প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৩ ১৬:১৯ পিএম
আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২৩ ১৬:৪৫ পিএম
ব্রিটেনের ন্যাশনাল আর্কাইভিস্ট ও জার্মানির ওল্ডেনবার্গের কার্ল ভন ওসিটস্কি ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণা দল কাজ করছে, যাতে জব্দ করা চিঠিগুলো থেকে এক প্রকল্পের আওতায় দুই দশক ধরে ১ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি চিঠি ও নথি, যা অন্তত ১৯টি ভাষায় লেখা, তা যাতে সহজেই অনলাইনে দেখা যায়। ছবি : সংগৃহীত
বহু শতাব্দী ধরে ইউরোপিয়রা উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে অতিক্রম
করেছে দীর্ঘ পথ। কোথাও গিয়ে করেছে দাস ব্যবসা, কোথাও বা গেড়েছে উপনিবেশ। এসব অভিযাত্রিক
কর্মকাণ্ড করতে গিয়ে অনেকেই দূরে থেকেছেন প্রিয় মানুষের, অনেকেরই হয়েছে বিচ্ছেদ।
একসময় দূরবর্তী যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল
চিঠি। সেই চিঠির অপেক্ষায় বসে থাকত প্রিয় মানুষগুলো। কবি মহাদেব সাহাও যেমন বলেছিলেন,
‘করুণা করে হলেও চিঠি দিও।‘ কিন্তু সব চিঠি কি তার ঠিকানায় পৌঁছায়?
আগে সম্রাজ্যবাদ ইস্যুতে স্পেনিয় কিংবা ফরাসিদের সঙ্গে ব্রিটিশদের
ছিল শাপে নেউলে সম্পর্ক। ঠিক সে কারণেই ১৬৫০ থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত অনেক জাহাজ লুণ্ঠনও
করেছিল ব্রিটিশরা। সেসব জাহাজে শুধু মালামালই লুট করা হয়নি। জব্দ করা হয়েছে জাহাজের
নথিও। সঙ্গে ছিল চিঠি। ব্রিটিশদের কাছে এই চিঠিগুলোর দাম না থাকলেও তারা এগুলো রেখে
দেয়। ফলে সেগুলো প্রাপকের কাছে আর কখনোই পৌঁছায়নি।
যদিও দীর্ঘ সময় প্রায় ৩৫ হাজার জাহাজ থেকে জব্দ করা চিঠি
ব্রিটিশ সরকারের স্টোরেজে অবহেলিত হয়ে পড়েছিল। পরে ব্রিটেনের ন্যাশনাল আর্কাইভিস্ট
ও জার্মানির ওল্ডেনবার্গের কার্ল ভন ওসিটস্কি ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণা দল কাজ করছে, যাতে জব্দ করা
চিঠিগুলো থেকে এক প্রকল্পের আওতায় দুই দশক ধরে ১ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি চিঠি ও নথি,
যা অন্তত ১৯টি ভাষায় লেখা, তা যাতে সহজেই অনলাইনে দেখা যায়। এই চিঠির অনেকগুলোই কখনোই
পড়া হয়নি, এমনকি অনেক চিঠির ক্ষেত্রে এর আগে সিলমোহরও খোলা হয়নি।
এখন সেই চিঠিগুলোই যেন বলছে বহু আগের হারিয়ে যাওয়া প্রেমের
কথা, বিরহের কথা, কিংবা সন্তানের প্রতি বাবার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। ১৭৪৫ সালে ভেনিজুয়েলার
ঔপনিবেশিক বাণিজ্যে কাজ করা স্প্যানিশ নাবিক সেবাস্তিয়ানকে চিঠিতে তার স্ত্রী মারিয়া
ক্লারা দে লিখেছিলেন, ‘তার (সেবাস্তিয়ানের) জন্য আর অপেক্ষা করতে পারবেন না।’ অথচ এরপরেও
হয়ত সেবাস্তিয়ান তার প্রেয়সী স্ত্রীর জন্য দিন গুনেছিলেন। কারণ চিঠিটা তো তিনি পাননি।
সে না পাওয়া চিঠি আমরা পড়তে পারছি। হয়ত মনের অবচেতন মনে ভাবছিও সেবাস্তিয়ান ও মারিয়ার
কথা।
এর মধ্যে কিছু চিঠি খুবই মর্মান্তিক। যেমন ১৮ শতকের বাণিজ্য জাহাজ থেকে বন্দি এক জার্মান নাবিক তার মেয়েকে উদ্দেশ্য করে কবিতা পাঠিয়েছিলেন। সেই কবিতাও তার মেয়ের হাতে পৌঁছেনি। এমনকি আমরা জানিই না, বন্দি দশা থেকে মুক্ত হতে পেরেছিলেন কি না সেই নাবিক? দেখা কি হয়েছিল তার মেয়ের সঙ্গে?
এ ছাড়া ক্যনারি দ্বীপপুঞ্জে আটক স্প্যানিশ যুদ্ধবন্দিদের
চিঠি। যেগুলো তারা লিখেছিলেন, পরিবারের সদস্যের জন্য। ঠিকানায় না পৌছানো সেই চিঠিগুলোতে
বলা হয়েছে, একাকী জীবন কাটানোর কষ্টের অভিযোগের কথা, দ্বীপে মহামারি প্রাদুর্ভাবের
কথা। এমনকি আছে দৈনন্দিন জীবনের ক্ষুদ্র ঘটনাও, যেমন- মাথা ব্যথা, কিংবা আঘাত পেয়ে
সেলাই লাগা।
এই চিঠিগুলো কেবল আবেগ, অনূভুতির শুধু বহিঃপ্রকাশ নয়, এর
ঐতিহাসিক গুরুত্বও রয়েছে। কার্ল ভন ওসিটস্কি ইউনিভার্সিটির ইতিহাসবিদ, যিনি এই চিঠিগুলো
সংকলনের সঙ্গে যুক্ত সেই ডাগমার ফ্রেস্ট বলেন, ‘(চিঠিগুলো) অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠীর
সঙ্গে, ক্রীতদাসদের সঙ্গে, অন্য দেশের আচার ও ঐতিহ্যের সঙ্গে তাদের (ইউরোপীয়দের) সামাজিক
মিথস্ক্রিয়াকে বর্ণনা করে।’ ফলে আমরা ইউরোপের সামাজিক বিবর্তনের ধাপগুলোও বুঝতে পারি।
সূত্র : খালিজ টাইমস