× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

চীনের শান্তি প্রস্তাব নিয়ে আগ্রহী মস্কো ও কিয়েভ

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০০:১৭ এএম

আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৮:১০ পিএম

ইউক্রেনে রুশ হামলা ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় সামরিক ঘটনা। সংগৃহীত ফটো

ইউক্রেনে রুশ হামলা ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় সামরিক ঘটনা। সংগৃহীত ফটো

ইউক্রেনে রুশ হামলা ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় সামরিক ঘটনা। বিশ্বায়ন ও মুক্ত অর্থনীতির এই যুগে পূর্ব ইউরোপের এই যুদ্ধে ঢেউ সারা বিশ্বকে স্পর্শ করতে বেশি সময় নেয়নি। করোনা-উত্তর বিশ্বে এই যুদ্ধ মড়ার ওপর খাড়ার ঘায়ের মতো গরিব দেশগুলোকে অস্থির করে তোলেছে। চলতি শতাব্দির এ যুদ্ধ আজ শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় বছরে পা দিল। 

যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত পটভূমি: তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়া পশ্চিম ইউরোপে হামলা চালাতে পারে, এমন একটি আতঙ্ক ছড়িয়ে সামরিক জোট নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো) গঠনের উদ্যোগ নেয় যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত জোটটির বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৩০। 

অথচ ১৯৯১ সোভিয়েত রাশিয়ার আনুষ্ঠানিক বিলুপ্তির আগ পর্যন্ত জোটটি সদস্য সংখ্যা ছিল বর্তমান সদস্যের প্রায় অর্ধেক। অর্থ বাকি দেশগুলোকে পরবর্তীতে সদস্য করা হয়। এটা নিয়ে শুরু থেকে রুশ ফেডারেশনের নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও রাজনীতিবিদরা আপত্তি জানিয়ে আসছিল। 

কিন্ত টানা হুশিয়ারি সত্ত্বেও রাশিয়ার পেটের ভেতরকার বলকান অঞ্চরের রাষ্ট্র লিথুনিয়া, লাটভিয়া, এস্তুনিয়াকে ন্যাটোর সদস্য করা হয়। সোভিয়েত রাশিয়ার সাবেক সদস্য  ও রুশ ফেডারেশনের বৃহত্তম প্রতিবেশী ইউক্রেনকেও ন্যাটোর সদস্য করার ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। জোটটির ২০২২ সালের স্পেনের শীর্ষ সম্মেলনে এমনটি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। 

এ অবস্থায় ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে ইউক্রেন, ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রকে কড়া হুঁশিয়ার দিতে থাকে মস্কো। ওই ডিসেম্বর ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রকে ইউক্রেন সংকট সমাধানের জন্য দুটি আলাদা প্রস্তাব দেয় রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় এক লাখ সেনা মোতায়েন করে দেশটি। 

হামলা: প্রস্তাবের জবাব দিতে দেরি করায় এবং বিলম্বিত উত্তর সন্তোষজনক না হওয়ায় কয়েক ঘণ্টা আগে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁখো ও জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসকে জানিয়ে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি শেষ রাতে আকাশ, নৌ ও স্থলপথে এক যোগে ইউক্রেন হামলা শুরু করে রাশিয়া। 

দক্ষিণ পূর্ব-দিকে ওদেসা, মারিওপোল, উত্তর-পশ্চিম দিকে খারকিভ এবং রাজধানী কিয়েভ সমানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে থাকে রাশিয়া। কিন্তু কিয়েভ দখলের রাশিয়ার শুরুর দিকের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। দ্রুত কৌশল বদল করে দানবাসের লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক স্বাধীন করাই নিজেদের ইউক্রেন অভিযানের মূল উদ্দেশ্য বলে ঘোষণা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। 

রণক্ষেত্রের অবস্থা: রাশিয়া ইতোমধ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী লুহানস্ক ও দোনেৎস্কে স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি দিয়েছে। এই দুই অঞ্চলসহ দক্ষিণ-পূর্ব দিকের খেরসন ও জাপোরিঝিয়া গত সেপ্টম্বরে নিজেদের অংশ বলে ঘোষণা করেছে রাশিয়া। এগুলোর মধ্যে লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক মোটামুটি রাশিয়ার দখলে চলে গেছে। আর বাকি দুটির অধিকাংশ অংশও রুশ সেনাদের নিয়ন্ত্রণে। 

