ইরাক হামলার ২০ বছর
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৩ ২০:১১ পিএম
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৩ ২১:২৩ পিএম
ইরাকে রয়্যাল আইরিশ রেজিমেন্টের একটি গাড়ি। অদূরে জ্বলছে জ্বালানি তেলের একটি কূপ। ২০০৩ সালের মার্চের শেষের দিকে। ছবি : সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র টুইন টাওয়ার ও সামরিক সদর দপ্তর পেন্টাগন আক্রান্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় চলতি শতাব্দীর যাত্রা। ২০০১ সালের ওই অকল্পনীয় হামলার পর বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসন বহুগুণ বাড়ে। এরপর বদলে গেছে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার ধারণা। এসব হামলার মধ্যে আফগানিস্তানের পর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ হামলা হয় ইরাকে।
স্বৈরশাসক সাদ্দাম হোসেন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের জন্য হুমকি এবং তার কাছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র আছে, এমন সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ২০০৩ সালের ২০ মার্চ শেষ রাতে ইরাকে হামলা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। সঙ্গে ছিল যুক্তরাজ্য।
বৈরী প্রতিবেশী কুয়েত থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে বোমারু বিমান বোমা ফেলতে শুরু করে ত্রিপলি, বেনগাজি এবং রাজধানী বাগদাদসহ ইরাকের গুরুত্বপূর্ণ সব শহরে।
হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে এক টেলিভিশন ভাষণে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ঘোষণা দেন, ইরাককে নিরস্ত্র করতে চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র বাহিনী চূড়ান্ত প্রস্তুতির প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ইরাকে জনগণকে মুক্ত করতে এবং বিশ্বকে ভয়ংকর বিপদ থেকে বাঁচাতেই এই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
‘অপারেশন ইরাকি ফ্রিডম’ নামের ওই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের ১ লাখ ৫০ হাজার এবং যুক্তরাজ্যের ৪০ হাজার সেনা অংশ নেয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে এএফপির এক প্রতিবেদনে। আট বছরের যুদ্ধে নিহত হয় ইরাকের ২ লাখের বেশি সাধারণ মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের নিহত হয় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার সেনা।
সবচেয়ে বড় লক্ষ্য সাদ্দাম হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বাগদাদের একটি বিশেষ আদালতের বিচারে তার ফাঁসি হয়।
লক্ষণীয় বিষয়, তন্ন তন্ন করেও সাদ্দামের কাছে থাকা তথাকথিত গণবিধ্বংসী অস্ত্রের কোনো হদিস পায়নি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা।
অন্যদিকে যুদ্ধের ২০ বছর পর একসময়কার সমৃদ্ধ দেশটির এক-তৃতীয়াংশ মানুষ বর্তমানে দরিদ্রসীমার নিচে বাস করছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। দুর্নীতি যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি।
আল জাজিরার এক মতামতে বলা হয়, সাদ্দাম হোসেন স্বৈরশাসক ছিলেন সন্দেহ নেই। এখন তার জায়গায় একাধিক ওয়্যারলর্ডের জন্ম হয়েছে। বিভক্ত হয়ে পড়েছে পুরো দেশে।
নিয়মিত নির্বাচন হয়। কিন্তু তাতে সাড়া নেই। যেন করার জন্য করা। এসব নির্বাচনে মানুষের আগ্রহ নেই। সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনও যুদ্ধের বিধ্বংসী স্মৃতি, নৈরাজ্য রয়ে গেছে।
ইরানে শিয়ারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও সাদ্দাম হোসেন ছিলেন সুন্নি। তার আমলে শিয়ারা নিপীড়নের শিকার হতেন। দেশটির শিয়া রাজনীতির একটি বড় ও শক্তিশালী অংশ পরিচালিত হয় ইরানের সার্বিক পৃষ্টপোষকতায়। ইরান আবার গুরুতর যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী।
২০১১ সালে ইরাক যুদ্ধে পরিসমাপ্তি টানা হলেও এখনও সেখানে কিছু মার্কিন সেনা রয়ে গেছে। এ অবস্থায় সাদ্দাম-উত্তর ইরাকের রাজনীতি ইরাক-যুক্তরাষ্ট্রের কক্ষে ঘুরপাক খাচ্ছে। অর্থাৎ মুক্ত না হয়ে অন্তহীন চোরাগলিতে আটকে গেছে ইরাক।
এএফপির এক মতামতে বলা হয়, ইরাক যুদ্ধের ভয়ংকরতম ফল ইসলামিক স্টেটের (আইএস) উত্থান। কারণ ক্ষমতাচ্যুত হয়ে সুন্নি তরুণরা জিহাদি হয়ে ওঠে। ইরাক ও সিরিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে তাদের জনপ্রিয়তা।
এ কারণে বিশেষজ্ঞদের একটা অংশের মত, আইএসের উত্থানের পেছনে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে যুক্তরাষ্ট্রের হাত রয়েছে। কয়েক বছর আগে নিষ্ক্রিয় হওয়ার আগে বিশ্বকে ভয়াবহ কিছু তাণ্ডবলীলা দেখতে বাধ্য করে আইএস।
সূত্র : এএফপি, আল জাজিরা