মিয়ানমার সেনাবাহিনী মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ করছে বলে অভিযোগ করেছে জাতিসংঘ। ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্য। ২০২১ সালের এপ্রিলে। ছবি: সংগৃহীত
মিয়ানমারের জান্তা সরকার দেশটির জনগণকে প্রতিপক্ষ বানিয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। সেনাবাহিনীকে সাধারণ মানুষ হত্যা থেকে সম্পূর্ণ দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ফলে তারা মানুষ হত্যা বা জ্বালাও-পোড়াও করতে দ্বিধা করছে না। এ পরিস্থিতিতে দেশটির অবস্থা ভয়ানক বিপর্যয়কর পর্যায়ে পৌঁছেছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস শুক্রবার (৩ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এমন দাবি করেছে। দেশটিতে সেনা শাসনের দুবছর নিয়ে ওই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
প্রতিবেদনে মিয়ানমার বিষয়ক জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের প্রধান জেমস রোডহেভার বলেন, দুই বছরে অন্তত দুই হাজার ৯৪০ জন সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এদের প্রায় ৩০ শতাংশ আটকাবস্থায় প্রাণ হারিয়েছে। একই সময়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৭ হাজার ৫৭২ জন।
তবে প্রকৃত নিহত ও গ্রেপ্তারের সংখ্যা বেশি হতে পারে ধারণা করা হয়।
প্রতিবেদনের বরাতে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, পাল্টা হামলা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে জান্তার নিয়মিত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও আধা-সামরিক বাহিনীগুলো। এ অবস্থায় বিমান হামলা ও গোলা নিক্ষেপ বাড়িয়েছে তারা। ২০২২ সালে ৩০০ এর বেশি বিমান হামলা চলানো হয়েছে। ফলে মানুষের জান-মালের ক্ষয়-ক্ষতি বেড়েছে। হামলায় বিদ্যালয় ও হাসপাতালের মতো বেসামকির অবকাঠামোও ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রোডহেভার জানান, দুই বছরে মিয়ানমারের মোট ৩৩০টি শহরের প্রায় ৮০ শতাংশে সংঘাত হয়েছে। অর্থাৎ পুরো দেশেই বাধার মুখে রয়েছে জান্তার বাহিনী। দেশটিতে এ রকম সামরিকবিরোধী প্রতিরোধ আরও কখনও দেখা যায়নি।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে থেকে জান্তার সদস্যদের অভিযানে প্রায় ৩৯ হাজার বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অভ্যুত্থানের প্রথম বছর তা ছিল গত বছরের তুলনায় এক হাজার ভাগের এক ভাগ।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমার জান্তা তথাকথিক ‘ফোর কাট’ বা চারটি জিনিস বিচ্ছিন্ন করার কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে। এক. প্রতিপক্ষের খাদ্যের যোগান বন্ধ করা। দুই. যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা। তিন. বিদ্রোহীদের নতুন সদস্য সংগ্রহ বন্ধ করা। চার. বিদ্রোহীদের অর্থ ও জীবিকা থেকে বিচ্ছন্ন করে দেওয়া।
এসব পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে জান্তার সরকার মিয়ানমারের জনগণকে নিজেদের প্রতিপক্ষ বানিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে। তাদের এসব পদক্ষেপের ফলে মিয়ানমারে সত্যিকারের মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের প্রধান ভলকার তুর্ক বলেন, জেনারেলদের সম্পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। দেওয়া হয়েছে সম্পূর্ণ দায়মুক্তি। তাই এমনটা বিশ্বাস করা যথেষ্ট যৌক্তিক যে, মিয়ানমারের নিয়মিত সেনাবাহিনী, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও অন্য আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্যরা মানবতা বিরোধী অপরাধ করছে। তারা যুদ্ধাপরাধ করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই বছরের সেনা শাসনের ফলে মিয়ানমারের জনগণ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। এই সময়ে ১০ লাখের বেশি মানুষ মিয়ানমারের অভ্যন্তরে স্থানচ্যুত হয়েছে।
দেশটির প্রায় অর্ধেক তথা আড়াই কোটি মানুষ দ্রারিদ্রসীমার নিচে বাস করছে। এক কোটি ৭৬ মানুষের জরুরিভিত্তিতে মানবিক সহায়তা দরকার।
হত্যা, নির্বিচার গ্রেপ্তার, নির্যাতন, গুম, ফাঁসি ও সাজার মতো অব্যাহত সহিংসতার মধ্য দিয়ে মানবাধিকার সংকটকে স্থায়ী করে রেখেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এ অবস্থায় চলতি বছর জান্তা নির্বাচনের অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে প্রশ্ন রাখা হয়, এই অবস্থায় সুষ্ঠু কোনো নির্বাচন আয়োজন কি আদৌ সম্ভব?
২০২০ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অং সান সু চিসহ তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী। জারি করা হয় জরুরি অবস্থা, যা এখনও চলছে।
সামরিক অভ্যুত্থানের পরপরই রাস্তায় নেমে আসে মানুষ। রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় ঐক্য সরকার নামে মোর্চা গঠন করে জান্তাবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলন করছে।
সূত্র: এএফপি
সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি
প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু
রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯
যোগাযোগ
প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯, +৮৮০১৮১৫৫৫২৯৯৭ । ই-মেইল: [email protected]
সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]
2023 Protidiner Bangladesh All Rights Reserved. Developed By Protidiner Bangladesh Team.