প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৩ ০৯:৫৭ এএম
আপডেট : ১৮ মার্চ ২০২৩ ১০:৪০ এএম
যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান। ছবি : সংগৃহীত
২০২১ সালে হাইপারসনিক মিসাইলের পরীক্ষা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে হতবাক করে দেয় চীন। যুক্তরাষ্ট্রেরই তৈরি চিপ ব্যবহার করে হাইপারসনিক মিসাইলের মতো অস্ত্র বানানোর সক্ষমতা অর্জন করে চীন, যে সক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্র অর্জন করতে পারেনি।
এর মধ্যে যুদ্ধবিমান তৈরিতেও অনেক এগিয়ে যায় চীন। এ প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার চেয়ে চীনকেই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র। নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে উন্নত চিপ ও চিপ তৈরির সরঞ্জাম চীনে রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ পরবর্তী প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরির জন্য বিনিয়োগ বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
চলতি সপ্তাহে দ্য ওয়ারজোনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, ষষ্ঠ প্রজন্মের এফ/এ-এক্সএক্স স্টিলথ (রাডারকে ফাঁকি দিতে সক্ষম) যুদ্ধবিমান তৈরির জন্য ২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে ১৫৩ কোটি ডলারের প্রস্তাব দিয়েছে মার্কিন নৌবাহিনী। এফ/এ-১৮ যুদ্ধবিমানের জায়গায় স্থলাভিষিক্ত হবে নতুন প্রজন্মের যুদ্ধবিমান। এগুলোকে দেখা যাবে এফ-৩৫বি এবং এফ-৩৫সি যুদ্ধবিমানের সঙ্গে।
ঠিক কী ধরনের যুদ্ধবিমান হলে সেটিকে ষষ্ঠ প্রজন্মের বলা চলে, তা এখনও সুনির্দিষ্ট নয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে, নতুন যুদ্ধবিমানে মডুলার ডিজাইন, মেশিন লার্নিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ভার্চুয়াল ও অগমেন্টেড রিয়েলিটি, ড্রোন সোয়ার্ম প্রযুক্তি সন্নিবেশ দেখা যাবে।
ওয়ারজোনের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এফ/এ-এক্সএক্স যুদ্ধবিমান মূলত ইউএস নেভি নেক্সট জেনারেশন এয়ার ডমিনেন্স (এনজিএডি) কর্মসূচির অংশ, যা মার্কিন বিমানবাহিনীর প্রকল্পের মতোই, কিন্তু কিছুটা আলাদা। ২০২১ সালের এপ্রিলে নেভাল নিউজ জানিয়েছিল, অভিযানে এফ/এ-এক্সএক্স যুদ্ধবিমানের সঙ্গে একাধিক ধরনের ড্রোন থাকবে।
ব্যাপক দূরত্ব আকাশযুদ্ধের ক্ষেত্রে মার্কিন বিমানবাহিনীর জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় প্রায়শই। নিজেদের অঞ্চল থেকে দূরে লড়াইয়ের সময় প্রায়ই বিপাকের মুখে পড়তে হয় মার্কিন সেনাবাহিনীকে।
২০২১ সালের আগস্টে ফোর্বসের এক নিবন্ধে ডেভিড অ্যাক্স নামের এক বিশেষজ্ঞ বলেন, বাহক-বাহিত মার্কিন যুদ্ধবিমানের ওড়ার পরিসীমার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এর সমাধানের চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। যেমন- বোয়িংয়ের নেতৃত্বে একবার ইউএস এফ/এ-১৮ সুপার হর্নেটে বাড়তি জ্বালানি ট্যাংক যোগ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তা শেষ পর্যন্ত আর করা সম্ভব হয়নি।
