প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ ১৮:৫৪ পিএম
লোহা এবং ইস্পাত শিল্প গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের একটি প্রধান উৎস। এই শিল্প থেকে বিশ্বব্যাপী ৯ শতাংশ কার্বন নির্গমন হয়। আর আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থার (আইইএ) ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী, শিল্প খাতের মধ্যে লোহা ও ইস্পাত শিল্প থেকে সবচেয়ে বেশি ২৭ শতাংশ কার্বন নির্গমন হয়।
যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এসব শিল্পে ব্যবহৃত বিদ্যমান চুল্লিগুলোর জন্য নতুন একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন, যা এই শিল্প থেকে কার্বন নির্গমনের হার ৯০ শতাংশ কমাতে পারে। বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষণা প্রতিবেদনটি সাময়িকী জার্নাল অব ক্লিনার প্রোডাকশনে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, লোহা ও ইস্পাত শিল্পে বর্তমানে ব্যাপক হারে ব্যবহার করা হয় ব্লাস্ট ফার্নেস (ধাতু সংক্রান্ত চুল্লি)। এই চুল্লি কাঁচা লোহা, অন্যান্য ক্ষেত্রে সিসা বা তামা উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। ইস্পাত উৎপাদনে ব্যবহৃত ব্লাস্ট ফার্নেস চুল্লিতে ব্যবহার করা হয় কোক (এক ধরনের কয়লা)। এই কোক খনি থেকে আসে। চুল্লিতে ব্যবহৃত এই বিশেষ ধরনের কয়লা বিপুল পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ করে থাকে।
ড. হ্যারিয়েট কিলডাহল অধ্যাপক ইউলং ডিংয়ের সঙ্গে নতুন একটি পদ্ধতি প্রণয়ন করেছেন। ড. হ্যারিয়েট কিলডাহলের মতে, তাদের প্রযুক্তির লক্ষ্য এই কার্বন ডাই-অক্সাইডকে কার্বন মনোক্সাইডে রূপান্তর করা। এই কার্বন মনোক্সাইডকে লোহার আকরিক বিক্রিয়ায় পুনরায় ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি একটি ‘থার্মোকেমিক্যাল’ চক্র। এই চক্র ব্যবহার করে দেখা যায়, তাপমাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে কার্বন মনোক্সাইড রাসায়নিক বিক্রিয়া করে। এইভাবে সাধারণত ক্ষতিকারক কার্বন ডাই-অক্সাইড একটি প্রয়োজনীয় অংশে পরিণত হয়, যা প্রায় নিখুঁতভাবে ‘কার্বন লুপ’ গঠন করে।
গবেষকদের মতে, এই পদ্ধতিতে কোকের পরিমাণ অনেক কম লাগে এবং ইস্পাত তৈরির ক্ষেত্রে কার্বন নিঃসরণ ৮৮ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দেয়।
গবেষকরা জানিয়েছেন, যদি এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করা হয়, তবে কার্বন নির্গমন ব্যাপক হারে কমানোর পাশাপাশি ৫ বছরে ১২৮ কোটি পাউন্ড সাশ্রয় করতে পারে।
অধ্যাপক ডিং বলেছেন, ‘ইস্পাত খাতকে ডিকার্বনাইজ (কার্বনমুক্ত) করার জন্য বর্তমান প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে বিদ্যমান কারখানাগুলোকে পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেওয়া। পাশাপাশি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎচালিত বৈদ্যুতিক আর্ক ফার্নেস চালু করা। একটি বৈদ্যুতিক আর্ক ফার্নেস কারখানা তৈরি করতে ১০০ কোটি পাউন্ডের বেশি খরচ হতে পারে, যা অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাজনক নয়। আমরা যে পদ্ধতির প্রস্তাব করছি তা বিদ্যমান কারখানাগুলোতেই ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি একই সঙ্গে নতুন করে বিনিয়োগের খরচ সাশ্রয় করবে, পাশাপাশি কার্বন নিঃসরণ হ্রাস এবং উৎপাদন খরচ দুটোই ব্যাপকভাবে কমাবে। সূত্র : জার্নাল অব ক্লিনার প্রোডাকশন