প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:০৬ পিএম
আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:২৬ পিএম
চীনের উরুমকিতে একটি অ্যাপার্টমেন্টে অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের প্রতি শোক জানাতে গত ২৭ নভেম্বরের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে সাদা কাগজ হাতে সমবেতরা। ছবি : বিবিসি
করোনা মহামারির বিরুদ্ধে বিজয় ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে গত নভেম্বরে শূন্য-কোভিড নিয়মের বিরুদ্ধে ল্যান্ডমার্ক বিক্ষোভের স্মৃতিও ম্লান হতে শুরু করেছে চীনে।
কারণ যারা ওই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে অনেকেই নিখোঁজ হয়ে গেছেন। এই নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টিকে দেশটির কর্তৃপক্ষের বিরোধিতাকারীদের ওপর নিঃশব্দে কঠোর অভিযান বলে দাবি করছেন অধিকারকর্মীরা। বিক্ষোভে সমবেতরা কেউ নিখোঁজ তো, কেউ আবার হয়েছেন আটক। সব মিলিয়ে গণতন্ত্রপন্থিদের জন্য পরিস্থিতি কঠিন সেখানে।
সীমাবদ্ধ কোভিডনীতির বিরুদ্ধে অন্ধকারে সাদা কাগজ হাতে ধরে হাজারো মানুষ সেদিন প্রতিবাদ সমাবেশ করেছিল। এটি ছিল ক্ষমতাসীন চীনা কমিউনিস্ট পার্টি এবং এর নেতা শি জিনপিংয়ের বিরুদ্ধাচরণের এক বিরল চিত্র।
এ সময় কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। কয়েক মাস ধরে এই বিক্ষোভকারীদের অনেকেই পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। একটি চীনা অধিকার গ্রুপ জানিয়েছে, তাদের অনুমান সেখানে ১০০ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
চীনা কর্তৃপক্ষ অবশ্য ওই আটকের বিষয়ে কোনো প্রশ্নের জবাব দেয়নি। কিন্তু আটকদের বন্ধু ও আইনজীবীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে বিবিসি বেইজিংয়ে গ্রেপ্তার হওয়া ১২ জনের নাম যাচাই করতে সক্ষম হয়েছে।
উরুমকিতে একটি অ্যাপার্টমেন্টে অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের প্রতি শোক জানাতে ২৭ নভেম্বর রাতে চীনজুড়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভের কারণ, অনেকে বিশ্বাস করেছিলেন যে, কোভিড বিধিনিষেধের কারণে ক্ষতিগ্রস্তরা পালাতে পারেননি।
ওই বিক্ষোভে সমবেতরা হতাশার প্রতীক হিসেবে সাদা কাগজের টুকরো হাতে ধরে রাখেন। আটকদের এক বন্ধু বলেন, ‘পরিবেশ এতদিন ধরে নিপীড়নমূলক ছিল। তারা যখন বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন, তখন তারা ভাবেননি যে, তারা কোনো আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন। তারা ভেবেছিলেন, এটি তাদের আবেগ প্রকাশ করার একটি উপায়। তারা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ করেননি। তাই তারা এটাকে গুরুতর বলে মনে করেননি।’ কিন্তু চীন দ্রুত ওই প্রতিবাদকে নীরব করেছে।
পুলিশ নজরদারি ক্যামেরা এবং মুখের স্বীকৃতি সফটওয়্যার ব্যবহার করে ওই বিক্ষোভে সমবেতদের ট্র্যাক করে এবং গ্রেপ্তারকৃতদের ফোন অনুসন্ধান করে।
আটককৃতদের মধ্যে একজন একটি টেলিগ্রাম গ্রুপ তৈরি করেছিলেন। ওই গ্রুপে ৬০ জনেরও বেশি সদস্য ছিলেন। তাদের মধ্যে অনেকেই তাদের আসল নামে নিবন্ধিত ফোন নম্বর ব্যবহার করেছিলেন। দুদিন পর তাদের কয়েকজনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে।
এক বন্দির প্রেমিক বলেন, ‘আমরা ফোনে কথা বলছিলাম যখন তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সে আমাকে বলেছিল যে, তার কিছু বন্ধুকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সে তার মোবাইল ফোন থেকে জিনিসপত্র মুছে ফেলার চেষ্টা করছিল। জিনিসগুলো মুছে ফেলার আগেই তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।’
অ্যাক্টিভিস্টদের মতে, একের পর এক আরও বন্ধুদের আটক করায় ডিসেম্বর এবং জানুয়ারির মধ্যে গ্রেপ্তার অভিযান ত্বরান্বিত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
কাও ঝিক্সিন সম্ভাব্য গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় তার বন্ধুদের একটি ভিডিও পাঠিয়েছিলেন। তার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় এটি অনলাইনে প্রকাশ করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন কাও ঝিক্সিন।
কাও সেখানে বলেছেন, ‘আমরা যা করেছি তা ছিল যুক্তিসঙ্গত উপায়ে আমাদের অনুভূতির প্রকাশ। আমরা অদৃশ্য হতে চাই না। যদি একটি শোক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া অপরাধ হয়, তাহলে আমাদের অনুভূতি ভাগ করে নেওয়ার জন্য কতটা জায়গা বাকি আছে?’
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার উল্লেখ করেছে যে, লি সিকিসহ আটককৃতদের মধ্যে চারজন সাংবাদিক ছিলেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে যে, ঘটনাটিতে প্রতীয়মান হয় যে, ‘চীনের তরুণরা স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলার সাহসের জন্য একটি ভারী মূল্য পরিশোধ করছে।’
বিক্ষোভকারীদের ভবিষ্যৎ স্পষ্ট নয়
যারা জামিনে আছেন, তাদের বিরুদ্ধে এখনও অভিযোগ রয়েছে। যারা হেফাজতে থাকবে তাদের কয়েক সপ্তাহের জন্য আটকে রাখা যেতে পারে। কারণ প্রসিকিউটররা তাদের অভিযুক্ত করা হবে কি না, তা নির্ধারণ করে।
তাদের পরিবারগুলো এখনও পর্যন্ত নীরব রয়েছে এবং কেউ কেউ আটককৃতদের বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। বিবিসি জানতে পেরেছে যে, একটি পরিবার তাদের মেয়ের মামলা লড়ার জন্য নিয়োগ করা এক আইনজীবীকেও বাদ দিয়েছে।
প্রবীণ অধিকারকর্মী ইয়াং ঝানকিং বলেছেন, বন্দিদের পরিবারগুলো প্রশাসনের প্রচণ্ড চাপের কারণে নীরব থাকতে বাধ্য হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘পুলিশের গাজর এবং লাঠিপন্থা রয়েছে। কর্তৃপক্ষ পরিবারগুলোকে বলছে যে, তারা চুপ থাকলে গ্রেপ্তারকৃতদের তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেওয়া হবে। যদি তারা তা না মানে, তাহলে তারা তাদের চাকরি এবং পেনশন হারাবে।’
সূত্র : বিবিসি