প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৩ ১১:২৭ এএম
আপডেট : ২২ মার্চ ২০২৩ ১২:২৭ পিএম
মিয়ানমারের প্রায় ১৫ লাখ শরণার্থী থাইল্যান্ডে বাস করে এবং তারা নিজ দেশে অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে। ছবি : সংগৃহীত
আগামী নির্বাচনে থাইল্যান্ড কেবল তার নিজ ভূখণ্ডে আধাসামরিক শাসনের অবসান চাইছে এমন নয়, এটি বরং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে বসবাসকারী ১৫ লাখেরও বেশি মিয়ানমার শরণার্থী ও অভিবাসীদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
আশা করা হচ্ছে, আসন্ন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা নতুন সরকার মিয়ানমারের সামরিক শাসনের প্রতি ব্যাঙ্ককের এতদিনের সমর্থনের অবসান ঘটিয়ে দেশটিতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে।
২০১৪ সালে একটি সামরিক অভ্যুত্থানের দ্বারা কেঁপে উঠেছিল থাইল্যান্ড, যখন জেনারেল প্রয়ুথ চান-ও-চা ইংলাক সিনাওয়াত্রার নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করেন এবং পাঁচ বছর পর নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের মাধ্যমে নিজ শাসন মজবুত করেন।
আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দেশটি নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়ুথের সমর্থন কমে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে তার কট্টর মিত্র সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের অবস্থানও অনেকটাই নড়েবড়ে হয়ে পড়ছে। জেনারেল মিন অং হ্লাইংও একই কায়দায় ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন মিয়ানমারের নির্বাচিত সরকারের পতন ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিলেন।
থাইল্যান্ডের নির্বাচনকে ঘিরে আশার আলো দেখছেন মিয়ানমারের তরুণ গবেষক মা খাইন থেট (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের বিরোধীরা যদি সরকার গঠন করে, তবে তারা সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সমর্থন করবে। তবে আমি উদ্বিগ্ন যে, মিন অং হ্লাইংকে সমর্থনকারী চীন নতুন থাই প্রশাসনকে চাপে রাখতে চাইবে।’
সাবেক সহকর্মীকে গত বছর সামরিক বাহিনী কারাগারে নিক্ষেপ করে। এরপর মা থেট ব্যাঙ্ককে পালিয়ে যান। মিয়ানমারের অন্য অনেক আইনজীবী, ছাত্র, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদের মতো তিনিও দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে উদ্বিগ্ন, যেখানে তিনি নির্যাতনের সম্মুখীন হতে পারেন।
মা থেট বলেন, ‘থাই সামরিক সরকার ও মিয়ানমার জান্তার মধ্যে একটি ‘বড় ভাই-ছোট ভাই’ সম্পর্ক রয়েছে। থাইল্যান্ড সেই কয়েকটি দেশের মধ্যে রয়েছে- যারা বার্মিজ জান্তার সঙ্গে একটি শক্তিশালী কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং আন্দামান সাগরে গ্যাস অপারেশনের মতো যথেষ্ট যৌথ অর্থনৈতিক স্বার্থ রয়েছে। তাদের এ ধরনের আগ্রহ আমাদের বিপ্লবকে দুর্বল করতে প্ররোচিত করে।’
চুলালংকর্ন ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক ও থাই-মিয়ানমার সম্পর্কের বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞ থিতিনান পংসুধিরাকের মতে, ‘নির্বাচনটি থাইল্যান্ডের মিয়ানমারবিষয়ক নীতি পুনরায় সাজানো এবং পথ পরিবর্তন করার সুযোগ দিচ্ছে।’
পংসুধিরাক ব্যাঙ্ককে এক সাক্ষাৎকারে আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘থাইল্যান্ডের মিয়ানমারের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের দেশের আন্তর্জাতিক অবস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। দুই দেশের একটি দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে এবং আমরা মিয়ানমারের প্রতি সমর্থন দেখতে চাই না।’
সামরিক প্রভাব
গত সোমবার থাই সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। দেশটির সংবিধান অনুযায়ী সংসদ বিলুপ্তির ৪৫-৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। অধিকার গোষ্ঠী ও ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট দ্বারা থাইল্যান্ডকে একটি ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র হিসেবে স্থান দেওয়া হয়েছে। ১৯৩১ সাল থেকে দেশটি ১২টি সামরিক অভ্যুত্থান প্রত্যক্ষ করেছে। যে কারণে সংসদীয় ব্যবস্থা থাই সামরিক বাহিনীর প্রতি প্রবলভাবে ঝুঁকছে, যার উচ্চকক্ষের সদস্যদের নিয়োগের বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে।
যদিও বিরোধী ফেউ থাই ও মুভ ফরোয়ার্ড দলগুলোর ভোটে যথেষ্ট সমর্থন রয়েছে বলে মনে হচ্ছে, ফল শুধু নিম্নকক্ষের নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা দ্বারা নির্ধারিত হবে না। সামরিক নিযুক্ত ২৫০ সিনেটরের ভোটের ফলও গণনা করা হয়। সংসদীয় পাটিগণিতে সামরিক প্রভাব থাকা সত্ত্বেও, বিরোধীদের জেতার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফেউ থাইয়ের নেত্রী পায়েংটার্ন সিনাওয়াত্রা সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার মেয়ে এবং ইংলাকের ভাগনি। সাম্প্রতিক জনমত জরিপে ভোটারদের শীর্ষ পছন্দের প্রার্থী হিসেবে তাকে দেখা গেছে।
সূত্র : আল জাজিরা