সিরাজগঞ্জ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৩ ১৩:০২ পিএম
আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৩ ১৫:১১ পিএম
সংগৃহীত
সিরাজগঞ্জে যক্ষ্মা রোগীর
সংখ্যা হঠাৎ করেই বাড়ছে। তবে এসব রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার সরঞ্জামেরও অভাব রয়েছে। সিরাজগঞ্জের
সিভিল সার্জন অফিস জানিয়েছে, ২০২২ সালে জেলায় ৫ হাজার ৩৮৩ জনের যক্ষ্মা শনাক্ত হয়।
চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি দুই মাসেই ৯২৮ জনের যক্ষ্মা শনাক্ত হয়েছে। জেলার শিশুরাও
ব্যাপক হারে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হচ্ছে। ২০২২ সালে জেলায় ২৫২ শিশুর যক্ষ্মা শনাক্ত
হয়েছিল। তবে চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এ দুই মাসে ৪২ শিশুর যক্ষ্মা শনাক্ত
হয়েছে।
সিভিল সার্জন অফিস জানিয়েছে,
জেলায় যক্ষ্মার কেচ নোটিফিকেশন রেট (সিএনআর) ১৬৬ দশমিক ৯০। অর্থাৎ প্রতি ১ লাখ মানুষের
মধ্যে প্রায় ১৬৭ জন যক্ষ্মা রোগী রয়েছেন। জেলায় আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে যক্ষ্মা রোগীর
সংখ্যা। তবে যক্ষ্মা চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির প্রচণ্ড অভাব রয়েছে।
জানা গেছে, জেলার সরকারি
হাসপাতালগুলোয় শিশুদের যক্ষ্মা শনাক্তের প্রধান পদ্ধতি স্ট্রুল পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা
নেই। এ কারণে শিশুদের যক্ষ্মা শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ছে। জেলার নয়টি উপজেলার মধ্যে
তিনটিতে বুকের এক্স-রে করার ডিজিটাল মেশিন ও কফ পরীক্ষার জন্য জিনএক্সপার্ট মেশিন নেই।
এ রোগের চিকিৎসার জন্য জেলায় মাইক্রোস্কপি মেশিন ১৬টি ও ট্রু-নেট মেশিন রয়েছে মাত্র
দুটি, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এ ছাড়া হাড়ের মধ্যে যক্ষ্মা পরীক্ষার জন্য এমআরআই,
যক্ষ্মা আক্রান্ত স্থানের মাংস পরীক্ষার জন্য বায়োপসি ও ফুসফুসে যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীর
ফুসফুসের পানি বা রস পরীক্ষার জন্য (এফএনএসি) জেলার সরকারি হাসপাতালে কোনো যন্ত্রপাতি নেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন,
২০৩৫ সালের মধ্যে দেশ থেকে যক্ষ্মা নির্মূলের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। সরঞ্জামের অভাবে
সিরাজগঞ্জে তা বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা.
রামপদ রায় বলেন, ‘যক্ষ্মা আমাদের বড় স্বাস্থ্য সমস্যা। জেলায় যক্ষ্মা
আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কম নয়। কিন্ত যক্ষ্মা আক্রান্ত সব ধরনের রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার
ব্যবস্থা আমাদের নেই। হাড়ের যক্ষ্মা, ফুসফুসের যক্ষ্মা পরীক্ষা ও যক্ষ্মা আক্রান্ত
স্থানের মাংস পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা আমাদের নেই।’
তিনি বলেন, ‘এসব কারণে রোগীকে ঢাকায় বা বেসরকারিভাবে পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। এ কারণে
অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হচ্ছে ও সময় ক্ষেপণ হয়ে সময়মতো চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাঘাত
ঘটছে। ফলে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে।’
সিরাজগঞ্জ বক্ষব্যাধি
হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ডা. এবিএম ফারহান ইমতিয়াজ বলেন, ‘যক্ষ্মা একটি ছোঁয়াচে রোগ। তাই যক্ষা আক্রান্ত রোগীর পরিবারের সব
সদস্যকে টিবি প্রভেন্টিভ থেরাপি (টিপিটি) চিকিৎসা দিতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীদের প্রয়োজনীয় সময়ের জন্য চারটি ট্যাবলেটের সমন্বয়ে প্রস্তুত করা (ফোর-এফ) ট্যাবলেটসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে সব ধরনের যক্ষ্মা পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় সঠিক সময়ে অনেকের রোগ শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এসব কারণে অনেক সময় রোগীকে চিকিৎসা দিতে দেরি হওয়ায় রোগীর কষ্ট বাড়ে। রোগমুক্ত হতে সময় লাগে, এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।’