প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১১:১১ এএম
আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:৪১ পিএম
নামিবিয়ার সেনা ঘাঁটিতে চীনের সেনারা। ছবি : সংগৃহীত
আফ্রিকায় চীনের সামরিক ঘাঁটি গড়ে তোলার সম্ভাব্যতা নিয়ে শঙ্কিত ওয়াশিংটন। নানাভাবে তারা চেষ্টাও করছে এ প্রচেষ্টাকে বানচাল করে দেওয়ার। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনকে নিয়ে এত চিন্তা করার দরকার নেই।
মহাদেশের অন্য যেখানেই তারা ঘাঁটি বানাক না কেন, পশ্চিম আফ্রিকার আটলান্টিক উপকূল বা মূল ভারত সাগর বন্দরে যাতে আস্তানা না গাড়তে পারে, শুধু সেদিকে নজর রাখলেই চলবে।
পুরো মহাদেশে মাত্র একটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে চীনের। সেটির অবস্থান হর্ন অব আফ্রিকার জিবুতিতে। পেন্টাগনের দাবি, অ্যাঙ্গোলা, ইকুয়াটোরিয়াল গিনিয়া, কেনিয়া, নামিবিয়া, সেশেলস এবং তাঞ্জানিয়াতেও ঘাঁটি নির্মাণের পরিকল্পনায় রয়েছে বেইজিং।
যুক্তরাষ্ট্রের নিজেরও স্থায়ী একটি ঘাঁটি রয়েছে জিবুতিতে। এ ছাড়া নাইজারে রয়েছে বিমান ঘাঁটি। কেনিয়া ও সোমালিয়ায় রয়েছে সেনা ঘাঁটি। ইউএস ন্যাশনাল ওয়ার কলেজের রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা কৌঁসলির সহযোগী অধ্যাপক ডন মারফি বলেন, সাব সাহারা অঞ্চলে চীনা ও রুশ ঘাঁটি তৈরিতে বাধা দেওয়াকে অগ্রাধিকার তালিকার নিম্নে রাখা উচিত।
মারফির মতে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উচিত চীনকে আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে সামরিক ঘাঁটি তৈরিতে বাধা দেওয়া। কারণ এটি না করা হলে, আটলান্টিকের জলপথে প্রবেশাধিকার পেয়ে যেতে পারে তারা।
সহযোগী এ অধ্যাপক আরও জানান, পূর্ব আফ্রিকায় চীন ঘাঁটি গাড়লে ঝামেলায় পড়বে ওয়াশিংটন। কারণ তখন গুরুত্বপূর্ণ কিছু জলপথে প্রভাব ফেলতে পারবে বেইজিং। এক কথায় ভারত সাগরে আরও ক্ষমতা প্রদর্শনের সুযোগ পাবে চীন। এ জলপথগুলো সি লাইনস অব কমিউনিকেশনস (এসএলওসিস) নামে পরিচিত।
মারফি বলেন, এ ছাড়া ওই অঞ্চলে অন্যান্য সম্ভাব্য চীনা ঘাঁটির অবস্থান নিয়ে ততটা মাথা না ঘামালেও চলবে।
বেইজিং অবশ্য বরাবরই ওয়াশিংটনের এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে এসেছে। তারা জানিয়েছে, আরও সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের কোনো পরিকল্পনা নেই। ২০২১ সালে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নতুন স্থাপনা তৈরির বিষয়টি অস্বীকার করে। পাশাপাশি মন্ত্রণালয়টির পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘সেকেলে স্নায়ুযুদ্ধ মানসিকতা এবং শুধু নিজের লাভের ধ্যানধারণা বাদ দেওয়াসহ বছরের পর বছর অনির্ভরযোগ্য প্রতিবেদন প্রকাশ থেকে বিরত থাকার’ অনুরোধ জানানো হয়।
ইউএস আফ্রিকা কমান্ড (আফ্রিকম)-এর সাবেক প্রধান জেনারেল স্টিফেন টাউনসেন্ড গত বছর আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে সম্ভাব্য এক চীনা সামরিক ঘাঁটির ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তার উদ্বেগ মূলত ছিল ইকুয়াটোরিয়াল গিনিয়াকে ঘিরে। সেখানে চীন এরই মধ্যে বাণিজ্যিক বন্দর তৈরি করেছে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে জ্যেষ্ঠ মার্কিন কূটনৈতিক কর্মকর্তারা ইকুয়াটোরিয়াল গিনিয়াতে সফরও করেন। সেখানে গিয়ে দেশটির কর্তাব্যক্তিদের তারা চীনের সঙ্গে কোনো চুক্তিতে না যাওয়ার ব্যাপারে রাজি করানোর চেষ্টা করেন।
ড্যানিশ ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের জ্যেষ্ঠ গবেষক লুক পাটেয়ের মতে, ওয়াশিংটনের সঙ্গে বেইজিংয়ের প্রতিযোগিতা ক্রমশ বাড়ছে। এ কারণেই আফ্রিকায় চীনের সামরিক ঘাঁটির বিষয়টি নিয়ে মনোযোগ দিচ্ছে তারা।
পাটেয় বলেন, ওয়াশিংটন যেমন আফ্রিকায় চীনের সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের সম্ভাব্যতাকে অতি নাটকীয়ভাবে উপস্থাপন করছে। ঠিক সেভাবে বেইজিং মহাদেশটিতে নিজেদের সামরিক উপস্থিতির বিষয়টি ছোট করে দেখাচ্ছে।
জ্যেষ্ঠ এ গবেষকের মতে, মূলত চীনের সামরিক সক্ষমতার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের বিরক্তির উদ্রেক করছে। মার্কিন সামরিক বাহিনী ধীরে ধীরে টের পাচ্ছে যে বিশ্বে তাদের একচ্ছত্র আধিপত্যের দিন ফুরিয়ে আসছে।
সূত্র : সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট