চট্টগ্রামের ডেঙ্গু পরিস্থিতি
আবু রায়হান তানিন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৩ ১৪:৫৪ পিএম
আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২৩ ১৪:৫৪ পিএম
প্রতীকী ছবি
চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকার আট বছরের শিশু তাজবীরের ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার পর বাসায় চলছিল চিকিৎসা। হঠাৎ রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে যাওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালে শয্যা খালি না থাকায় তাকে নিয়ে ফেরত আসতে হয়। এর এক দিন পর শয্যা খালি হলে তাকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শুধু তাজবীর নয় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছোটাছুটি করতে হচ্ছে অনেককেই। তাজবীরের বাবা আবু সাঈদ মোহাম্মদ তামান্না বলেন, ‘আরও চার-পাঁচটা বাচ্চার সঙ্গে একই ঘটনা ঘটেছে। বানের পানির মতো রোগী আসছে। কিন্তু শয্যা খালি নেই। তিন-চারজন রীতিমতো কান্নাকাটি করেছে। বাচ্চাকে নিয়ে কই যাবে, কী করবে ভেবে পাচ্ছে না।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কেন নিয়ে গেলেন নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেখানকার অবস্থা আরও খারাপ। রোগীর চাপ বেশি। তারা রোগী ফিরায় না। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে সেখানে ভালো চিকিৎসা পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই।’
রোগী ফেরত যেতে হচ্ছে স্বীকার করে মা ও শিশু হাসপাতালের পরিচালক মো. নুরুল হক বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে, প্রতিদিন গড়ে ৬০-৭০ জন ভর্তি হচ্ছে। আর শয্যা না থাকলে রোগী ফেরত যাচ্ছে, এটা স্বাভাবিক ঘটনা। ডেঙ্গুর সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক রাজীব পালিত বলেন, ‘রোগী বাড়ছে। এর মধ্যে একটা বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালু করেছি। এ ছাড়াও মেডিসিন ও শিশু বিভাগের আরও পাঁচটি ওয়ার্ডে চিকিৎসা দিচ্ছি। তবে প্রতিদিনই রোগী বাড়ছে।’
চট্টগ্রামে গতকাল বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৪ হাজার ৯৪৬ জন। প্রায় প্রতিদিনই মানুষ মারা যাচ্ছে। এ পর্যন্ত মারা গেছে ৫০ জন। মৃতদের মধ্যে ১৯ জনই শিশু। এ ছাড়া ১৮ জন নারী আর ১৩ জন পুরুষ রয়েছে। কয়েক মাস ধরে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। এপ্রিলে আক্রান্ত ছিল ১৮ জন। মে মাসে তিনগুণ বেড়ে হয় ৫৩ জন। জুনে তা পাঁচগুণেরও বেশি বেড়ে হয় ২৮৩ জন। জুলাইয়ে বাড়ে আট গুণেরও বেশি, ২ হাজার ৩১১ জন। চলতি মাসের গতকাল পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ১৭০ জন। অন্যদিকে মৃত্যু জানুয়ারিতে ছিল তিনজন, জুনে ছয়, জুলাইয়ে ১৬ জন। আগস্টে এখন পর্যন্ত মারা গেছে ২৫ জন।
রোগী বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের কিছু করার নেই জানিয়ে জেলা সিভিল সার্জন ইলিয়াস চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের কাজ রোগীর চিকিৎসা দেওয়া, সেটা দিচ্ছি। কিন্তু এখানে ডেঙ্গুর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। এটা আমাদের কাজ না। সিটি করপোরেশনের কাজ। তারা এটা নিয়ে কাজ করছে।’
পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় মশক নিধনে ১০০ দিনের ক্রাশ প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। তবে এতে যে খুব একটা লাভ হয়নি এমন চিত্রই উঠে আসছে ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চসিক ব্যর্থ মন্তব্য করে জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘তারা মশক নিধনে কাজ করছে বলছে, কিন্তু সুফল নেই। শুধু ওষুধ ছিটিয়ে তো সমাধান হবে না। গণসচেতনতাও দরকার। কিন্তু এই দায়িত্ব চসিকের, এক্ষেত্রে মানুষকে সম্পৃক্ত করা, সচেতনতা সৃষ্টিতে চসিক ব্যর্থ হয়েছে।’
মশক নিধনের ব্যর্থতার অভিযোগ উড়িয়ে দিলেও নাগরিক সচেতনতার অভাবে মশক নিধনে সুফল না পাওয়ার বিষয়ে একমত চসিকের মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সরফুল ইসলাম মাহীর। তিনি বলেন, ‘আমাদের কার্যক্রম চলমান আছে। ওষুধের কার্যকারিতাও ঠিক আছে।’
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না কেনÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মানুষ সচেতন না। এখানে সচেতনতার প্রয়োজন বেশি। আমাদের বাড়ির আঙিনায় যাওয়ার কথা না। তাও অনেক জায়গায় গিয়ে দেখি আঙিনায় মশার লার্ভা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে, পানি জমতে না দেওয়ার ব্যাপারে মানুষের সচেতনতা দেখি না।’