অ্যাক্স আরও বলেন, এফ/এ-১৮ অনেকটাই নমনীয়। এটি ভারী অস্ত্র নিয়ে ৯৬৫ কিলোমিটারের বেশি দূরত্ব পাড়ি দিতে পারে না। ফলে বিমানবাহী রণতরিকেও জ্বালানি জোগানের জন্য কাছাকাছি থাকতে হয়। এতে করে শত্রুপক্ষের আক্রমণের কবলে পড়ার ঝুঁকি বাড়ে।
অ্যাক্স জানান, এফ/এ-১৮ সুপার হর্নেট ব্লক ৩-এ জ্বালানির বাড়তি ট্যাংক থাকায় সেটি নিজ পরিসীমার বাইরে আরও ১৯৩ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারে। কিন্তু তারপরও দেখা গেছে, বিমানবাহী রণতরি থেকে উড্ডয়নের সময় জ্বালানি ট্যাংক বাড়তি চাপ নিতে পারে না। এ ছাড়া বিমানবাহী রণতরির ডেকে অল্প জায়গা থাকায় এগুলোর ব্যবস্থাপনা করাও কঠিন হয়ে ওঠে।
তিনি বলেন, এফ/এ-১৮ ঘরানার যুদ্ধবিমান আকাশে ভাসমান অবস্থাতেই জ্বালানি গ্রহণ বা বিভিন্ন দ্বীপে নেমে জ্বালানি নিতে পারে। কিন্তু অত বড় তেলের ট্যাংকার আকাশে ভাসমান থাকলে বা বিচ্ছিন্ন দ্বীপে জ্বালানি রাখলে, সেগুলো আক্রমণের কবলে পড়ার ঝুঁকিতে থাকে। পুরোনো হতে থাকা এফ/এ-১৮ নকশার যুদ্ধবিমানগুলো হয়তো ভবিষ্যতে আর প্রশান্ত মহাসাগরীয় যুদ্ধের জন্য উপযুক্ত হবে না।
২০২১ সালের আগস্টে ইউএসএনআই নিউজ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ১০ হাজার ঘণ্টা সেবা দিয়ে ফেলা ৩০ বছরের পুরোনো আকাশযান কাঠামো হয়তো ২০৫০-এর দশকের নতুন আকাশ হুমকি মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট হবে না।
চীন তার পঞ্চম প্রজন্মের জে২০ যুদ্ধবিমানকে ভিত্তি করে ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরি করতে পারে।
গত মাসে এশিয়া টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের উৎপাদন সক্ষমতা এবং নিজেদের তৈরি ইঞ্জিনের উন্নয়ন ঘটানোয় বিমান তৈরির সক্ষমতায় যুক্তরাষ্ট্রকে সম্ভবত ছাড়িয়ে গেছে।
এদিকে ২০২০ সালের আগে চীন ও রাশিয়া বিমান তৈরির প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়াতে পারবে না- এমন ধারণা থেকে ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এফ-২২ বিমানের উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। তা ছাড়া আফগানিস্তান ও ইরাকে অভিযানের ক্ষেত্রে এই বিমান অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছিল। তাই এর পরিবর্তে এফ-৩৫ বিমান তৈরিতে মনোযোগ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এফ-৩৫ বিমানে অন্য অনেক সক্ষমতা থাকলেও আকাশ থেকে আকাশে যুদ্ধে কম সক্ষম।
এদিকে চীনের রণতরিভিত্তিক নতুন জে-৩১/এফসি-৩১ যুদ্ধবিমান আকাশে আধিপত্য বিস্তারে সক্ষমÑ এমন নকশায় তৈরি করা হয়েছে। এ যুদ্ধবিমান মূলত যুক্তরাষ্ট্রের এফ-৩৫-এর নকশার উন্নত সংস্করণ। ১২ বছর ধরে গুপ্তচরবৃত্তির মাধ্যমে এফ-৩৫-এর নকশার সব তথ্য জেনে নিয়ে চীন ওই বিমান তৈরি করে।
সূত্র : এশিয়া টাইমস