প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৩ ১৭:১৫ পিএম
আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৩ ২২:৫৫ পিএম
দেশটির কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে পুষ্টির উৎস হিসেবে নাগরিকদের মুরগির পা খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে। ছবি : সংগৃহীত
বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক অস্থিরতার জেড়ে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মিসরে খাদ্যের
দাম তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতেই হিমশিম খাচ্ছে দেশটির
নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী।
পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে কায়রোর গিজা বাজারে ভিক্ষা করতে
থাকা এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা গেছে, ‘হে ইশ্বর,
আমাদের মুরগির পা খাওয়ার পর্যায়ে নিয়ে যাও।’
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যেন বাড়ছে মিসরের অর্থনৈতিক সংকট। এরই মধ্যে এমন
এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যে, পরিবারকে খাওয়ানোর জন্য রীতিমতো লড়াই করতে হচ্ছে সেখানকার
মানুষদের।
দেশটির কর্তৃপক্ষ পুষ্টির উৎস হিসেবে নাগরিকদের মুরগির
পা খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে। মুরগির পা প্রোটিনসমৃদ্ধ হলেও সাধারণ মিসরীয়রা এতদিন এটিকে
কুকুর-বিড়ালের খাবার হিসেবে সংরক্ষণ করে এসেছে।
তবে এই পরামর্শ এরই মধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও তীব্র সমালোচনার
জন্ম দিচ্ছে। এ কথা সত্য যে অনেক দেশই ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়ছে, কিন্তু
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় রয়েছে মিসর।
সেখানকার নাগরিকদের জন্য রান্নার তেল ও পনিরের মতো আইটেমগুলো ছিল
রান্নাঘরের মৌলিক উপাদান। কিন্তু তা এখন হয়ে উঠেছে বিলাসিতা।
ষাটের দশকে জন্মানো ওয়েদাদ, তিন সন্তানের মা। তার জীবনটাই কেটেছে
মিসরে। তিনি জানিয়েছেন, এখন দেশটির দোকানে একটা ডিমও বিক্রি হয়।
এক বছর আগেও ওয়েদাদ মাসিক ৫ হাজার মিসরীয় পাউন্ড পেনশন পেতেন। এ দিয়ে
তার স্বাচ্ছন্দ্যেই চলে যেত। নিজেকে তিনি মধ্যবিত্ত পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন।
কিন্তু এখন আর নিজেকে মধ্যবিত্ত বলতে পারছেন না তিনি। মাসে একবারও মাংস জুটবে কি না, তা নিয়েই রয়েছে অনিশ্চয়তা।
১০ কোটি জনসংখ্যার দেশ মিসর, খাদ্যের ক্ষেত্রে দেশীয় উৎপাদনের বাইরে
প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর। দেশটিতে এমনকি মুরগির খাবারও আমদানি করতে হয়। চলমান খাদ্যের
দাম বৃদ্ধির এটিই অন্যতম প্রধান কারণ।
এ ছাড়া গত ১২ মাসের খানিকটা বেশি সময়ের মধ্যে মিসরীয় পাউন্ড ডলারের
তুলনায় অর্ধেক মূল্য হারিয়েছে। তাই চলতি বছর জানুয়ারিতে সরকার আবারও মুদ্রার দামের
অবমূল্যায়ন করে, তখন এটি শস্যের মতো আমদানি ব্যয়কে তীব্রভাবে বৃদ্ধি করে।
দেশটিতে এই সংকট সৃষ্টিতে ইউক্রেন যুদ্ধেরও বড় প্রভাব রয়েছে। মস্কোর ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা রাশিয়া থেকে শস্য আমদানির সহজ পথগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে মিসরে সংকট আরও বেড়েছে। শিগগিরই এর থেকে মুক্তি মেলার সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না।
তবে বর্তমান এই সংকটের জন্য মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি নিজের খুব একটা দায় দেখেন না। তার মতে, ২০১১ সালে দেশটিতে অভ্যুত্থান, ব্যাপক জনসংখ্যা বৃদ্ধি, করোনাভাইরাস মহামারি ও ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানের কারণে এই পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়িয়েছে মিসর।
দেশটিতে মোট জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান ছিল ৫ শতাংশ। মহামারির কারণে এ খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয় দেশটির। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের নানা ভুল পদক্ষেপের কারণে খারাপ পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। মিসর এরই মধ্যে সবশেষ ৬ বছরে চারবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে বেইল আউটের আবেদন করেছে।
সূত্র : বিবিসি