উত্তর কোরিয়া
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১১:৫৪ এএম
উত্তর কোরিয়ায় ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ১ লাখ ৮০ হাজার টন কম খাদ্য উত্পাদন হয়েছে। ছবি : সংগৃহীত
উত্তর কোরিয়া দীর্ঘস্থায়ী খাদ্য ঘাটতির জন্য আগে থেকেই পরিচিত। তবে, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ, খারাপ আবহাওয়া এবং নিষেধাজ্ঞার কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, উত্তর কোরিয়া মারাত্মক খাদ্যসংকটের সম্মুখীন হচ্ছে।
দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ জানিয়েছে, কৃষিনীতিতে একটি ‘মৌলিক পরিবর্তন’ নিয়ে আলোচনা করতে পিয়ংইয়ংয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা ফেব্রুয়ারির শেষে বৈঠক করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এটি একটি ‘খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরি কাজ’ বলে মনে করছেন তারা।
দক্ষিণ কোরিয়ার একত্রীকরণ মন্ত্রণালয়ও খাদ্য ঘাটতির বিষয়ে সতর্কতা জারি করে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) অধীনে সাহায্য চেয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃপক্ষের স্যাটেলাইট চিত্রগুলোতে দেখা যায়, উত্তর কোরিয়ায় ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ১ লাখ ৮০ হাজার টন কম খাদ্য উত্পাদন হয়েছে।
গত বছরের জুন মাসে ডব্লিউএফপি উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল যে, খরা এবং বন্যার মতো চরম আবহাওয়া শীত ও বসন্ত উভয় ফসলের উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমও গত বছরের শেষের দিকে রিপোর্ট করেছিল যে, দেশটি ইতিহাসের ‘দ্বিতীয় সবচেয়ে খারাপ’ খরার সম্মুখীন হচ্ছে।
পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৩ সালের শুরুতে চালের পর পছন্দের খাদ্য ভুট্টার দাম ২০ শতাংশ বেড়েছে।
উত্তর কোরিয়ার প্রকাশনা থার্টিএইটনর্থের সঙ্গে কাজ করা বেঞ্জামিন কাটজেফ সিলবারস্টেইন বলেছেন, ‘লোকেরা বেশি ভুট্টা কিনছে, তার মানে সামগ্রিকভাবে খাবারের দাম বেশি এবং বিশেষ করে ভাতের মতো প্রধান খাবার। এক কিলোগ্রাম ফসলের দাম এখন প্রায় ৩৪ হাজার উত্তর কোরিয়ান ওয়ান।’
এনকে নিউজের বিশ্লেষক জেমস ফ্রেটওয়েল বলেছেন, ‘উত্তর কোরিয়ার পণ্য এবং মানুষের ওপর কঠোর কোভিড সীমান্ত ব্যবস্থার কারণে কোনো বহিরাগতের পক্ষে সে দেশে গিয়ে পরিস্থিতি যাচাই করার কোনো উপায় নেই। যে কারণে বাইরের সংস্থাগুলোর পক্ষে সংকটে সাহায্য পাঠানো কঠিন করে তুলেছে।’
উত্তর কোরিয়া ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য এবং যাতায়াতকে কঠোরভাবে সীমাবদ্ধ করেছে। উত্তর কোরিয়ার অলাভজনক সংস্থা ‘লিবার্টি’র দক্ষিণ কোরিয়ার কান্ট্রি ডিরেক্টর সোকিল পার্ক মহামারিটির প্রতি শাসকের প্রতিক্রিয়াকে ‘চরম পাগলামি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। পার্কের ওই সংস্থা উত্তর কোরিয়ার উদ্বাস্তুদের দক্ষিণ কোরিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসনে সহায়তা করে থাকে। তিনি একাধিক বিশ্বাসযোগ্য রিপোর্ট শুনেছেন যে, উত্তরের মানুষ অনাহারে মারা যাচ্ছে।
এদিকে জাতিসংঘ বলেছে, উত্তর কোরিয়া গত বছর আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং অন্যান্য দাতা সংস্থা থেকে ২ দশমিক ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পেয়েছে, যা ২০২১ সালের চেয়ে ১৪ মিলিয়ন কম।
অন্যদিকে কিছু ত্রাণকর্মী বিবিসিকে বলেছেন, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাগুলোর বিপরীতে উত্তর কোরিয়া সামরিক প্রতিক্রিয়ায় কঠোর হয়ে মানবিক সাহায্য সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করেছে।
নিকি এশিয়া গত সপ্তাহে রিপোর্ট করেছে যে, উত্তরের কিছু ট্রাক চীনে আসা-যাওয়া শুরু করেছে, যা উত্তর কোরিয়ার মোট বাণিজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ। তবে, এর মানে এই নয় যে, উত্তর কোরিয়ার সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে উত্তর কোরিয়ার বেশিরভাগ ব্যায় যাচ্ছে সামরিক খাতে। উল্লেখ্য, পিয়ংইয়ং গত বছর রেকর্ডসংখ্যক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
পার্ক বলেন, ‘দেশটির শাসক স্বীকার করেছেন যে, উত্তর কোরিয়ার সাধারণ জনগণের জন্য এসব পরিস্থিতি মোকাবিলা করা ভীষণ কঠিন। কিন্তু কিম পরিবার প্রচার, প্রতিযোগিতা, ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ এবং জনসংখ্যার কঠোর নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দিয়ে চলেছে।’
সিলবারস্টেইন বলেন, ‘আমরা ১৯৯০ সালের দুর্ভিক্ষের স্তরের কাছাকাছি বলে মনে হচ্ছে না। কিন্তু, ওই দুর্ভিক্ষের সঙ্গে বর্তমান অবস্থার ব্যবধান খুবই সামান্য। তাই খাবারের সরবরাহের কমতি হলেই মারাত্মক পরিণতি হতে পারে।’
সূত্র : বিবিসি