প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৩ ১১:১৭ এএম
আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২৩ ১১:২৫ এএম
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। ছবি : সংগৃহীত
রাহুল গান্ধী ভারতের এমন একজন বিরোধীদলীয় নেতা যিনি কখনও কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেননি। কখনও কংগ্রেস দলকে বিজয়ের দ্বার অভিমুখে নিয়ে যাননি। উল্টো তিনি দলের ব্যর্থতার সময় দলীয় প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন।
তারপরও তাকে কেন্দ্রে রেখে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার তাকে মানহানির ফৌজদারি মামলায় দুই বছরের কারাদণ্ডও দেওয়া হয়েছে। পরে শুক্রবার আইনসভা থেকে তার পদ খারিজ হয়ে যায়।
আর এক বছর পরই ভারতের সাধারণ নির্বাচন। তার আগেই ঘটল এ ঘটনা। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ঘটনাটির কারণে রাহুল জনগণের সহানুভূতি পেতে পারেন, যে কারণে তার উত্থান ঘটতে পারে। অথবা ঘটনাটি তার পতনেরও কারণ হতে পারে।
রাহুল গান্ধী এ ঘটনার মাত্র মাস দুয়েক আগে দেশজুড়ে চার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ভারত জোড়ো যাত্রা সম্পন্ন করেন। তার উদ্দেশ্য ছিল নিজের ভাবমূর্তি ঠিক করা এবং দলকে পুনর্জাগরিত করা।
কংগ্রেস এখনও ভারতের বৃহত্তম জাতীয় রাজনৈতিক দল। ১৪০ কোটি জনসংখ্যার দেশটির ক্ষমতা দীর্ঘ সময় তাদের হাতেই ছিল। তাদের বিজেপি পরাস্ত করে ২০১৪ সালে। কংগ্রেসের ভেতরের নেতৃস্থানীয় স্থানগুলো এখনও ধরে রেখেছে গান্ধী পরিবার। দলে রাহুল গান্ধীর মা সোনিয়া গান্ধী এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মোদি ও তার দল এসব বিষয় নিয়ে সমালোচনাও করেছে বহুবার। তাদের মতে, গণতন্ত্রে রাজবংশীয় ঘরানার রাজনীতির কোনো জায়গা নেই। মোদি বহুবার নিজ বক্তব্যে রাহুলকে ‘রাজপুত্র’ হিসেবেও অভিহিত করেছেন।
একনজরে রাহুল গান্ধী
রাহুল গান্ধী প্রথম লোকসভায় নির্বাচিত হন ২০০৪ সালে, পারিবারিক ঘাঁটি উত্তর প্রদেশের আমেথি থেকে। ২০০৯ ও ২০১৪ সালে ফের বিজয়ী হন তিনি। কিন্তু ওই আসন হারান ২০১৯ সালে।
কেরালাতেও তিনি একটি আসনে দাঁড়িয়েছিলেন। সেটিতে জয়লাভ করে ফিরে আসেন আইনসভায়। তবে তিনি আইনসভায় নিয়মিত ছিলেন না। রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, আইনসভায় তার উপস্থিতি সাধারণ গড়ের অনেক কম। দেশের বাইরেও থাকেন প্রচুর। তার এই অনুপস্থিতি গণমাধ্যমের মনোযোগ কেড়ে নিয়েছে একাধিকবার। বহুবার বিজেপি তাকে ‘অমনোযোগী’ রাজনীতিবিদের তকমাও দিয়েছে।
শেষ কিছু সময় ধরে বিজেপির ব্যাপক সমালোচনার মুখে ছিলেন রাহুল। গত মাসে তিনি যুক্তরাজ্যে এক বক্তব্যে বলেন, মোদির শাসনে গণতন্ত্র বিপদের মুখে রয়েছে। এ নিয়ে বিজেপি ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে ক্ষমা চাইতে বলেছিল।
নিউ দিল্লির সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের গবেষক নিলাঞ্জন সরকারের মতে, লোকসভা পদ থেকে অযোগ্য ঘোষিত হওয়ার ঘটনা হয় রাহুলকে ‘গড়ে দেবে, নয় তার পতন ঘটাবে’।
সব ভারতীয়র প্রতিনিধিত্ব করে না- এমন একটি সরকার দ্বারা রাহুল লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন, তা কি তিনি (রাহুল) প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন? না কি নিজেকে এমন একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে প্রমাণ করবেন, যিনি আদতে সক্ষম নন এবং বিজেপি তাকে খেলায় হারিয়ে দিয়েছে। প্রশ্ন রেখেছেন নিলাঞ্জন সরকার।
গোটা বিষয়টিই নির্ভর করবে রাহুল কীভাবে এ পরিস্থিতি সামাল দেবেন, সেটির ওপর।
সূত্র : রয়টার্স