প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৩ ১৩:৩৩ পিএম
আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৩ ১৪:৫৩ পিএম
যুদ্ধ ইয়েমেনের প্রতিটি অংশকে ছুঁয়েছে। ছবি : সংগৃহীত
সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সম্প্রীতি ফেরাতে গত মাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে চীন। এর জেরে বিশ্ব দেখেছে দুই দেশকে চুক্তিতে আবদ্ধ হতে। ওই চুক্তির মধ্য দিয়ে তিক্ততা ভুলে কূটনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়েছে সৌদি ও ইরান। আশা করা হচ্ছিল, খুব দ্রুত ইয়েমেন যুদ্ধেরও অবসান ঘটবে।
সে আশাও একেবারে হতাশায় পর্যবসিত হয়নি। দীর্ঘ আট বছরের সংঘাতের পর শান্তি আলোচনা শুরু হতে দেখা গেছে সেখানে। সৌদি নেতৃত্বাধীন ৯ আঞ্চলিক দেশের জোট এবং ইরানসমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের সংঘাতের জেরে দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে তীব্রতর মানবিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
এরই মধ্যে শত শত বন্দিবিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। স্থায়ীভাবে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনাময় আলোচনা হতে দেখা গেছে। ইয়েমেনে সৌদির নেতৃত্বে যে নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছিল, সেগুলোও তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে এখনও পূর্ণ শান্তি আসতে সময় লাগবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইয়েমেন কবে নাগাদ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, তা নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। গত বছরের জুলাইয়ে দেশটিতে সফরে যান বিশেষজ্ঞ লিনা অ্যাডেল। সেখানে লড়াইরত বাহিনীকে ৪০টিরও বেশি চেকপয়েন্ট পার হতে হয়। দক্ষিণের অ্যাডেন শহর থেকে রাজধানী সানার যাত্রা ছিল ১২ ঘণ্টার।
প্রতি চেকপয়েন্টে কারা টহলে আছে, সে সম্পর্কে লিনা অ্যাডেলকে তার চালক অবহিত করছিলেন। একপর্যায়ে গিয়ে অ্যাডেল লক্ষ করেন, প্রতি চেকপয়েন্টের নেপথ্যের কাহিনি ও বাহিনী ভিন্ন।
যুদ্ধ ইয়েমেনের প্রতিটি অংশকে ছুঁয়েছে। আক্ষরিক অর্থেই মানবিক সংকট দেখেছে দেশটি। ইয়েমেনিরাও হারিয়েছে অর্থবহ সম্ভাবনার সুযোগ। নানাবিধ স্বার্থ ও প্রতিযোগিতার দৌড়ে টুকরো হয়ে গিয়েছে দেশটি।
দেশের ভেতরে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে একাধিক সশস্ত্র দল। ২০১৪ সালে হুথি বিদ্রোহীরা ইয়েমেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেয় এবং সানার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। এর কয়েক মাস পর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ফ্রান্সসমর্থিত সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট দেশটির সরকারকে ক্ষমতায় ফেরাতে সামরিক অভিযান শুরু করে।
ওই সময়ের পর থেকেই উত্তর ইয়েমেনে নিজেদের খুঁটি শক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে আসছিল হুথিরা। অনেক সময় সৌদি আরবকে লক্ষ্য করেও আক্রমণ করেছে তারা। তবে সেগুলো এখন অতীতের কথা।
ইয়েমেনে বর্তমানে যে শান্তি আলোচনা চলছে, তা সৌদি আরবের জন্য বৈদেশিক নীতি সংস্কারের অংশ। প্রায় এক দশকের ভুল এবং বিদেশে চালানো বিধ্বংসী অভিযান থেকে সরে আসতে চাইছে দেশটি।
১৯৩২ সালে গোড়া পত্তনের পর থেকেই সৌদি আরবের কূটনীতি ও সুরক্ষা নীতি সব সময়ই সতর্কতামূলক অবস্থান থেকে নেওয়া হয়েছে। সব সময়ই তারা চেয়েছে আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্যের স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে।
ফলে রিয়াদকে কখনও অঞ্চলে অতিরিক্ত আধিপত্য বিস্তার করতে দেখা যায়নি। উল্টো যারা ওই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করেছে, তাদের বিপরীতে দেখা গেছে দেশটিকে। এ ছাড়াও সরাসরি দ্বন্দ্বে জড়ানো থেকে বিরত থেকেছে সৌদি আরব। এর বদলে তেল বাণিজ্যের মাধ্যমে আহরিত অর্থ এবং কূটনৈতিক প্রভাব ও জোট ব্যবহার করে প্রতিদ্বন্দ্বীদের পরাস্ত করার চেষ্টা করেছে তারা।
সৌদি আরবের প্রথম ছয় বাদশাহ এ পন্থা মেনে চলেছেন। কিন্তু বাদশাহ সালমান এবং তার উত্তরাধিকারী ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের আমলে এসে এই পন্থার পরিবর্তন চোখে পড়তে শুরু করে। শুরুতেই দেখা যায় নতুন আগ্রাসী বৈদেশিক নীতি। ধীরে ধীরে নানা ঘটনাও ঘটে। যেমন কাতারে অবরোধ আরোপ, লেবাননের প্রধানমন্ত্রীকে অপহরণ, সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যা, ইরানের সঙ্গে দ্বন্দ্ব আরও তীব্রতর হওয়া।
তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বড়টি হয়তো ছিল ২০১৫ সালে ইয়েমেনে অভিযান। ধারণা করা হয়েছিল, গোটা অভিযান হবে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য। কিন্তু পরে তা আর হয়নি। সেটি গড়ায় দীর্ঘ সময়ে।
আট বছরের বোমা, ক্ষেপণাস্ত্র, ধ্বংসলীলা এবং হাজারো প্রাণহানিতে মূল ক্ষতিটা হয়েছে ইয়েমেনি জনসাধারণের। হুথি বিদ্রোহী এবং সৌদি কর্মকর্তারা এখন বলছেন, রাজনৈতিক সমাধান সন্নিকটে। কিন্তু সেটিতে আদৌ অতি প্রয়োজনীয় মানবিক উপাদানগুলো থাকবে কি না, তা এখনও অনেকটাই অস্পষ্ট। শুধু সেটি হলেই প্রকৃত শান্তি চোখে পড়বে অঞ্চলটিতে।
সূত্র : এশিয়া টাইমস
(বিশ্লেষণটি লিখেছেন কার্টিন ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগেরই পিএইচডিরত লিনা অ্যাডেল এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক বেন রিচ।)