চীনের মধ্যস্থতায় ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন সম্ভব হয়েছে। ছবি :
চীনের মধ্যস্থতায় ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে করা গত সপ্তাহের চুক্তি বেইজিংয়ের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য। এটি মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে।
তবু এটি কোন দিকে ঘুরতে পারে, তা পরিষ্কার নয়। এটি সবার জন্য সুবিধা বয়ে আনতে পারে। আবার এটি আঞ্চলিক সংঘাতও বাড়াতে পারে।
চুক্তির প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে প্রক্সি যুদ্ধে লড়াইরত দুটি স্থানীয় দল বন্দিদের বিনিময়ে সম্মত হয়। অক্টোবর থেকে যুদ্ধবিরতির পর এটি প্রথম বন্দিবিনিময়ের ঘটনা।
ইয়েমেনে জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত সুন্নি ভাবধারার সানা সরকারকে সমর্থন করে সৌদি। অন্যদিকে ইরানিরা শিয়া হুতি বিদ্রোহীদের সমর্থন করে। যুদ্ধটি এক দশকের পুরোনো। উভয়পক্ষই দীর্ঘদিনের এই যুদ্ধে ক্লান্ত। এই দুর্বলতার জায়গা থেকেই চীনা পৃষ্ঠপোষকতায় দেশ দুটি এই চুক্তিতে সম্মত হয়েছে বলে ধারণা করা যায়।
রিয়াদ ২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার পর যুক্তরাষ্ট্র পুরোনো উষ্ণ সম্পর্ক থেকে সরে আসায় সৌদিরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করেছিল। রিয়াদেরও তেহরানের সঙ্গে কিছু আপসরফার দরকার ছিল। কারণ ইয়েমেন যুদ্ধ চালিয়েও সৌদি আরব হুতিদের থামাতে পারেনি।
অন্যদিকে ইরান তার আঞ্চলিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার মধ্যে চাপা পড়েছিল। যেহেতু আয়াতুল্লাহর শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সম্পূর্ণভাবে দমন করা হয়নি এবং ধর্মীয় নেতৃত্বকে কয়েকটি আপস করতে বাধ্য করেছে।
উত্তর-পূর্বে পাকিস্তানের সঙ্গে চীন ও সৌদির ভালো সম্পর্ক। আফগানিস্তানকে স্থিতিশীল করতে পারলে চীন ভারত মহাসাগর এবং নয়াদিল্লি ও মার্কিন নৌবাহিনীকে বাইপাস করে তার পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াং থেকে সম্পদসমৃদ্ধ আফ্রিকা পর্যন্ত একটি স্থলপথ করার সুযোগ পাবে।
সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে শান্তি ফেরাতে লেবানন ও ফিলিস্তিনি অঞ্চলে শিয়া হিজবুল্লাহ গ্রুপগুলোর জঙ্গিবাদ হ্রাস করতেও সাহায্য করতে পারে।
সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে চুক্তি ইসরায়েল ও ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে পারে। যদি এটি ঘটে, তাহলে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ভালো সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য বাধা দূর হতে পারে।
কিন্তু কোন জল কীভাবে গড়াবে, তা দেখতে আগামী কয়েক মাস গুরুত্বপূর্ণ। ইয়েমেন ছাড়াও আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব মীমাংসায় ইরানে তার প্রতিশ্রুতি কতটা রক্ষা করছে তা অনেকটাই নির্ভর করছে হিজবুল্লাহর ওপর।
তবে যদি নতুন ‘চীন প্রভাবিত মধ্যপ্রাচ্যে’ ইসরায়েলকে কোণঠাসা রাখা হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রকে উপেক্ষা করা হয়, তাহলে এক নতুন সমস্যা তৈরি হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের এখনও এই অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে এবং অনেক স্বার্থ রয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে ভারত ও তুরস্ককেও একটি নতুন কূটনৈতিক ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, কারণ তাদেরও নতুন ভূ-রাজনৈতিক রূপরেখায় আগ্রহ রয়েছে। চীন যদি সাবধানে ও বিচক্ষণতার সঙ্গে অগ্রসর হয়, তবে এটি বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ পদক্ষেপে অতীতের অনেক ভুল এড়াতে পারবে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে যুদ্ধে বন্ধে ১২ দফা শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছিল চীন।
বেইজিং তার কূটনৈতিক উদ্যোগ বাড়াচ্ছে, দৃশ্যত যেখানে যুক্তরাষ্ট্র খুব বেশি সমাধানের পথ তৈরি করতে পারছে না। দেশটি কেবলই চাপ দেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে চীনের এই প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিপক্ষ ভাবার দরকার নেই।
এটি দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার যে, ইউক্রেনে আক্রমণ করে রাশিয়া তার সব রাজনৈতিক লক্ষ্য হারিয়েছে। রাশিয়ার লক্ষ্যগুলো হলো ইউক্রেনকে নিয়ন্ত্রণ করা, ইউরোপকে বিভক্ত করা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইউরোপ থেকে বহিষ্কার করা।
চীন যদি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির জন্য কিছু সাহায্য করতে পারে, তাহলে কেন নয়? পাশাপাশি তারা যদি কূটনৈতিক ফ্রন্টে চটপটে প্রমাণ করে, যুক্তরাষ্ট্রেরও তা করা উচিত।
সূত্র : এশিয়া টাইমস
সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি
প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু
রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯
যোগাযোগ
প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯, +৮৮০১৮১৫৫৫২৯৯৭ । ই-মেইল: [email protected]
সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]
2023 Protidiner Bangladesh All Rights Reserved. Developed By Protidiner Bangladesh Team.