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে দোনেৎস্কের কৌশলগত বাখমুত দখলের জন্য ব্যাপক যুদ্ধ করছে রাশিয়া। এক সপ্তাহ আগে রাশিয়া বসন্ত অভিযান শুরু করেছে। বাখমুত দখল করতে পারলে পার্শ্ববর্তী আরও কিছু অঞ্চল সহজে নিয়ন্ত্রণে নেওয়া রাশিয়ার জন্য সহজ হবে। 

ক্ষয়ক্ষতি: ইতোমধ্যে উভয় দেশের এক লাখ করে সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আর সাত হাজারের বেশি সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। প্রতিবেশী দেশে শরণার্থী হয়েছে ইউক্রেনের ৮০ লাখের বেশি মানুষ। তাছাড়া ইউক্রেনের জ্বালানি, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ অন্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠতে কয়েক দশক লেগে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

জাতিসংঘ প্রধানের বিবৃতি: যুদ্ধের দ্বিতীয় বছরে প্রবেশের প্রাক্কালে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করা নিয়ে আলোচনা করেছেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা। ইউক্রেনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে রাশিয়ার ফের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন গুতেরেস। 

যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান: গত মঙ্গলবার আকস্মিকভাবে কিয়েভে সফর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। দেশটির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন অটল থাকার নিদর্শন হিসেবে বাইডেন কিয়েভ সফর করেছেন বলে জানা গেছে। কিয়েভে ইউক্রেনকে আরও ৫০ কোটি ডলার সামরিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেন বাইডেন। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে কিয়েভকে প্রায় ৩০ হাজার কোটি ডলারের সহায়তা দিয়েছে ওয়াশিংটন। 

রাশিয়ার অবস্থান: গত বুধবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন পুতিন। ভাষণে তিনি বলেন, এই যুদ্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররাই দায়ী। যত দেরিই হোক এ যুদ্ধে ধীরে ধীরে রাশিয়া তার লক্ষে পৌঁছাবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে করা পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দেন পুতিন। এর অর্থ হলো, ইউক্রেনে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বেড়েছে। 

অন্যদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার নিজেদের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির দূরপাল্লার পারমাণবিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সারমাত চলাতি বছর বিভিন্ন জায়গায় মোতায়ের ঘোষণা দিয়েছেন পুতিন। 

বিশ্ব পরিস্থিতি: রাশিয়ার বিশ্বের অন্যতম জ্বালানি সমৃদ্ধ দেশ। জ্বালানি তেল বিক্রয়কারীদের সংগঠন ওপেকপ্লাসে তার বিস্তার প্রভাব রয়েছে। তাই যুদ্ধের পর ইউরোপসহ সারা বিশ্বের জ্বালানির দাম হু হু করে বেড়েছে। 

অন্যদিকে, রাশিয়া ও ইউক্রেন বিশ্বর অন্যতম শস্য ও সার রপ্তানিকারক দেশ। যুদ্ধের কারণে তা ব্যহত হয়। ফলে সারা বিশ্বের এসব পণ্যের সংকট দেখা দেয়। তবে কয়েক মাস ধরে দুই দেশের মধ্যে শস্য রপ্তানি চুক্তি হওয়ায় ওই সংকট কিছুটা কমেছে। 

যুদ্ধ যেভাবে শেষ হতে পারে: ইউক্রেন যুদ্ধ বর্তমানে অচলাবস্থায় পৌঁছেছে। মনে হচ্ছে, এ যুদ্ধে কেউ রণক্ষেত্রে জিতবে না। তাই রাজনৈতিকভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এই যুদ্ধের ইতি টানতে হবে বলে মনে করেন যুদ্ধ বিশেষজ্ঞদের একাংশ। 

গ্লোবাল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধ বন্ধের জন্য গত মঙ্গলবার ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবার সঙ্গে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই আলোচনা করেছে। বিষয়টি নিয়ে কুলেবা ইউরোপের শীর্ষ কর্মকর্তা ও ন্যাটোপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। পরবর্তীতে গতকাল চীনের প্রস্তাব নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। 

আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বুধবার একই প্রস্তাব নিয়ে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ও পুতিনের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন ওয়াং ই। তারাও চীনা প্রস্তাব নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থোনিও গুতেরেস বলেছেন, চীনের ইউক্রেন যুদ্ধের বাইরে থাকায় মঙ্গলজনক। 

সূত্র: বিবিসি, আলজাজিরা, রয়টার্স

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা