প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১১:০১ এএম
আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১১:৩৯ এএম
দক্ষিণ ইরানে রাশিয়ার নির্মিত বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুল্লি ভবন। ছবি : আলজাজিরা
পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি স্তরে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ না করার বিনিময়ে ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়ে ২০১৫ সালে পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
ওই চুক্তি জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচিত। ইরান, চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে ওই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায়। তখন যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করেছিল যে, চুক্তি মেনে চলছে না তেহরান। যুক্তরাষ্ট্র তখন ইরানের ওপর কঠোরতম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যা এখনও কার্যকর রয়েছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় থাকাকালীন ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় এবং স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর অংশগ্রহণে তেহরানের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনা প্রায় দুই বছর আগে ভিয়েনায় শুরু হয়েছিল। কারণ, এ ছাড়া কোনো কার্যকর বিকল্প ছিল না।
ইরানের সঙ্গে পশ্চিমা সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা
অনেক উত্থান-পতনের মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে ইউরোপীয় প্রস্তাবের ভিত্তিতে একটি চূড়ান্ত নীতিমালা তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত ইরান এবং পশ্চিমারা একে অপরকে প্রতিশ্রতি পূরণ না করার দায়ে অভিযুক্ত করে। এরপর ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হলে রাশিয়াকে ড্রোন সরবরাহ করার অভিযোগে পশ্চিমারা ইরানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সংস্থাগুলোর ওপর নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তেহরান জানিয়েছে, তারা যুদ্ধের বিরুদ্ধে এবং যুদ্ধের কয়েক মাস আগে তারা মস্কোর কাছে ড্রোন বিক্রি করেছিল।
গত সেপ্টেম্বরে পুলিশ হেফাজতে ২২ বছর বয়সি নারী মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর ইরানজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ইরান পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে অস্থিরতা সংগঠিত করার জন্য অভিযুক্ত করেছে এবং পশ্চিমারা বিক্ষোভে তেহরানের প্রতিক্রিয়াকে শাস্তি দিতে বহু দফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
আলোচনা এখন কোথায় দাঁড়াবে?
ওয়াশিংটন জানিয়েছে, পারমাণবিক চুক্তি পুনরুদ্ধারকে তারা এখন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখছে না। এরপরই ইরান যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ভণ্ডামির অভিযোগ এনে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ওই চুক্তিকে অকার্যকর করার জন্য ইরানবিরোধীদের স্বার্থরক্ষা করেছে।
চুক্তিটির মৃত্যুর বিপরীতে উভয় পক্ষই ‘প্ল্যান বি’ নিয়ে ভাবছে, যা উদ্বেগজনক। ওই ‘প্ল্যান বি’ অনুসারে উভয় পক্ষ শেষ পর্যন্ত একটি সামরিক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে পারে।
তারপরও আলোচনায় অগ্রগতির কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি এবং পশ্চিমা দেশগুলো তেহরানের প্রতি আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে সহযোগিতার মাত্রা বাড়ানোর জন্য অনুরোধ অব্যাহত রেখেছে।
ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন অভিযোগে আটক বন্দিদের বিনিময় নিয়েও আলোচনায় বসেছে। এই উদ্যোগ পারমাণবিক আলোচনার সঙ্গে জড়িত করতে পারলে ইতিবাচক ফল আসতে পারে।
সর্বশেষ উন্নয়ন কী?
আইএইএর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসির তেহরানে সম্ভাব্য সফর নিয়ে কয়েক মাস ধরে আলোচনা চলছে। কারণ, চুক্তির বিরোধীরা সংস্থাটিকে ‘রাজনৈতিক হাতিয়ার’ হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ অব্যাহত রেখেছে তেহরান।
পারমাণবিক ওই চুক্তিটিকে বর্তমানে ‘অন্তঃসারশূন্য’ বলে অভিহিত করেছেন গ্রোসি। তবে তিনি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কতটা শান্তিপূর্ণ তা যাচাই করার জন্য আরও পরিদর্শন এবং পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষকদের প্রবেশাধিকার দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।
সূত্র : আলজাজিরা