ালাইসিস সেন্টার নেই। নিকডুর বাইরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা, সোহরাওয়ার্দী, মুগদা, গোপালগঞ্জ, কুমিল্লা, সিলেট, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, রংপুর, খুলনার আবু নাসের, সিরাজগঞ্জের শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেন্টার চালু আছে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ডায়ালাইসিস সেন্টারে রোগীদের প্রতিবারে সাড়ে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা ব্যয় হয়। দরিদ্র মানুষের পক্ষে এই ব্যয় মেটানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে চিকিৎসকরা। এ কারণে ৫১০ টাকা ব্যয়ে ডায়ালাইসিসের জন্য নিকডুতে ভিড় অনেক বেশি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, হাসপাতালটিতে গতকাল বুধবার পর্যন্ত ডায়ালাইসিসের সুযোগ চেয়ে চার হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়েছে। তাদের অর্ধেকেরও কম রোগী ডায়ালাইসিসের সুযোগ পেয়েছেন। অন্যরা এখনও অপেক্ষায় রয়েছেন। তাদের কতজনের মৃত্যু হয়েছে তার হিসাব নেই কারও কাছে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কিডনি ইনস্টিটিউটটে ৬০টি মেশিনে ডায়ালাইসিস হয়। সেগুলোতে প্রতিদিন গড়ে ১১০ থেকে ১২০ জন রোগী সেবা পান। অন্যরা বঞ্চিত হন।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, সরকার আন্তরিক হলে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় মানুষের ডায়ালাইসিস নিশ্চিত করা সম্ভব। গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে অতি দরিদ্ররা ৪০০ টাকায় এবং দরিদ্ররা ৫০০ টাকা প্রতিবার ডায়ালাইসিসের সুযোগ পাবেন। আরও ১০০ টাকা দিলে তাকে গাড়িতে করে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হবে।
এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ )পালিত হচ্ছে বিশ্ব কিডনি দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় ‘সুস্থ কিডনি সবার জন্য : অপ্রত্যাশিত দুর্যোগে প্রস্তুতি নিন, প্রয়োজন ঝুঁবিপূর্নদের সহায়তা’। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। নিকডুতে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় আলোচনা সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক প্রধান অতিথি থাকবেন।