প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:৪৪ পিএম
আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:৪৬ পিএম
২৮ জানুয়ারি মধ্যরাতে ইরানের একটি সামরিক অস্ত্র তৈরির কারখানায় ড্রোন হামলা হয়। ছবিটি একটি ভিডিও ফুটেজ থেকে নেওয়া।
ইরানের ইস্পাহানের একটি সামরিক অস্ত্র তৈরির কারখানায় শনিবার মধ্যরাতে ড্রোন হামলা হয়। লক্ষবস্তুতে আঘাত হানার আগেই ড্রোনগুলো ধ্বংস করে ইরানের প্রতিরক্ষা বিভাগ। ঘটনার দুদিন পরও কোনো পক্ষ হামলার দায় স্বীকার করেনি। ইরানও কাউকে সরাসরি দায়ী করেনি। তবে হামলার পেছনে ইসরায়েলের হাত থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা।
ইস্পাহানের সামরিক অস্ত্র তৈরির কারখানায় ড্রোন হামলার পেছেনে ইসরায়েলের হাত থাকতে পারে বলে রবিবার (২৯ জানুয়ারি) প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তার বরাতে ওই দাবি করা হয়।
তবে একই দিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সদরদপ্তর পেন্টগনের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট্রিক রাইডার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ইরানের সামরিক স্থাপনায় হামলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সম্পর্ক নেই।’ কিন্তু হামলার সঙ্গে ইসরায়েলের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা, সেই বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রবিবার সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্রকে ইরানে ড্রোন হামলা সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো উত্তর দেননি। তবে বিষয়টি অস্বীকারও করেননি তিনি।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী হোসাইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান ড্রোন হামলাকে ‘কাপুরুষোচিত’ বলে মন্তব্য করেছেন। এ ধরনের হামলা ইরানের নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তবে ওই হামলার সঙ্গে ইসরায়েল জড়িত কিনা, সে বিষয়ে তিনি কোনো ইশারা দেননি।
ইরানের প্রতিরক্ষা বিভাগ রবিবার (২৯ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে জানায়, শনিবার (২৮ জানুয়ারি) রাত ১১টা ৩০ মিনিটের সময় ইস্পাহানের একটি সামরিক অস্ত্র তৈরির কারখানায় তিনটি ড্রোন একযুগে হামলা চালিয়েছে। কিন্তু কোনটিই লক্ষবস্তুতে আঘাত হানতে পারেনি। একটিকে গুলি করে ধ্বংস করা হয়েছে। আর দুটি ড্রোন আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আটকে গেছে। তাও ধ্বংস করা হয়েছে। জান-মালের কোনো ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি।
ইরানের বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, রবিবার ভোরে ঘটনাস্থলে বিটক শব্দ শোনা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেছে কথিত সামরিক কারখানায় আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। কারখানায় বাইরে দমকল বাহিনীর দেখা গেছে।
গত জুলাইয়ে সামরিক স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে ইরান। ওই ব্যক্তি দেশটির কুর্দি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ইসরায়েলের হয়ে ওই হামলার পরিকল্পনা করছিলেন।
গত কয়েক বছরে ইরানের সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা ও সামরিক স্থাপনায় অনেকগুলো হামলা হয়েছে। ২০২১ সালে দেশটির নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনায় সাইবার হামলায়। ওই হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে তেহরান।
পাঁচ বিশ্ব শক্তির সঙ্গে ইরানের ২০১৫ সালে করা পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে গুরুতর আপত্তি রয়েছে ইসরায়েলের। জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) চুক্তিটি থেকে ২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসন একতরফ বের হয়ে যায়। এরপর থেকে চুক্তিটি এক ধরনের বাতিল হয়ে পড়ে। ২০২১ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে চুক্তিটি নবায়নের চেষ্ট করছে বাইডেন প্রশাসন।
এই চুক্তি নিয়ে ইসরায়েলের দুই ধরনে অবস্থান রয়েছে। একটা অংশ মনে করে, এই চুক্তি হলে ইরানের হাতে বিপুল অর্থ আসবে। ফলে দেশটি নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করবে। মজবুত করবে আঞ্চলিক আধিপত্য।
আরেকটা অংশ মনে করে, জেসিপিওএ নবায়ন হওয়া ভালো। এতে করে ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম নজরদারিতে থাকবে।
সূত্র: রয়টার্স।