চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:১৯ এএম
প্রতীকী ছবি
চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ডের মাদামবিবিরহাট এলাকার গৃহবধূ বিবি আলমাস। তিন মেয়ের মা আলমাস ছিলেন তিন মাসের গর্ভবতী। এর মধ্যেই দিন সাতেক আগে জ্বরে আক্রান্ত হন। জ্বরের সঙ্গে শরীরে ব্যথা বাড়ায় তাকে চট্টগ্রামের বেসরকারি মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। পরে আরও ভালো চিকিৎসার আশায় তাকে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত রবিবার ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিবি আলমাসের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াস চৌধুরী । শুধু বিবি আলমাস নন, চট্টগ্রামে চলতি বছর মোট ৫৫ জন ডেঙ্গুতে মারা গেছেন। এর মধ্যে সীতাকুণ্ড উপজেলার ১০ জন।
জানা গেছে, রবিবার মারা যাওয়া ৩৩ বছর বয়সি আলমাসের তিন মেয়ের নাম তানিশা, তুষ্টি ও সাদিয়া। এর মধ্যে ছোট মেয়ে সাদিয়ার বয়স সাড়ে তিন বছর। মা মারা গেছে; এটা এখনও বোঝার বয়স হয়নি সাদিয়ার। সাদিয়ার বাবা জানে আলম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘মেয়েরা তাদের মাকে খুঁজছে। বারবার জিজ্ঞেস করছেÑ মা কোথায়। তাদের কিছু বলতে পারছি না। বুকটা ফেটে যাচ্ছে।’ বলেই কাঁদতে শুরু করেন জানে আলম।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী চলতি বছর চট্টগ্রাম জেলায় মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৬ হাজার ২৬৬ জন। যার মধ্যে ৪ হাজার ৩২৯ জন নগরের এবং বাকি ১ হাজার ৯৩৭ জন ১৫ উপজেলার। এই ১ হাজার ৯৩৭ জনের ৭৩৭ জনই সীতাকুণ্ড উপজেলার। উপজেলা পর্যায়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে পটিয়া উপজেলায়, ১৬১ জন।
জানে আলম বলেন, এবার এখানে ঘরে ঘরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে। সবাই একটা আতঙ্কের মধ্যে আছে। এর মধ্যে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কিংবা সচেতনতা বৃদ্ধিতে উপজেলা প্রশাসন কোনো উদ্যোগ নিয়েছিল কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন কিছু চোখে পড়েনি।
একই এলাকার গৃহবধূ রোজি আক্তার সম্প্রতি ডেঙ্গু আক্রান্ত হন। এর মাসখানেক আগে তার আট বছর বয়সি মেয়ে আরবীও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে রোজি আক্তার বলেন, এখানে সবাই ডেঙ্গু আতঙ্কে আছে। আশপাশের অনেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসনের কোনো কর্মসূচি চোখে পড়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনিও না সূচক জবাব দেন।
সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নূর উদ্দিন বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্য শিক্ষা ক্যাম্পেইন করছি। বাজারে বাজারে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।’ ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভাটিয়ারী, সোনাইছড়ি, কুমিরা; এসব এলাকাতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এগুলো শহর লাগোয়া। সেখানকার লোকজন শহরে কাজ করতে যায়। তারা শহরে কাজ করতে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছে, এমন হতে পারে। আবার এসব এলাকায় এডিস মশার লার্ভা ছড়িয়ে গেছে এমনও হতে পারে।’ এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের কাজ না। উপজেলা প্রশাসন এটা দেখবে।’
এ বিষয়ে কথা বলতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি একটি সভায় আছেন বলে জানান। সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য অহিদুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের ৯ ওয়ার্ডে মশার ওষুধ ছিটানোর উদ্যোগ নিয়েছিলাম। শুরুও করেছিলাম। কিন্তু অতিবৃষ্টির কারণে পরে সেটা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এখন আবার শুরু করব।’